অনলাইন প্রতিনিধি :-সরকারী নথি অনুযায়ী জল জীবন মিশনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও ঊনকোটি জেলার বিস্তীর্ণ জনপদে চলছে তীব্র পানীয় জলের সংকট। সরকারী নথিতে জল জীবন মিশনের শতভাগ বাস্তবায়নের দাবি থাকলেও বাস্তবে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।কৈলাসহর ও কুমারঘাট ডি-ডব্লিউ-এস সাব-ডিভিশনের অধীনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সারফেস ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমের প্রকল্প শুরু হওয়ায় পাঁচ বছর পরেও সম্পূর্ণ হয়নি।২০২০-২১ ইংরেজি অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দপ্তরের অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের অগ্রগতি ৪০ শতাংশের কম। জানা গেছে, কৈলাসহর সাব-ডিভিশনের বেশ কয়েকটি প্রকল্পে মূল কাজের অন্যতম ধাপ raw water pipeline এখনও বসানো হয়নি। কাজের আদেশ জারি হওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ হাতে নেয়নি। চুক্তি অনুযায়ী এই কাজগুলির infiltration well তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তা তৈরি হয়নি। এখন পর্যন্ত মোটর বসানো হয়নি। সংশি-লষ্ট এলাকাগুলিতে হাজার হাজার পরিবার সেখানে বসবাস করে। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঝরনার জলই তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে সেই জলও শুকিয়ে যায়। ফলে জলের তীব্র সংকটে ভোগে গোটা এলাকা। প্রতি বছরই বাড়ছে জলবাহিত রোগের প্রকোপ।কুমারঘাট সাব ডিভিশনে বিভিন্ন প্রকল্পের অবস্থাও একই রকম। পাইপ লাইন বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য নির্ধারিত স্থানে পড়ে আছে মরচে ধরা রড, ছেঁড়া সিমেন্টের ব্যাগ আর ভাঙা কংক্রিটের স্তূপ। অথচ সরকারী রেকর্ডে প্রকল্পটিকে কাজ চলমান বলে দেখানো হয়েছে। অভিযোগ জল জীবন মিশন এখন জল বিল মিশনে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে কাজ না হলেও কাগজে উন্নয়নের ছবি আঁকা হচ্ছে। দপ্তরের কিছু কর্মচারীর সঙ্গে ঠিকাদারের গোপন বোঝাপড়ায় এই অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ। কৈলাসহর ডি-ডব্লিউ-এস সাব-ডিভিশনের এক কর্মচারী জানান কাজে গাফিলতি ধরা পড়লেও রিপোর্ট চাপা দিয়ে বিল ছেড়ে দেওয়া হয়। রানিং বিলের নামে সরকারী অর্থ লুঠ হচ্ছে। এই অনিয়ম নিয়ে প্রশাসনিক মহলে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। তবুও এখনও কোন তদন্ত শুরু হয়নি। প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী বা এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার -কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। কবে কাজ শেষ হবেও তাও কেউ বলতে পারছে না। এদিকে কৈলাসহরের আশপাশের গ্রামগুলিতে জল সংগ্রহের জন্য নারী ও শিশুরা কয়েক কিলোমিটার হেঁটে পাহাড়ি ঝরনা থেকে জল আনছে। সেই জলই তাদের পানীয় ও রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বিশুদ্ধ না হলেও অন্য কোনও বিকল্প নেই। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার পরও যদি মানুষের ঘরে কল থেকে জল না পড়ে তবে এই প্রকল্পের উপকারিতা কোথায়- সেই প্রশ্ন তুলছে ** স্থানীয় বাসিন্দারা। সরকারের জল জীবন মিশনের উদ্দেশ্যে ছিল প্রতিটি গৃহে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌছে দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে উনকোটি জেলার মানুষ আজও সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দপ্তরের দুর্বল নজরদারি, ঠিকাদার বাছাইয়ে অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবই এই ব্যর্থতার মূল কারণ, তাদের দাবি, অবিলম্বে এই দুই প্রকল্পে আর্থিক অডিট হওয়া দরকার। নইলে কোটি কোটি টাকার সরকারী অর্থ নথিতেই শেষ হয়ে যাবে আর পাহাড়ি মানুষ বছরের পর বছর জল সংকট ভুগবে। - ঊনকোটি জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে এখনও বহু পরিবার আছে যারা কখনো জল -জীবন মিশন প্রকল্পের নাম শোনেন নি। পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান দপ্তরের এই উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনা এখন জনরোষের কারণে হয়েছে। পাহাড়ের মানুষের - একটাই প্রশ্ন- কোথায় গেল কোটি কোটি টাকা? প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও তার কোন উত্তর মেলেনি। এদিকে জল জীবন মিশনের নামে কোটি কোটি টাকা - লোপাটের তথ্য দৈনিক সংবাদ পর্যায় ক্রমে প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও * কৈলাসহর এবং কুমারঘাট ডি ডাব্লিউ এস দপ্তরের সাব ডিভিশনের তৎকালীন সহকারী বাস্তুকার এবং নির্বাহী বাস্তুকারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়ার খবর নেই। ইতিমধ্যে এক নম্বর দুর্নীতিবাজ সহকারী বাস্তুকারকে ধলাই জেলায় বদলি করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।