পট পরিবর্তন!!

 পট পরিবর্তন!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

স্বল্প সময়ের মধ্যেও রাজনীতিতে কীভাবে পট পরিবর্তন হয়ে যায়, স্বএই এই মুহূর্তে মোদি সরকার এর প্রাণবন্ত দৃষ্টান্ত। ঠিক এক বছর আগে এই সময়টা ছিল বিজেপির কাছে ঘোর দুশ্চিন্তার। কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ। লোকসভা নির্বাচনের জনাদেশ আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছিল। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার অবকাশ তৈরি হচ্ছিল। কারণ লোকসভায় চারশো পারের লক্ষ্য নিয়ে প্রচারে নেমে ২৪০ আসনে আটকে যেতে হয়েছিল। দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জেতার স্বপ্ন থেকে এমন দুই শরিকে-নির্ভর হয়ে পড়তে হল, যে দুটি দলের আদর্শের ত্রিসীমানায় হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন নেই। লোকসভার ফল দেখে তখন এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছিল, তবে কি নরেন্দ্র মোদির সম্মোহক শক্তি নিঃশেষের পথে? এমনকী, এই নিয়ে আরএসএস নেতৃত্ব পর্যন্ত বিজেপিকে খোঁচা দিচ্ছিলেন। আর দলের মধ্যেই সুব্রম্মনিয়াম স্বামীর মতো সুযোগসন্ধানীরা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, ২০২৫-এর বিশ্বকর্মা পুজোয় মোদির বয়স পঁচাত্তর পূর্ণ হলে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে তিনিও তার রাজনৈতিক গুরু লালকৃষ্ণ আদবানির মতো মার্গদর্শক মণ্ডলীতে চলে যাবেন। এহ বাহ্য, দলের অন্দরেই মোদির যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে যোগী আদিত্যনাথের সম্ভাবনা নিয়ে একটা গুঞ্জন তৈরি করা হচ্ছিল।
২০২৪-এর মে থেকে ২০২৫-এর মে। এক বছরে সব জল্পনা বাতাসে মিলিয়ে গেছে।এমন পট পরিবর্তনেরও নায়কও নরেন্দ্র মোদি।ঘটনাক্রম সাক্ষী, শরিক নির্ভর হয়ে পড়লেও তার আত্মবিশ্বাস ছিল আগের মতোই দর্পিত।লোকসভা নির্বাচনের আগে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির একটা সূক্ষ্ম দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। যার খেসারত সবচেয়ে বেশি দিতে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। হারাতে হয়েছিল ২৯টি আসন। বাষট্টি থেকে দলের আসন সংখ্যা নেমে আসে বত্রিশে। এমন এক সন্ধিক্ষণে দুই শরিকের কাঁধে ভর দিয়ে তৃতীয় পর্বে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন, যখন অদূরে কড়া নাড়ছে হরিয়ানার বিধানসভনির্বাচন। সেটি ছিল গোটা দলের সামনে চ্যালেঞ্জ। চব্বিশে বিজেপি ২৪০-এ থেমে গেলেও গো-বলয়ের গরিষ্ঠ ভোট পদ্মের ঝুলিতেই পড়েছিল।মুখ ফিরিয়েছিল মাত্র দুটি রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা।
দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও মোট দশটি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ছিনিয়ে নেয় পাঁচটি লোকসভা আসন। সেই হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোদি সর্বাগ্রে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করে ফেলেন। হাতে গরম ফল মেলে। যাবতীয় বুথ-ফেরত সমীক্ষা উল্টে দিয়ে টানা তৃতীয় বার হরিয়ানায় জয়ী হয় বিজেপি। ঝিমুনি ঝেরে ফেলে চকিতে উজ্জীবিত হয় গেরুয়া শিবির। এক মাস পরেই আসে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মহারাষ্ট্রের বিধানসভার ভোট। এই প্রথম একক বৃহত্তম দল হিসাবে সেখানে আত্মপ্রকাশ করে রাজ্যপাটে চালকের আসনে বসে বিজেপি। মহারাষ্ট্রের পরে আড়াই মাসের মধ্যে দিল্লী বিধানসভা নির্বাচন। সেখানেও মোট সত্তরটির মধ্যে আটচল্লিশ আসন পেয়ে সাতাশ বছর পর রাজধানীর রাজ্যপাট ফিরে পায় বিজেপি। উপর্যুপর তিন রাজ্য জয়ের পরেই বিরোধী শিবির কার্যত ব্যাকফুটে চলে যায়। এতটাই ব্যাকফুটে যে, সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিরোধীদের যে তথাকথিত ইন্ডিয়া জোট, সেই জোটের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়। নরেন্দ্র মোদি ফিরে পান আগের আত্মবিশ্বাস। এক দেশ, এক ভোট-এর বিল সংসদে নিয়ে এসে তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, নিজের লক্ষ্যে তিনি অবিচল। সবশেষে ‘অপারেশন সিঁদুর’। প্রধানমন্ত্রীর ফৌজি উর্দি পরিহিত ছবি সহ হোর্ডিং নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে বিজেপি। সেই ছবি দেখে মনে হচ্ছে, যেন সেনা নয়, মোদি নিজেই যুদ্ধবিমান নিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বিজয়ীর মতো ফিরে আসছেন। সব মিলিয়ে আবার স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত নরেন্দ্র মোদি। রাজনীতিতে মাত্র এক বছরে এতখানি পট পরিবর্তন মোটেই সহজ বিষয় নয়। ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে প্রচারের হাতিয়ার করে আগামী ৯ জুন তৃতীয় মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি ধুমধাম করে উদ্যাপন করতে চলেছে বিজেপি।
এমন অর্জনের পরেও পরিশেষে দুটি জরুরি প্রশ্ন পড়ে থাকে। এক, ভারতের শৌর্যকে যদি কেউ নিজের পণ্যের বিপণনের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান, তা সে রাজনীতি হোক বা চলচ্চিত্র; কতটা সঙ্গত? দুই, অপারেশন সিঁদুর- এর গৌরবের মালিকানা কার, সে প্রশ্নের এক এবং অভিন্ন উত্তর, ভারত রাষ্ট্রের। কিন্তু সেই গৌরবকে যদি কেউ নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চান, এমনকী, রাষ্ট্রনায়করাও যদি সেই কাজে ব্রতী হন, কতটা সঙ্গত?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.