August 2, 2025

পরিকাঠামো সংকটে আইজিএম,ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা!!

 পরিকাঠামো সংকটে আইজিএম,ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের
দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী রেফারেল হাসপাতাল চিকিৎসা পরিকাঠামোর সংকটে ধুঁকছে। রাজধানীর আইজিএম হাসপাতালে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময় তাক লাগানো বিশাল বিশাল আকাশচুম্বী হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা সম্প্রসারণ করে সব রোগ বিভাগে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা চালু করতে পারেনি। তবে জিবি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় ২০০৬ সালে আইজিএমকে স্টেট সিভিল রেফারেল হাসপাতাল গড়তে নতুন কয়েকটি রোগ বিভাগ চালু করা হয়েছিল। অস্থি (অর্থোপেডিক), শল্য (সার্জারি), মেডিসিন, ইত্যাদি রোগ বিভাগ ২০০৬ সালে চালু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। তাতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের এই প্রাচীন হাসপাতালে অস্থি, শল্য ও মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা পেয়ে রোগীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। বিস্ময় ও তাজ্জব ব্যাপার হলো, দু’তিন বছর যেতে না যেতেই বামফ্রন্ট সরকার নতুন চালু করা অস্থি ও শল্য বিভাগ গুটিয়ে নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে অস্থি ও শল্য বিভাগ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরিয়ে নিতে শুরু করে। চিকিৎসক উঠিয়ে নিয়ে হাসপাতালে নাম কাওয়াস্তে অস্থি ও শল্যর অন্ত.ইনডোর) ও বর্হি (আউটডোর) চালু রাখে। পৃথক ভাবে চালু রাখা অস্থির ইনডোর ওয়ার্ড ও শল্যর ইনডোর ওয়ার্ড বন্ধ করে দিয়ে দু’টি মিলে কম্বাইন্ড ওয়ার্ড চালু করে দেয়। হাসপাতালের অস্থি ও শল্য চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা সংকুচিত করে প্রায় উঠিয়ে নেওয়ায় রোগীর চরম দুর্ভোগ শুরু হয়। রোগী, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন মহল থেকে স্টেট সিভিল রেফারেল হাসপাতালে থেকে অস্থি ও শল্য বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা এই ভাবে সংকুচিত করে দেওয়ায় প্রতিবাদ উঠেছিল। দুটি বিভাগে সাইনবোর্ডসর্বস্ব নামকাওয়াস্তে চিকিৎসা ব্যবস্থা ২০০৯-১০ সাল থেকে বামফ্রন্ট সরকার ও তার স্বাস্থ্য দপ্তর চালু রাখে। ফলে সেই সময় থেকেই রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী হাসপাতাল আইজিএমে অস্থি ও শল্য রোগের রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পরিকাঠামোর অভাবে জিবি হাসপাতালেই ছুটে যাচ্ছেন। আইজিএমে মেডিসিন বিভাগের আইসিইউ’র শয্যা রয়েছে মাত্র ১০ টি। গত ৭ বছরে ১ টি শয্যাও বাড়েনি আইসিইউর। আর তাতেই জিবি হাসপাতালে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার এটাও একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রোগীর ভিড়ে জিবি হাসপাতালে গিয়ে রোগীরা শয্যা পাচ্ছেন না। ফ্লোরে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে ঠাণ্ডা ফ্লোরে, যা খুবই অমানবিক হয়ে ঠেকেছে। আরও বিস্ময় ও পরিতাপের ব্যাপার হলো, বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার পর ২০১৮ সালে বিজেপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। তাজ্জব বিষয়, গত ৭ বছরেও বিজেপি সরকার আইজিএম হাসপাতালে পুনরায় পূর্ণাঙ্গভাবে অস্থি রোগ ও শল্য রোগ বিভাগ চালু করতে পারেনি। বিজেপি সরকার রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো উন্নয়নে এবং উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালুর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ও উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রচার করে চললেও আইজিএমে তা অনুপস্থিত। বামফ্রন্ট সরকার ২০০৬ সালে আইজিএমে অস্থি ও শল্য রোগ বিভাগ পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করেও আচমকা ২০০৯-১০ সালে প্রায় গুটিয়ে নিয়ে সাইনবোর্ড সর্বস্ব করে রাখলেও বিজেপি সরকার গত ৭ বছরেও সেদিকে ফিরে তাকায়নি বলে অভিযোগ। আইজিএম হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবাকে এই ভাবে পঙ্গু করে রাখায় জিবি হাসপাতালে কেবল রোগীর ভিড় বাড়লেও যেন উদ্বিগ্ন নয় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। রোগীর চাপে গত ৮ মাস আগে জিবি হাসপাতালে শয্যা বৃদ্ধি করা হলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। সফলতা আসছে না। রাজ্যের কোন মহকুমা ও জেলা হাসপাতাল নয়, রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর বহু প্রাচীন স্টেট সিভিল হাসপাতাল আইজিএমের চিকিৎসা পরিকাঠামোর যদি এই রেহাল দশা হয় তা হলে রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোর কী হাল, তা নিয়ে রোগী, চিকিৎসক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে রোগীর ভিড় কেবল বাড়ছে জিবিতে।আইজিএমে অস্থি ও শল্য রোগ বিভাগের জন্য রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কোন পৃথক পৃথক ওয়ার্ড নেই। ৩২ শয্যার একাট কম্বাইন্ড ওয়ার্ডে অস্থি ও শল্য রোগী ভর্তি রাখা রাখা হচ্ছে। পুরুষ ও মহিলা রোগী একই ওয়ার্ডে রেখে ওয়ার্ডের মাঝে পার্টিশন দিয়ে রাখা হয়েছে। এই একই ওয়ার্ডেই আবার ইএনটি রোগী ভর্তি রাখা হয়েছে। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তর সরকারী রেফারেল হাসপাতালের বেহাল চিকিৎসা পরিকাঠামো ও অব্যবস্থাপনার এখানেই শেষ নয়, অস্থি, শল্য এবং ইএনটি রোগীকে অপারেশন করার পর ১০ শয্যার কম্বাইন্ড পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডেই রাখা হচ্ছে। অস্থি বিভাগের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন। আর শল্য রোগ বিভাগের রয়েছেন মাত্র তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। হাসপাতালে এই চিকিৎসক সংকটের মধ্যে কী করে ইনডোর, আউটডোর চালু রাখা হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। অস্থি ও শল্য চিকিৎসা পরিকাঠামো ও চিকিৎসক সংকটে আইজিএমে রোগী এলে সিংহভাগ রোগীকে জিবিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অস্থি ও শল্যের সাধারণ রোগ নিয়ে এলে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হচ্ছে বলে রোগী ও রোগীর আত্মীয়ের অভিযোগ। এদিকে আইজিএমে নেই হার্টের রোগীর জন্য কার্ডিওলজি বিভাগও। হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগ থাকলেও কার্ডিওলজি বিভাগ নেই কেন রোগীর প্রশ্ন তা নিয়েও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *