পদ্মাপাড়ে অন্য খেলা!

 পদ্মাপাড়ে অন্য খেলা!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত বছরের ৫ আগষ্ট বাংলাদেশে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে একপ্রকার জোর করে উৎখাত করার পর থেকে পদ্মাপাড়ের দেশটিতে গত দশ মাস ধরে অস্থিরতা চলছে। সেই অস্থিরতা এখন আবার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ। এই অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের আচমকা পদত্যাগ করার ভাবনা। ইউনুসের এই ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি আচমকা ভিন্ন খাতে মোড় নেয়। এককথায় বলা যায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। খবরে প্রকাশ, ইউনুসের শুভানুধ্যায়ী এবং অনুগতরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই যমুনাতে (ইউনুসের বাসভবন) দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছেন। ইউনুসকে বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি যেন পদত্যাগের ভাবনা থেকে পিছিয়ে আসেন। খবরে আরও প্রকাশ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যমুনায় রাতভর নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। রাত পেরিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেও নানা ঘটনার ঘনঘটা অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি এমন যে, যেকোনও সময়ই পদ্মাপাড়ের দেশে নানা কিছু ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে দিল্লী থেকে শুরু করে অনেকেরই তীক্ষ্ম নজর এখন ঢাকার উপরে।
এমনিতেই বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের গত দশ মাসের কার্যকালে একাধিক কারণে ক্ষিপ্ত বাংলাদেশের জনগণ। সেই তালিকায় বহু আগেই নাম জুড়েছিল পদ্মাপাড়ের দেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের। ইউনুসের একাধিক সিদ্ধান্ত এবং বক্তব্যে যে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ সেনাপ্রধান, তা তাঁর নানান বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ইউনুসের নানান সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট সেনাপ্রধান জামান সম্প্রতি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। শুধু তাই নয়, ভাত দুই দিন আগে সেনাপ্রধান নিজে যমুনাতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেছেন। এরপর থেকেই পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে মোড় নিতে থাকে। এই বৈঠকের পরই মহম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের ভাবনার কথা সামনে আসে।


খবরে আরও প্রকাশ, বাংলাদেশে হাসিনা সরকার পতনের পর এবং ইউনুসের শাসন শুরু হতেই বিভিন্ন পরাশক্তির আধিপত্য বেড়েছে বাংলাদেশের উপর। এমনকী চিনের অংশগ্রহণও বাড়ছে বলে খবর। যা একেবারেই পছন্দ করছেন না বাংলাদেশ সেনাপ্রধান। শুধু তাই নয়, যে সব অভিযোগ এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের নামে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল, গত দশ মাসে তিনি এবং তাঁর উপদেষ্টারা কিছুই করতে পারেননি। বরং বাংলাদেশের অবস্থা, বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপের দিকে চলে গেছে। কোনওকিছুই সংস্কার করতে পারেননি। উল্টো এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, সংখ্যালঘু জনগণের উপর অমানসিক নির্যাতন, ব্যাপক হত্যালীলা, ধর্ষণ, রাহাজানি, লুঠ একপ্রকার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সব মিলিয়ে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে চরম অরাজকতা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনীতি, এমনকী বাংলাদেশের জনগণের জীবনজীবিকার উপরেও বড় ধরনের আঘাত নেমে এসেছে। দেশে একদিকে পরাশক্তির বাড়-বাড়ন্ত, অন্যদিকে রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা যখন তুঙ্গে, তখনই আচমকা জরুরি বৈঠক ডাকেন সেনাপ্রধান জামান। খবরে প্রকাশ, সেনাপ্রধান চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন ঘোষণা করুক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বলা যায় একেবারে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বিএনপি সহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলিরও চাপ দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে ইউনুসের উপর। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, নানা অজুহাতে নির্বাচন এড়িয়ে যাওয়ার একটা চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছিল একটাই কারণে। যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন করানো। কিন্তু তা না করে বে-আইনিভাবে ক্ষমতা ভোগ করাই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ইউনুস বাহিনীর কাছে। বিষয়টি স্পষ্ট হতেই ময়দানে নামেন সেনাপ্রধান জামান। এরপরই পরিস্থিতি দ্রুত অন্যদিকে মোড় নেয়। পদ্মাপাড়ে অন্য খেলা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠে। তবে কি দিন ফুরোল ইউনুসের? এর উত্তর সময়েই জানা যারে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.