August 2, 2025

পঁচাত্তরে অবসর

 পঁচাত্তরে অবসর

পাঁচাওরে অবসর! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পঁচাত্তরে ৭৫-এর লক্ষ্মণরেখা পার করছেন। তাহলে তিনি কী প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অবসরে যাচ্ছেন? গত ছয় মাস, এক বৎসর ধরে সময়ে সময়ে এই ধরনের আলোচনা সামনে এসেছে আবার হারিয়েও গেছে। বস্তুত ৭৫ বৎসরের লক্ষ্মণরেখার কথাটি এসেছে আরএসএসের সদর দপ্তর থেকে। সর্বশেষ গত বুধবার সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত কথাটি ফের বলেছেন। নাগপুরের একটি অনুষ্ঠানে তার এই বক্তব্য শোনা যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই ধরনের একটি উক্তির পিঠোপিঠি সময়ে। অমিত শাহের বয়স ৭৫ থেকে অনেক দূরে, ষাট পেরিয়ে মাত্র। সেই অর্থে আরও পনের বছর তিনি সক্রিয় রাজনীতি করবেন। তা সত্ত্বেও গত বুধবার আমেদাবাদের একটি অনুষ্ঠানে আচমকা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে বলেছেন, অবসর জীবন বেদ এবং উপনিষদ পাঠের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কাটাতে চান।
বস্তুত তার এই বক্তব্যের পরই ফের জল্পনা শুরু হয় পদত্যাগ বা অবসরের। জল্পনার গরু গাছে চড়তে চড়তে শুনিয়ে যায়, মোদি অবসরে গেলে শাহও পদত্যাগ করবেন। হয়তো মোদিহীন রাজনীতিতে শাহ আর তেমন গুরুত্ব পাবেন না ধরে নিয়েই এই ধরনের পরিকল্পনা নিচ্ছেন। আর কাকতালীয় কিনা জানা নেই, তবে বুধবারেই নাগপুরে অবসর নিয়ে ৭৫ বছর বয়সের কথা পুনরুচ্চারিত হয় মোহন ভাগবতের বক্তব্যে। সেদিন আরএসএসের প্রাক্তন প্রচারক মোরোপন্ত পিঙ্গলের জীবনীমূলক একটি বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠান চলছিল নাগপুরে। মোরোপন্তের জীবন এবং কর্মজীবন নিয়ে আলোচনায় ভাগবত মোরোপন্তের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘কর্মজীবন সম্পর্কে মোরোপন্তই বলেছেন, ৭৫ বৎসর বয়স হলে কেউ যদি আপনার গলায় শাল জড়িয়ে সংবর্ধনা জানান, তাহলে আপনার বুঝা উচিত কোনও বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বার্তা এটাই, আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এবার সরে দাঁড়ান। কনিষ্ঠদের কাজ করতে দিন।’ ভাগবত বক্তার উদ্ধৃতির পরিসমাপ্তিতে বলেছেন, বয়স হলে সবার উচিত সম্মানের সঙ্গে সরে যাওয়া।
অন্যদিকে, মোরোপন্তের জীবন ও বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত শোনার পর গুঞ্জন আলোচনা নতুন যাত্রা পায়। নতুন প্রশাখায় গুঞ্জন চলে, তাহলে মোহন ভাগবতও কী অবসরে যাওয়ার কথা ভাবছেন? অবশ্য এই ধরনের গুঞ্জন তা আলোচনার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। মোদির মতোই ভাগবতও এ বছর ৭৫-এ রয়েছেন।১৯৫০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মোহন ভাগবত জন্মেছিলেন।হিসাব অনুযায়ী এর ছয়দিন পর জন্মেছেন নরেন্দ্র মোদি।
তাহলে? দু’জনই কী একসঙ্গে অবসরে গিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব দিতে চাইছেন? সেজন্যই কী অমিত শাহ জীবনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা শুনিয়ে গেলেন আচমকা? এই প্রশ্নগুলির জবাব মেলা ভার এই সময়ে। তবে ৭৫ বছর বয়সে বিজেপি বা সরকারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির বিষয়টি মোদির ক্ষেত্রে কতটা প্রযোজ্য হবে তা নিয়ে খটকা রয়েছে। তবে আরএসএসে এ ধরনের কোনও নিয়ম কোনওকালে ছিল না। সংঘচালক যতক্ষণ শারীরিকভাবে সক্ষম থেকেছেন ততদিন দায়িত্বে থেকে গেছেন। মোহন ভাগবতের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন হবে!
অবসরের বিতর্কে বিরোধীরাও অংশ নিয়েছেন সোৎসাহে। নাগপুরে মোহন ভাগবতের মন্তব্যের পরদিন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ৭৫-এর গন্ডি তো মোদি নিজেই এঁকেছেন। লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলি মনোহর যোশি, যশোবন্ত সিংহ, যশোবন্ত সিনহাদের অবসর নিতে বাধ্য করিয়েছিলেন। নিজের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর করা যে উচিত
সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মোহন ভাগবত। কংগ্রেসের মনু সিংভি বলেছেন, আপনি আচরি ধর্ম অন্যরে শিখাও বলে প্রবাদ আছে। নিজের বেলায় নিজের তৈরি নিয়ম প্রয়োগ না হলে সঙ্কট তৈরি হবে। তবে ৭৫ বছর বয়সে অন্যদের বেলায় যে নিয়ম মোদি কার্যকর করেছেন, তা নিজের ক্ষেত্রেও কার্যকর করবেন বলে কিন্তু মনে হয় না। শেষ পর্যন্ত মনু সিংভিদের এই আশঙ্কাই যদি সত্যি হয়, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের পরেও মোদিই প্রধানমন্ত্রী থেকে যান, তাহলে তার অন্যতম কারণ হবে বিজেপিতে মোদির একচ্ছত্র ক্ষমতা।
সংঘ পরিবার বরাবর চাইছে বিজেপিতে তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা হোক। অন্যদিকে মোদি শাহ চান নিজেদের পছন্দসই লোকজনদের নিয়ে কাজ করতে। এই টানাপোড়েনের কারণে বিজেপির নতুন সভাপতি হয়েও হয়নি। সংঘের মনোনীত ব্যক্তি মোদি শাহের অপছন্দ বলে জেপি নাড্ডাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনা বিজেপিতে মোদি-শাহের একচ্ছত্র ক্ষমতাকেই প্রমাণ করে। অবশ্য তাদের এই ক্ষমতা পাঁচ বছর আগেও ছিল। সে সময় মোহন ভাগবতই বলেছিলেন, মোদির ক্ষেত্রে ৭৫ বছর এর নিয়ম নাও খাটতে পারে। কারণ তিনি ব্যতিক্রমী। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে অমিত শাহ সহ বিজেপির নেতারা বলেছিলেন, ২০২৯ সালের নির্বাচনেও নেতৃত্ব দিন নরেন্দ্র মোদি। পঁচাত্তরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং সংঘ চালক মোহন ভাগবত দুজনেই দারুণ কর্মক্ষম। অতএব অবসরের স্বআরোপিত বাধা তাদের পথ কাটবে, এমন আশঙ্কা কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *