August 1, 2025

নারী জাগরণের বার্তা নিয়ে রাজ্যে এলেন বি-টেক পানিপুরিওয়ালি!!

 নারী জাগরণের বার্তা নিয়ে রাজ্যে এলেন বি-টেক পানিপুরিওয়ালি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নাম তাঁর তাপসী উপাধ্যায়, কিন্তু গোটা দেশ তাঁকে ‘বি- টেক পানিপুরিওয়ালি’ নামে চেনে। সেই বি-টেক পানিপুরিওয়ালি’ তাপসী উপাধ্যায় ত্রিপুরা সফরে এলেন।নারীর আত্মবিশ্বাসের সংগ্রামী জয়গাথা গোটা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরে, নারী ক্ষমতায়নের বার্তা নিয়ে গোটা দেশ ঘুরছেন তাপসী।মহিলাদের আত্মনির্ভরতার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।ইঞ্জিনীয়ারিং ডিগ্রি হাতে নিয়ে কর্পোরেটর চাকরির প্রতিশ্রুতি পেছনে ফেলে এক তরুণী একদিন রাস্তায় নেমে দাঁড়াল পানিপুরি বিক্রি করতে। তাঁর সেই সিদ্ধান্ত যেন ছিল সমাজের চোখ রাঙানি বিরুদ্ধে একরকম নীরব বিপ্লব। দিল্লীর সেই সাহসিনী তরুণী আজ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক অনুকরণীয় নাম। তিনি তাপসী উপাধ্যায় যাঁকে আজ সবাই এক বাক্যে চেনে বি-টেক পানি পুরিওয়ালি নামে। সেই তাপসী এলেন ত্রিপুরায়। রাজ্যে এসে দেখা করলেন রাজ্যপাল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী টিংকু রায়, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, মহিলা কমিশনের চেয়ারম্যান সহ বিশিষ্টজনদের সাথে। ছিমছাম হাসি আর আত্মবিশ্বাসী চোখে তিনি দৈনিক সংবাদকে জানালেন, এই রাজ্যের নারীদের জন্য কিছু করার আকাঙ্খা নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর লড়াইয়ের গল্প শুনে অনেকেরই নাকি চোখে জল এসেছে। কিন্তু সেই লড়াইয়ের গল্প থেকে তাঁরা নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছেন।


তাপসী উপাধ্যায় জানান, তিনি ছিলেন জওহরলাল নেহরু প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রী। কিন্তু চাকরির মোহ তাঁকে টানেনি। তিনি চেয়েছিলেন, গতানুগতিক জীবনধারা থেকে বেরিয়ে ভিন্ন কিছু করতে। এমন কিছু যা সমাজের মূল্যবোধে আঘাত করবে না বরং মানবিকতাকে জাগিয়ে তুলবে। তাই পানিপুরি বিক্রির মতো একটি সাধারন পেশাকে নিজের হাতে তুলে ধরলেন মর্যাদার মঞ্চে।
তাঁর নিজস্ব গাড়িতে এখন শুধু খাবার নয়, থাকে স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তাও। খাবারে স্বচ্ছতা পরিচ্ছন্নতা এবং পুষ্টির গুরুত্ব বোঝাতে শুরু করলেন নিজের উদ্যোগেও আরও এক লড়াই। এই ভাবনা থেকে জন্ম নিয়েছে তাঁর সংগঠন ‘মিশন হেলদি ভারত’।
তাপসী বললেন, আমি চেয়েছি আমার কাজ দিয়ে দেখাতে, পেশার উর্ধ্বে উঠে একজন নারীও পারেন সমাজ বদলাতে। ত্রিপুরার নারীদের মধ্যে যে শক্তি আছে, তাতে শুধু একটু দিককে দেখাতে হবে। তিনি জানান, আগরতলা, কাঞ্চনপুর, ধর্মনগর, উদয়পুরের মতো মহকুমাগুলিতে তিনি নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে চান।


স্বাস্থ্যকর স্ট্রিট ফুড বিক্রি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার মডেল তৈরির বিষয়ে।শনিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রণব সরকার তাঁকে সংবর্ধনা জানিয়ে বলেন, তাপসীর মতো নারীরা আমাদের সম্মান।
একটা মেয়ে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছু বিক্রি করে, সমাজ আগে তাকে অবজ্ঞা করে। প্রণববাবু বলেন, আমরা চাই মানুষ অবজ্ঞার বদলে শ্রদ্ধা করতে শিখুক। আমরা চাই ত্রিপুরার প্রতিটি নারী একেক জন তাপসী হয়ে উঠুক।
রাজ্য সরকারের এক আধিকারিক জানান, মিশন হেলদি ভারত- এর পরবর্তী প্রকল্পে ত্রিপুরার অন্তত ১০০ জন নারীকে ক্ষুদ্র ব্যবসার মডেল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলা হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি এনজিওর সঙ্গে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তাপসীর জীবন যেন এক পাঠশালা। যেখানে সাহস, আত্মবিশ্বাস আর নিষ্ঠা একসাথে লেখা আছে। একজন নারী নিজের হাতেই গড়ে নিজের ভবিষ্যৎ। আর সেই আলো ছড়াতে এসেছেন আমাদের রাজ্যেও। যে চোখ একদিন ভয় পেয়েছিল সমাজের বাঁকা দৃষ্টিকে। আজ সে চোখেই দেখা যায় শত নারীর স্বপ্ন। তাপসী শুধু পানিপুরি বিক্রি করেন না, একই সাথে তিনি বিলি করেন আত্মনির্ভরতার বার্তা আর নারী জাগরনের সাহস। ত্রিপুরায় তাপসীর আগমন যেন এক শুদ্ধ বার্তা রেখে গেল, যে নারী কখনও দুর্বল নয়। সুযোগ পেলে তিনিও পারেন সমাজ বদলে দিতে
তাপসী জানান, ত্রিপুরায় শিকড় গাঁড়ছে ‘মিশন হেলদি ভারত’। মিশন হেলদি ভারত- সম্পূর্ণ ভারত যাত্রা দেশের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রভাবশালী সচেতনতা অভিযানে পরিণত হয়েছে। দেশের নব প্রজন্মের প্রেরণাদায়ক তাপসী উপাধ্যায় তাঁর এই মিশন ত্রিপুরায় সক্রিয় করবে, এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা, পশু-কল্যাণ ও যুব সমাজের ক্ষমতায়নের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। একটি বুলেট এন্ডফিল মোটরসাইকেলে গত প্রায় দেড় বছরের দেশের ২৮ টি রাজ্যে ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘুরে ত্রিপুরায় এসেছেন তাপসী উপাধ্যায়। বিদ্যালয় ও কলেজে সচেনততা শিবির, প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারিত্ব ও সরাসরি যুব সংলাপের মাধ্যমে এই মিশন ছাত্র-ছাত্রী ও যুব সমাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন করছে।
ত্রিপুরার রাজ্যপাল তাপসী উপাধ্যায় ও তাঁর দলকে সম্মান জানান এবং তাঁদের লক্ষ্যগুলির ভূয়সী প্রশংসা করে শুভকামনা জানিয়েছেন।
আগরতলা পৌরসভার মেয়র দীপক মজুমদার তাপসীকে আন্তরিক স্বাগত জানান ও সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাপসী জানান, মিশন হেলদি ভারত’-এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে ওয়ার্ল্ড ভেগান ভিশন নিরন্তর সমর্থন প্রদান করে চলেছে। উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যাভাস, পরিবেশ রক্ষা ও নৈতিকতা এই তিনটি স্তম্ভের মাধ্যমে তারা মিশনের মূল দর্শনের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একাত্ম।
ত্রিপুরা পর্যায়ে তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *