দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এবং হাসপাতাল উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মেইল !!
নতুন প্রতারণার ফাঁদ,লিঙ্ক ক্লিক করলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে নিমিষেই উধাও হচ্ছে টাকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার প্রতারণা চক্র। এবার RTO Traffic Challan.apk নামক একটি ভুয়ো অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের লিঙ্ক ছড়িয়ে চলছে প্রতারণা। হোয়াটসঅ্যাপে আসা এই লিঙ্কে ক্লিক করলেই স্মার্টফোনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে। এর ফলে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই অভিনব প্রতারণার বিষয়টি উত্তর জেলা পুলিশের নজরে আসতেই তারা সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই apk লিঙ্কে ক্লিক করার পর প্রথমে মোবাইল ফোনটি হ্যাক হয়ে যাচ্ছে এবং তারপর ব্যবহারকারীর অজান্তেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ধর্মনগর থানা রোড শ্রীকৃষ্ণ সরণীর
বাসিন্দা অভিষেক হাজরা (বত্রিশ)
পিতা অসিত হাজরা। তিনি পুলিশের
কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের
করেছেন। অভিযোগে অভিষেক
জানিয়েছেন, শনিবার সকাল সাড়ে
নয়টা নাগাদ ৮৫০৯৬৪১২৬২ এই
নম্বর থেকে তার ফোনে একটি কল
আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি
নিজেকে এসবিআই ক্রেডিট কার্ড
কর্তৃপক্ষের কর্মী হিসাবে পরিচয় দেন
এবং জানান যে,বেলা এগারোটার
মধ্যে তার একটি এসবিআই স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে।
অভিষেক এমন কোনো বিমা করাননি জানালে ফোনটি কেটে দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই আবার ফোন আসে।
এবার প্রতারক অভিষেককে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, ভুলবশত বিমাটি চালু হয়ে থাকতে পারে এবং প্রিমিয়াম না দিলে তার ক্রেডিট কার্ড থেকে ৭ হাজার ৭৫৬ টাকা কেটে নেওয়া হবে। ব্যাঙ্কে গেলে দেরি হয়ে যাবে, এই ভয় দেখিয়ে প্রতারক তাকে একটি লিঙ্ক পাঠায় এবং বলে এই লিঙ্কে ক্লিক করলে তার ক্রেডিট কার্ডটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং টাকা কাটা হবে না। অভিষেক সরল বিশ্বাসে লিঙ্কে ক্লিক করার পরেই প্রতারক তার মোবাইল নম্বরটি ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে রেজিস্টার্ড কি না তা জানতে চায়। তিনি হ্যাঁ বলতেই ঘটে বিপত্তি।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার এসবিআই ক্রেডিট কার্ড থেকে ছয়বারে মোট ২৯ হাজার ৫৮০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। পরে টাকা কাটার মেসেজ আসে। পরবর্তীতে আরও একটি লিঙ্ক আসায় অভিষেকের সন্দেহ হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোনটি ফ্লাইট মোডে রেখে প্রতারকের নম্বরটি ব্লক করে দেন এবং দ্রুত এসবিআই ধর্মনগর শাখায় ছুটে যান।
সেখানে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে পুরো ঘটনা খুলে বললে তিনি আগরতলার সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ জানাতে বলেন।কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিষেক জানান, তিনি একজন বেকার যুবক। বি.কম পাস করেও কোনো কাজ পাইনি। বাড়িতে পিতা অসুস্থ। পরিবারে আর কোনো উপার্জনশীল সদস্য নেই। এই পরিস্থিতিতে জমানো টাকা হারিয়ে পরিবার পথে বসার উপক্রম। তিনি পুলিশের কাছে দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত করার এবং তার কষ্টার্জিত টাকা উদ্ধার করে পরিবারটিকে বাঁচানোর জন্য কাতর অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই ঘটনা সামনে আসার পর উত্তর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কোনো অজানা বা সন্দেহজনক নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেজ আসা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। বিশেষত apk ফাইলযুক্ত কোনো লিঙ্ক থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।-কোনো অবস্থাতেই ফোনে আসা ওটিপি বা ব্যক্তিগত তথ্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না। সন্দেহজনক কিছু ঘটলে অবিলম্বে নিকটবর্তী থানা বা সাইবার ক্রাইম শাখায় যোগাযোগ করুন। তবে রাজ্যের এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন নামে apk লিঙ্ক পাঠিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করার চেষ্টা হয়েছিল।
কিন্তু একটি দায়িত্বশীল সংবাদ মাধ্যম হিসাবে প্রতিবার আমরা প্রতারণার নতুন কৌশলগুলি জনসম্মুখে প্রচার করেছি। যাতে রাজ্যের সাধারণ মানুষ সচেতন থাকেন। কারণ এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।