August 5, 2025

নৈরাজ্যের বর্ষপূতি!!

 নৈরাজ্যের বর্ষপূতি!!

গত বছর এই দিনে গণ অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়েছিল।ক্ষমতার অপব্যবহারের রাজনীতি,দূর্নীতি এবং চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি নিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হয়েছিল দেশব্যাপী ছাত্র-যুবকদের আন্দোলন। মুখে তাদের স্লোগান ছিল, ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, আমার সোনার বাংলা, বৈষম্যের ঠাঁই নাই। কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পর্যবসিত হয়। যা হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। এই গণ অভ্যুত্থান হাসিনা সরকারেরই পতন ঘটায়নি, ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন তত্বাবধায়ক সরকারেরও জন্ম দেয়। ৫ আগষ্ট একদিকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং পাশাপাশি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বর্ষপূর্তি- দুটোই মহাসমারোহে পালনের জন্য ব্যাপক আয়োজন বাংলাদেশে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ক্ষমতার অপব্যবহারের রাজনীতি দূর্নীতি আর কোটা সংস্কারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন ১ বছর আগে বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছিল, আদৌ কি অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনিক কাঠামোতে ‘জুলাই বিপ্লব’ কোনো ছায়া ফেলতে পেরেছে?
গত বছর গণ অভ্যুত্থানের পর ৮ আগষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ নেয়। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন মহম্মদ ইউনুস। জুলাই বিপ্লবের ঢেউ বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে তখন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছিল দেশবাসীকে। ঘটনা চক্রে যে দিন ইউনুস শপথ নেন, তার ঠিক তিনদিনের মাথায় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকা শহরের রাস্তায় বড়সড় যানজটের মধ্যে আটকা পড়েন। দেশের এক নম্বর ভিভিআইপি ইউনুসের সেদিন লম্বা চওড়া নিরাপত্তার কনভয় ছিল না। নিজেকে আর পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতো প্রমাণ করতে গিয়ে, প্রটোকলের তোয়াক্কা না করেই বেশ কিছু সময় ঢাকার চিরপরিচিত যানজটেই আটকে থাকেন ইউনুস।এই খবর মুহূর্তেই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, কনভয়হীন ইউনুসের গাড়ি ভিড়ের মধ্যেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে। এ যেন রাতারাতি বদলে যাওয়া অন্য এক বাংলাদেশ।এই ঘটনায় গোটা দেশে প্রশংসা কুড়োলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সবাই ভাবতে শুরু করলেন জুলাই বিপ্লব সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে পরিবর্তন এনেছে। কিছু জনতার সেই মোহভঙ্গ হতে বেশি দিন সময় নেয়নি। এখন গোটা দেশে উল্টো ছবি। জনসাধারণ যানজটে বসে আছেন ঘন্টার পর ঘটা, তত্ত্বাবধায়ক ‘বিপ্লবী’ সরকারের পদাধিকারীরা বিশেষ প্রটোকলে কনভয় নিয়ে তীব্র গতিতে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে।এতো গেল বাহ্যিক দৃশ্য।ভেতরে সরকার ও প্রশাসনের চেহারাটা এক বছরের আগের শেখ হাসিনার শাসনের চেয়েও বিপজ্জনক। যারা ভেবেছিলেন অভ্যুত্থানের পর আমলাতন্ত্র বদলে যাবে, দুর্নীতি উধাও হবে। কিন্তু এক বছরের সময়কালেই বাংলাদেশ এখন আরও বেশি দূর্বিষহ, দুর্নীতি আর দৌরাত্ম্যে ভরপুর। খোদ দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে,১ বছরে প্রশাসনে, দেশে, সামাজিক ব্যবস্থায় জঞ্জাল বেড়েছে।যার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ব্যানার নিয়ে পরিবর্তনের গান গেয়েছিলেন তাদেরই একাংশ বলছেন বৈষম্য, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি কার্যত জুলাই বিপ্লবকে’মানিমেকিং মেশিনে পরিতন করেছে।দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, ৫ আগষ্টের পর বেড়েছে। সাধারণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে গিয়ে ঠেকেছে। আইনের শাসন দূরের কথা,গত এক বছরে অস্থির আস্থর বাংলাদেশে বিরাজ করছে চরম অরাজকতা নৈরাজ্য। এক বছরে নির্বাচিত সরকার তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন বীভৎসতা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, বিএনপি ক্ষমতায় এলে, লাভ হতে পারে চিনের।সে কারণেই আমেরিকা ইউনুসকে ক্ষমতায় রাখতে আরও বেশি আগ্রহী। সব মিলিয়ে জুলাই
বিপ্লবের পর গত এক বছর কালে বাংলাদেশ আরও গভীর রাজনৈতিক
অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে চলেছে। যা এই অঞ্চলের জন্য অশনি সংকেত
বহন করতে পারে।
এর আগে রমজানের পর ভোটের আশ্বাস দিয়েছিলেন ইউনুস। বলেছিলেন আগামী বছর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি নাগাদ রোজা শুরু হবে। রমজান মাসে নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আরও কিছুটা পরেই হয়ত ভোটে যেতে চাইছেন ইউনুস। কিন্তু সেটা কবে হবে, সেই সময়সীমা এখনও স্পষ্ট নয়। ভারতের সবচেয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। অবস্থানগত দিকে থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেমন গুরুত্ব রয়েছে বাংলাদেশের,তেমনি চিন ও আমেরিকার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশকে কাছে পেতে দড়ি টানাটানির বিরাম নেই। বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকা বিশেষ আগ্রহ দীর্ঘদিনের।বিশেষ করে সেন্ট মার্টিন এবং এর দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় আমেরিকার নজর পড়ে আছে অনেকদিন।এখানে নৌ ঘাঁটি গড়তে চাইছে আমেরিকা।কিন্তু একটি জীবন্ত প্রবাল দ্বীপে নৌঘাঁটি স্থাপন আদৌ কতটা সম্ভব সেই প্রশ্নও আছে।অথচ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত। কোন পরিস্থিতিতেই ভারত এক্ষেত্রে দর্শক হয়ে থাকবে না।যে কারণে রাজনৈতিক কূটনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে বড় এক প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *