November 9, 2025

নজরে বাংলা!!

 নজরে বাংলা!!

১২ রাজ্যে এসআইআর (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) চলছে।এর মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর রাজ্য হচ্ছে পশ্চিমবাংলা।পশ্চিমবাংলায় এসআইআর শুরু হতেই রাজনৈতিক পারদ চড়তে শুরু করেছে। এর আগে বিহারে এসআইআর নিয়ে পারদ চড়েছিলো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রায় ৫০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গেছে সে রাজ্য থেকে। বর্তমানে সে রাজ্যে বিধানসভা ভোট চলছে। ফলাফলেই প্রমাণিত হবে রাজ্যে এসআইআরের কোনও প্রভাব ভোটে পড়েছে কি না। এবার বিহারের পর সবার নজর পশ্চিমবাংলার দিকে। মূলত পশ্চিমবাংলার অনুপ্রবেশকারী নিয়েই বেশ সরব কেন্দ্রের শাসক বিজেপি। এজন্যই এসআইআরে উৎসাহী কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। অন্যদিকে, পশ্চিমবাংলার শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এই এসআইআর নিয়ে বেজায় উদ্বিগ্ন। তাদের বক্তব্য, এসআইআরে কোনও বৈধ ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায়। আর যদি তা হয় তাহলে দিল্লী অভিযান করবে তারা। বিহারের এসআইআরের সাথে পশ্চিমবাংলার এসআইআরের একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিহারে শাসনে এনডিএ, বিজেপি যার শরিক। আর পশ্চিমবাংলায় শাসক মমতা বিজেপির কট্টর বিরোধী। আসলে ২০০২-২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশে শেষবার যে আইআর (ইনটেনসিভ রিভিশন) হয়েছিল তাকে ভিত্তিবর্ষ ধরেই এসআইআর হচ্ছে দেশে। বিহারে এসআইআর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও শেষ পর্যন্ত এসআইআর নিয়ে বিরোধীদের কোনও নিদান দিতে পারেনি। ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদই দিতে হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এই যে সমীক্ষা তা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সারা বছরই বিএলও-রা এই ধরনের সমীক্ষা করে যাবেন।মৃত ভোটার নয়া ভোটারের নাম তোলা, কোনও ভোটারের নাম বাদ দেওয়া-শিফটেড ভোটার কারা, কার বিয়ে হয়ে গেছে, বিয়ে হয়ে কারা নতুন ঠিকানায় এসেছে- এগুলি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সারা বছরই বিএলও-রা এগুলি করে থাকেন। তাহলে হঠাৎ করে এই এসআইআর কেন? এর আগে ২০০২-০৪ সালের মধ্যে দেশে যে সমীক্ষা হয়েছিল তা ছিল আইআর, তা এসআইআর ছিল না। এখন দেশে যে এসআইআ চ্ছে তা হচ্ছে মূলত অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিতে এবং একটি বিশে অংশের ভোটারদের লক্ষ্য রেখে।মূলত কেন্দ্রের শাসক বিজেপি স্তিষ্কপ্রসূত এই ভাবনা এবং নির্বাচন কমিশন এর তুলিরাহক মাত্র।এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো মাত্র এক মাসের মধ্যে এতবড় রাজ্যে এসআইআর সম্পন্ন করা কতটা যুক্তিযোগ্য এবং তাও ভোটের প্রাক্কালে? কেন্দ্রের শাসক এবং নির্বাচন কমিশন যতই যুক্তি খাড়া করুক না কেন, আসলে তাতে যে বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে এবং তা সবশেষে যে ক্ষমতার মসনদ হাসিল করা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিহারে যে এসআইআর নিয়ে এত অভিযোগ, তাতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও কোনও কিনারা করতে পারেনি বিরোধী দলগুলি। কেননা, বিরোধী দলগুলির ব্যাপক দুর্বলতা ছিল এক্ষেত্রে। সে রাজ্যে বিএলওদের ডানহাতে বামহাতে এনুমারেশন ফর্ম ফিলাপ করতে দেখা গেছে। গণহারে নিজেরাই ফর্ম ফিলাপ করেছে। জীবিত ভোটারদের ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এদের হাজির পর্যন্ত করানো হয়েছে। এতো কিছুর পরও এসআইআরে প্রায় ৫০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ আটকাতে পারেনি বিরোধীরা। বিরোধীদের ব্যর্থতা এতে মানতেই হবে। এসআইআরে কারো নাম বাদ গেলে দাবি আপত্তির সময় বিএলওদের (যারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি) ভোটারদের সহায়তা করার কথা ছিল। কিন্তু বিরোধীরা কি পর্যাপ্ত বিএলও নিযুক্ত করতে পেরেছিলো বিহারে? শুধু সুপ্রিম কোর্টের উপর ভরসা করে বসেছিল বিরোধীরা। নিজেরা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি বিহারে। তাই এত সংখ্যক ভোটারের নাম বাতিল হয়েছে। এত কিছুর পর এতে কতজন অনুপ্রবেশকারী ছিল তা জানাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এতেই তো বোঝা যায় ‘ডাল ম্যায় কুছ কালা হ্যায়’।
এবার পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে বিহারে যা হয়েছে তা পশ্চিমবঙ্গে এতো সহজ হবে তা ভাবা ঠিক নয়।পশ্চিমবঙ্গে শাসক তৃণমূল যখন কেন্দ্রের শাসকের টার্গেট তখন আগে থেকেই সতর্ক তৃণমূল। শুরু থেকেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছে তৃণমূল। এসআইআরকে তো আটকাতে পারবে না তৃণমূল। কিন্তু ভোটারদের পাশে থেকে, বিএলওদের ভোটারদের পাশে থেকে এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে কোনও বৈধ ভোটারের নাম যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়।
বিরোধীদের উচিত এসআইআর পরবর্তী সময়ে যখন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে তখন নির্বাচন কমিশনের জবাব তলব করা কতজন অনুপ্রবেশকারীর নাম আগের তালিকা থেকে বাদ গেলো তা যাচাই করা। তাহলেই ‘দুধ কা দুধ, পানি কা পানি’ হয়ে যাবে। আর বিরোধী দলগুলি যদি তা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল এবং তার সারথী নির্বাচন কমিশন এসআইআর করতে চাইছে তাতে তারা সফল বলে প্রমাণিত হবে। শুধু আদালতে মামলা করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোটারদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কোনও বৈধ ভোটারের নাম যাতে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায় তার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করা রাজনৈতিক দলগুলির কর্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *