August 2, 2025

দক্ষিণ এশিয়ার সংকট!!

 দক্ষিণ এশিয়ার সংকট!!

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।তার কারণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভারতকে রুখতে তৈরি হচ্ছে নতুন জোট!সাম্প্রতিককালে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এমন একটি সম্ভাব্য জোট নিয়ে বিস্তর আলোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।গত ১৯ জুন বেজিং-এ চিনের উপবিদেশমন্ত্রীর সাথে পাকিস্তানের অতিরিক্ত বিদেশ সচিব এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ সচিবের বৈঠকের পর থেকেই নয়া বিকল্প জোট নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমগুলিতে বেশ গুরুত্ব সহকারে এই নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই দুই দেশ যে এই বিষয়ে খুবই উৎফুল্ল, তা প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলি থেকে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনগুলিতে বলা হচ্ছে, ‘ভারতকে রুখতে একজোট চিন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ! ত্রিদেশীয় বৈঠকে সার্কের বিকল্প তৈরির ছক? এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সার্কের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে একটি জোট গড়ে তোলাই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি প্রকৃত অর্থেই বেজিং-ইসলামাবাদ-ঢাকা জোট হয়, তাহলে ভারতের তিনদিকে শত্রুদের ত্রিভুজ গড়ে উঠবে।তিন দেশের এই জোট হলে তা ভারতের বড়সড় মাথা ব্যথার কারণ হবে, সে কথা বলাই বাহুল্য।এমনিতেই নয়াদিল্লীর দীর্ঘ অপছন্দের চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর।সেই করিডর এবার বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।আর এটা যদি হয়, তাহলে পূর্ব ভারতের ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলতে পারবে চিনা ড্রাগন।সেই সাথে বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাতেও প্রভাব বাড়বে চিনের।স্বাভাবিকভাবেই ভারতের জন্য এটি অত্যন্ত উদ্বেগ ও চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে, যদি ত্রিদেশীয় এই জোট সফল হয়। এই তৎপরতা আদতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের – ‘অপারেশন সিন্দুর’ কান্ডের পর তৎপরতা আরও বৃদ্ধি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলে আসলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফের প্রভাব বৃদ্ধি করতে চাইছে বেজিং।এমন একটি শক্তিশালী জোট গড়ে তুলতে পারলে সমুদ্রপথের দখল নেওয়া অনেকটাই সহজ হবে চিনের পক্ষে।আর এতে বেজিং সফল হয়ে গেলে, শুধু ভারতের নয়, সমস্যা বাড়বে আমেরিকারও। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, এজন্যই কি তাহলে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে অন্য সুর শোনা যাচ্ছে? আর ক’দিনের মধ্যে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বই বলা যায় এই চুক্তির দিকে তাকিয়ে আছে। আর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ক’দিন আগেই ভারত সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য এলো হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ঘোষণা করেছেন, ‘ভূকৌশলগত ক্ষেত্রে ভারত-আমেরিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী।’ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন সহ অন্যান্য দেশকে বার্তা দিতেই সম্ভবত হোয়াইট হাউসের তরফে এমন কথা বলা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, গতকাল সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনের প্রভাব বিস্তার প্রসঙ্গে। সেই প্রশ্নের জবাবেই ক্যারোলিন বলেছেন, ‘এশিয়া-প্যাসিফিকের ভূকৌশলগত ক্ষেত্রে ভারত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কও খুব ভালো।’ উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসন রুখতে বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ‘কোয়াড’। সোমবার সেই কোয়াডের বৈঠকে যোগ দিতে আমেরিকা গেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। কোয়াড ভুক্ত দেশগুলি হলো, আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। এই চারটি দেশকে নিয়ে গঠিত হয়েছে কোয়াড। যা একটি বিশেষ কৌশলগত ফোরাম। এই ফোরামের মূল উদ্দেশ্যই হলো, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করা। মোদ্দাকথা, ওই অঞ্চলের সাথে যুক্ত দেশগুলির নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত
রাখা। এখন দেখার বিষয় হলো, চিন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ জোটের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় ভারত সহ কোয়াডভুক্ত অন্য দেশগুলি কতটা সক্রিয় হয়ে উঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *