শক্তি সংরক্ষণে ফের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলো ত্রিপুরা!!
নোবেলের ভেনেজুয়েলা!!
নোবেল পুরস্কারের গৌরব নিয়ে অনেক আগেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল।একে পশ্চিমী আগ্রাসনবাদের এক অস্ত্র বলে নানান জন সমালোচনা করে এসেছেন প্রথম থেকেই। যে পুরস্কার হেনরি কিসিঞ্জারের মতো যুদ্ধাপরাধীদের দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর মতো কিংবদন্তি অহিংসা বিপ্লবী নেতাকে দেওয়া হয়নি, যে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন না আব্দুল কালামের মতো বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক সেই পুরস্কার পেলেন মাইক্রো ফিনান্সের মহম্মদ ইউনুস। এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন শুরু হয়েছে। হালের নোবেল কমিটি আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ ও সামরিক শক্তির হাতিয়ার হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই চলছে এই বিতর্ক। ইদানীং এই বিতর্কটি প্রাসঙ্গিক হয়ে সামনে এসেছে গত ১০ অক্টোবরের পর থেকে। সেই দিন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদল নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। তিনি আমেরিকা ও ইসরায়েলপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত।
যদিও এইবার নোবেল পুররস্কারের জন্য পাকিস্তান, ইসরায়েলের মতো ট্রাম্পের চাটুকারেরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামই প্রস্তাব করেছিলেন। আবার ট্রাম্প পুরস্কারের জন্য মনোনীত হচ্ছেন না জেনে হতাশাও দেখিয়েছিলেন। মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরপরই ট্রাম্পের সমালোচকেরা বলতে শুরু করেছিলেন, মাচাদোকে পুরস্কার মানে ট্রাম্পকেই পুরস্কৃত করা। তাদের সেই সব অভিযোগ এখন সত্য হতে চলেছে। ঘটনা হল, ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে গোপন ও প্রকাশ্য সামরিক আগ্রাসন বাড়াতে শুরু করেছে। মাচাদোর নোবেল পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিআইএকে ওই দেশটিতে গোপন অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।
অক্টোবরের শেষ দিক থেকেই ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হচ্ছে। ১৩ নভেম্বর ট্রাম্প সামরিক অভিযানের বিভিন্ন বিকল্প বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন তার সমর কুশলিদের কাছ থেকে। এরপরই আমেরিকার তরফে ভেনেজুয়েলায় সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টা জোরদার হয়। বাস্তবে অস্তিত্বহীন একটি সন্ত্রাসী দলের নাম এখন ‘কার্টেল দে লোস সোলেস’ একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এক ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করা হয়েছে। আমেরিকার দাবি ভেনেজুয়েলায় এই ধরনের একটি সন্ত্রাসী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ভেনেজুয়েলা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে একটি বিমানবাহী রণতরি পাঠানো হয়। শুরু হয় ভেনেজুয়েলার সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ধাপের অভিযান।
২০১৩ থেকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নেতৃত্বে প্রশাসন দেশটির বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আমেরিকার যে শ্যেনদৃষ্টি তা প্রতিহত করে আসছে। তারা ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক হস্তক্ষেপেরও নিন্দা করেছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং পশ্চিমের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করেছে। এই বিষয়গুলি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য নিঃসন্দেহে এক অস্বস্তির কারণ। প্রশ্ন আসে নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলার কাকে সম্মানিত করল! স্বাভাবিক ভাবনায় মনে হতেই পারে যে, ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যামূলক জায়নবাদকে সমর্থন করেন এমন এক রাজনীতিককে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আগে নরওয়ের নোবেল কমিটি নিশ্চয়ই দ্বিতীয়বার ভাববে। বিশেষ করে এই পুরস্কারের জন্য যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও যথেষ্ট তৎপরতা চালিয়েছেন!
নোবেল কমিটি নিয়ে সেই ধারণা ফের ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মাচাদো ভেনেজুয়েলার এমন এক রাজনীতিক, যিনি ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদের প্রতি অত্যন্ত অনুগত,

গণহত্যামূলক জায়নবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং লাতিন আমেরিকায় ট্রাম্পের পুনর্দখল নীতির দৃঢ় সমর্থক। এসব ‘উজ্জ্বল যোগ্যতার’ কারণেই বুঝি সুইডেন ও নরওয়ের বিশ্ব আধিপত্যের প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় অভিজাত গোষ্ঠীর প্রবীণেরা তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছেন। মাচাদোকে নোবেল কমিটির ‘শান্তি পুরস্কার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই নয়, আরও অনেক বড় প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে এই ধরনের আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সার্থকতা নিয়েও। এই পুরস্কারের পেছনে যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে পদার্থ, রসায়ন ও অর্থনীতিতে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস; চিকিৎসাবিজ্ঞানে কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট; সাহিত্যে সুইডিশ একাডেমি এবং শান্তিতে নরওয়ের নোবেল কমিটি।
গাল্ডরা নামের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম যতটা সরকারী ও গৌরবময় মনে হয়, বাস্তবে দীর্ঘদিনের বিতর্কিত ও লজ্জাজনক সিদ্ধান্তের ইতিহাস তাদের সব বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্বকে অবশ্যই নোবেল পুরস্কারের ধারণা ভেঙে ফেলতে হবে। এই পুরস্কার অনেক আগেই তার সব অর্থ ও গুরুত্ব হারিয়েছে। সাহিত্য ও শান্তি-উভয় ক্ষেত্রেই নোবেল কমিটির বহু সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অর্থহীন। নোবেল পুরস্কার আসলে একটি ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান, যা নিজেকে সর্বজনীন বলে জাহির করে পশ্চিমী বিশ্বব্যবস্থার আধিপত্য রক্ষা করে যাচ্ছে। এই ভান আর মেনে নেওয়া যায় না। ইউরোপের এই গোত্রীয় প্রদর্শনীর অবসান ঘটুক।