দেশি-বিদেশিদের উপচে পড়া ভিড়,আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জম্পুই!!
দেশি-বিদেশিদের উপচে পড়া ভিড়,আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জম্পুই!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বিদেশি পর্যটকের আগমনে জম্পুই পাহাড় এখন আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জায়গা দখলের দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পর্যটন দপ্তরের ইউনিটি প্রমো ফেস্টের পর পাহাড় জুড়ে জম্পুই পাহাড় পর্যটন শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বছর পাহাড়ে যে পর্যটকের ঢল দেখা যাচ্ছে তা অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। চলতি মরশুমে পাহাড় জুড়ে পর্যটকদের ভিড় এমনভাবে বাড়ছে যে স্থানীয় বাসিন্দারাও বিস্মিত। রাজ্য পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ইউনিটি প্রমো ফেস্ট যেন জম্পুইকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে দেশবাসীর কাছে।উৎসব শেষ হতেই পাহাড়মুখী মানুষের স্রোত এক লহমায় বেড়ে গেছে। স্থানীয়দের কথায়-জম্পুইয়ে এমন ভিড় কখনও দেখেনি তারা।এবার শুধু রাজ্যের নয়, বহিঃরাজ্য থেকেও শত শত পর্যটক পাহাড় দেখতে আসছেন। আসছেন বিদেশি পর্যটকও।প্রকৃতির কোলে কয়েকদিন কাটাতে অনেকেই দূর থেকে গাড়ি ভাড়া করে হাজির হচ্ছেন জম্পুইয়ের বুকে।
শীত শুরু হতেই পাহাড়ি পথ ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা- চারপাশে দর্শনার্থীর আনাগোনা। জম্পুই পাহাড়ের টুরিস্ট লজে এখন রুম খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।আগেভাগে বুকিং না থাকলে থাকার সুযোগ নেই বললেই চলে। সব হোমস্টে স্থানীয়ভাবেই পূর্ণ হয়ে গেছে। কেউ কেউ বাড়ির অতিরিক্ত ঘরটিকেও পেয়িং গেস্ট হিসেবে খুলে দিয়েছে। পর্যটকদের চাপে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশও যেন কোলাহলে মুখর।
দিনভর জম্পুই ঘুরে অনেকেই রাতে নেমে আসছেন কাঞ্চনপুর শহরে। ফলে কাঞ্চনপুরের হোটেল, গেস্ট হাউস, লজ সবই এক কথায় ‘হাউসফুল’।
হোটেল মালিকরা বলছেন এভাবে বুকিং কখনও হয়নি আগে। রেস্তোরাঁগুলিতেও উপচে পড়া ভিড় প্রতিদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন এই মরশুম তাদের জন্য ‘বুম সিজন’।যে জম্পুই একসময় কমলার পাহাড় হিসেবে পরিচিত ছিল সেখানে আজ কমলা নেই। তবে কমলার অভাবেও পর্যটদের আগ্রহ কমছে না কোনো মতেই। পরিষ্কার বাতাস, পাহাড়ের প্রশান্ত সৌন্দর্য, শান্ত গ্রামের আবহ-সব মিলিয়ে জম্পুই এখন এক অন্য আবেশে ভরা। রাজ্য পর্যটন দপ্তর পাহাড় জুড়ে যেভাবে পরিকাঠামো সাজিয়েছে তাতে জায়গাটি নতুন রূপে ফুটে উঠেছে। পরিচ্ছন্ন ভিউ পয়েন্ট, রঙিন সজ্জা, ছবির মতো রাস্তা- সবই দর্শকদের মন কাড়ছে।
ইউনিটি প্রমো ফেস্ট জম্পুইয়ের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নাচ-গানকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এই প্রচারই পর্যটকদের ভিড় বাড়াতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর উদ্যোগে জম্পুই আবার আলোচনায় উঠে এসেছে নতুন করে। মন্ত্রী পাহাড়ে গিয়ে নিজে পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে জম্পুইয়ের সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। তারপর থেকেই উন্নয়নমূলক কাজের গতি চোখে পড়ার মতো।রাজ্যে বাইরে থেকেও অনেক টুর অপারেটর জম্পুইকে প্যাকেজ টুরে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিছু বিদেশিও এ বছর জম্পুইয়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগে এসে পৌঁছেছেন। পাহাড়ি খাদ্যসামগ্রী, বুনন শিল্প- সবকিছুর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। স্থানীয় যুবকরা গাইডের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।ড্রাইভাররাও এই মরশুমে ব্যস্ততার চরমে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন পাহাড়ে অতিরিক্ত নজরদারি রেখেছে।।কাঞ্চনপুর-পাহাড়মুখী সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এত মানুষের সমাগমে পাহাড়ের জল, বিদ্যুৎ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চাপও বাড়ছে। এ কারণে প্রশাসন ‘ক্লিন জম্পুই’ অভিযান শুরু করেছে।
পর্যটকদের বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে-পলিথিন বা আবর্জনা যেন ছড়ানো না হয়। অতিরিক্ত ভিড় সত্ত্বেও পর্যটকদের আচরণ বেশ সন্তোষজনক বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। পাহাড়ের নীহারিকা, সকালের কুয়াশা, অস্তরাগ- সব মিলিয়ে জম্পুইয়ের রূপ এখন পর্যটকদের কাছে অপূর্ব অভিজ্ঞতা। ভোরের সূর্যোদয় দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমছে পাহাড়চূড়ায়। সন্ধ্যায় আলো বদলের খেলা ক্যামেরাবন্দি করছেন অসংখ্য মানুষ।
ড্রোনে তোলা পাহাড়ের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পর্যটনের উত্থানে স্থানীয় অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে তা চোখে পড়ার মতো। বর্ধিত চাহিদা সামাল দিতে নতুন হোটেল ও খাবারের দোকান খুলছে।নারী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা স্থানীয় খাবার ও হস্তশিল্প বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।গ্রামীণ পরিবারের আয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। একদিকে পর্যটন বাড়ছে অন্যদিকে স্থানীয় ঐতিহ্যও নতুন করে মূল্যায়িত হচ্ছে।
শীতের ভোরে কুয়াশার চাদরমাখা জম্পুই দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন নানা প্রান্তের মানুষ। পাহাড়ি গ্রামের শান্ত জীবনযাত্রা অনেকের মন জয় করছে।
এ যেন প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটানোর নিখুঁত ঠিকানা। ইউনিটি প্রমোফেস্ট জম্পুইকে শুধু পর্যটন মানচিত্রেই নয়- মানুষের হৃদয়ের কাছেও নিয়ে গেছে। পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর চেষ্টায় জম্পুই পাহাড় এখন ত্রিপুরার অন্যতম উজ্জ্বল পরিচয়। জম্পুই আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রেও জায়গা করে নিয়েছে।পর্যটনের যে প্রবাহ জম্পুই ও কাঞ্চনপুরকে নড়েচড়ে বসিয়েছে তা সত্যিই এক নতুন যুগের শুরু। এ যেন পাহাড়ের ঘুম ভেঙে নতুন সকাল নতুন স্বপ্ন নতুন সম্ভাবনার আহ্বান।