August 1, 2025

নির্বাচনে কমিশন!!

 নির্বাচনে কমিশন!!

মানুষের অধিকার নিশ্চিতকল্পে দেশে নিরপেক্ষ তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম একটির নাম হল নির্বাচন কমিশন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বহুদলীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করে। শুধু এই টুকুই নয়, মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার যাতে যথাযথ প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করাটাও নির্বাচন কমিশনের দায় এবং দায়িত্ব হয়ে যায়। একদিকে প্রতিষ্ঠানকে যেমন আইনগতভাবে শক্তিশালী করা জরুরি তেমনি এই প্রতিষ্ঠানকেও তার স্বচ্ছতা রক্ষা করে চলতে হয়। সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে যে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত তাঁর স্বচ্ছতার মাণদণ্ড কিন্তু নিরপেক্ষতা। প্রতিষ্ঠানের ভিত মজবুত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের দিকেও কমিশনের দায়িত্ববানদের খেয়াল রাখতে হয়। আবার এই ব্যাপারে রাজনীতিকদেরই ভূমিকা পালন করতে হবে বেশি। ক্ষমতাবলে ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপ এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপদ ডেকে আনে। জনমনে ডেকে আনে প্রশ্নচিহ্ন। আবার প্রশ্নমুক্ত নির্বাচনই কেবল পারে জিইয়ে থাকা বিতর্কের নিরসন করতে। বিহারে কি তা সম্ভব হবে নির্বাচন কমিশনের জন্য?
আমাদের ঘরের পাশে বাংলাদেশ। এই দেশটির নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা, পরিসর ইত্যাদি সবই ভারতের তুলনায় অনেক দুর্বল। তার অতীত নিয়ে সন্দেহাতীত নন সেই দেশের মানুষ। বিশেষত, শেখ হাসিনার জমানার নির্বাচনগুলির নিরপেক্ষশূন্যতা সেই দেশটির নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে যেমন কলুষিত করেছে তেমনি বিপন্ন করেছে, ধ্বংস করেছে তার নিজের জমানাকে। নিজের অস্তিত্বকে। বাংলাদেশে আজ নির্বাচনের কথাবার্তা চলছে। ক্রমে হাওয়া গরম হচ্ছে প্রতিদিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভোটে যাওয়ার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছে। এই সময়ে ভোটের শুধু দিনক্ষণ ঘোষণা বাকি। এই মুহূর্তে প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কমিশনের সামনে রয়েছে চ্যালেঞ্জ, এমন অভিমত অনেকের। প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন আয়োজন করাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়, বরং অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার গুরুত্ব সম্পর্কে উপলব্ধি করে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন হাসিনার আমল পেরিয়ে এসে সবটাই প্রশ্নের সম্মুখীন। এই প্রতিষ্ঠানের আইনি এবং প্রশাসনিক সংস্কারের কথা বলেছে দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু হয়েছে কতটা- এই প্রশ্ন আজ সবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই নির্বাচন কমিশনের সামনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ কোনটি? এর জবাব হল, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ভোটারের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। যদিও দেশটির স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করেও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আওয়ামি লিগকে নির্বাচনে ডেকে আনা কি সম্ভব? নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার কি এই কমিশন নিশ্চিত করতে পারবে? ইউনুস সরকারের তিনটি অঙ্গীকার ছিল- সংস্কার, জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ের হত্যার বিচার ও নির্বাচন। সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশনগুলো ইতিমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সবগুলি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশ বাস্তবায়নের সঙ্গে সংবিধান বা নির্বাচনেরও সম্পর্ক নেই। সরকার নির্বাহী আদেশে অনেক সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সরকার কোনোটিতে হাত দেয়নি। বিচারপ্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে, তবে বিচারটি কবে শেষ হবে, সেটা নির্ভর করে আদালতের ওপর। তৃতীয়টি হলো নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্রে উত্তরণের কোনো বিকল্প উপায় আছে বলে জানা নেই। নির্বাচন দুই চার মাস পিছিয়ে দেওয়া হলে সব সংস্কার বা বিচারকাজ শেষ হবে, তার নিশ্চয়তাও নেই। যদি দলগুলো তাদের মধ্যে হানাহানি পরিহার করতে না পারে, তাহলে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন দূরের কথা, মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন করাও দুরূহ হবে ইউনুস আমলে। যতদূর জানা গেছে, ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারীতে ১৮ বছর পূর্ণ করবেন, এমন ৬০ লক্ষের বেশি নতুন ভোটারকে এবার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কাজ চলছে ২০ লক্ষ মৃত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচনের সময় ধরে জুলাইয়ে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু এখন নতুন সময়সীমায় তা পরিবর্তন হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন ঘিরে আচরণবিধি, কেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা এবং আইন-বিধি সংস্কারের কাজও চলছে। নির্বাচন কমিশনের ভোট প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্বাচনি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক কাঠামো ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আসনগুলোর সীমারেখা ঠিক করা হয়। কোনও সংস্কার বা পরিবর্তন, পরিবর্ধনের কিছু দেখা যায়নি। এর পরেও বাংলাদেশে এবার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাতে পারবে নির্বাচন কমিশন, এমন প্রত্যাশা সবার। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সবার আগে দেখতে হবে প্রশাসন নিরপেক্ষ কি না। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে বাগে আনা বা নিয়ন্ত্রণে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর গুরুত্বারোপ দরকার। নির্বাচন করাতে ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষ কাজ করবেন। তাঁরা হবেন সরকারী কর্মচারী।
নির্বাচন কমিশন তাঁদের মাধ্যমে নির্বাচন করবে। তাই তাদের ব্যবস্থাপনা, তাঁদের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগ-এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দূরত্ব শূন্যে আনতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে এই কাজগুলি নির্বাচন কমিশন কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করতে পারছে তার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভোট কতটা নিরপেক্ষ হবে- সেই বিষয়টি। বাংলাদেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি এবং নতুন প্রজন্মের ভোটাররাও ভোট দিতে পরেননি। তাই তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তরণ চান। এটিই ছিল আন্দোলনের মূল প্রত্যাশা। নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। দেশবাসী যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাহলে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সবাই তাঁর মতামত দিতে পারেন, দেবেন। যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। আর সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *