রঞ্জিতবাবু জেনেভা গিয়েছিলেন,কোন দেশের পাসপোর্টে? জানতে চায় ত্রিপুরাবাসী!!
ত্রিমুখী লড়াইয়ে চিন্তায় শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এবার সবথেকে আকর্ষণীয় ইস্যুকে হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে নেমেছে প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি। আর সেই দুটি ইস্যু হলো ‘রোজগার’ এবং ‘পলায়ন’। প্রখ্যাত রাজনৈতিক ভোেট কুশলী প্রশান্ত কিশোর এখন রাজনৈতিক নেতা। জন সুরাজ পার্টি নামে নিজেই দল গঠন করে এবারই প্রথম বিহার বিধানসভা নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন।২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সবগুলি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে নতুন দল জন সুরাজ কিন্তু দলের সুপ্রিমো প্রশান্ত কিশোের নিজে কোথাও প্রার্থী হননি। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রচারের দায়িত্ব তিনি একাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, একদিকে এনডিএ, অন্যদিকে মহাজোট।প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি কোনও জোটেই নেই।জন সুরাজ পার্টি এবার তৃতীয় শক্তি হিসেবে একাই ২৪৩ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রচারে নেমে প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহারের এনডিএ সরকার এবং কংগ্রেস- আরজেডি এবং বামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে গঠিত মহাজোটের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন প্রশান্ত কিশোর। একই সাথে তাঁর দলের প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরে বিহারবাসীর মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।তিনি সরাসরি বলছেন, জন সুরাজ পার্টিকে ভোট দিন, ছটের পর আর কাউকে রোজগারের খোঁজে বিহারের বাইরে যেতে হবে না। তার বক্তব্য, বিহারের জনগণ, বিহারের যুবকরা বিহারেই কাজ করতে চায়। এখন সময় এসেছে নিজেদের রাজ্যে নিজেদের সরকার গঠনের। প্রশান্ত কিশোরের আরও দাবি, জন সুরাজ পার্টি ক্ষমতায় এলে বিহারের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। যারা ছট পুজোর জন্য বাড়িতে এসেছেন, তারা আর বাইরে যেতে বাধ্য হবেন না।বিহারবাসীর মন জয়ে ঠিক এভাবেই আশ্বাস দিচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকে।
শুধু তাই নয়, প্রায় প্রতিটি প্রচার সভাতেই প্রশান্ত কিশোর বিহারের রাজনৈতিক দাসত্বেরও অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।তার দাবি, বিহারবাসী বিজেপিকে ভয়ে ভোট দেয়। আবার লালুপ্রসাদ যাদবের ভয়ঙ্কর আতঙ্কে নিরুপায় হয়ে অন্যদিকে ঝোঁকে। তাই এবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বড় সুযোগ এসছে, বিহারবাসী পরিবর্তন চান নাকি পুরনো ব্যবস্থাতেই আস্থা রাখবেন। এটা বিহারের জনতাকেই ঠিক করতে হবে। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশান্ত কিশোরের এই প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাসে বিহারবাসী আস্থা রাখবে কিনা? বিহারবাসী কি তার এই প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে বিহারে ইতিহাস রচনা করবে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব একমাত্র আগামী ১৪ নভেম্বর পাওয়া যাবে।তার আগে এই প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়ার কোনও উপায় নেই। কিন্তু গ্রাউন্ড জিরোতে দাঁড়িয়ে, নানা স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে যতটুকু আভাস পেয়েছি, বা মানুষের মনোভাব যতটা আন্দাজ করতে পেরেছি, তাতে এইটুকু হলফ করে বলতে পারি, প্রশান্ত কিশোরের পক্ষে লড়াইটা খুবই কঠিন। কেন কঠিন, তার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। জন সুরাজ পার্টির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে গত ২ অক্টোবর ২০২৪ ইং থেকে। যদিও এর আগে থেকেই প্রশান্ত কিশোর গোটা বিহার ঘুরে, পদযাত্রা করে সমর্থন আদায়ের প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। কিন্তু এখনও এত কম সময়ে বিহারের মতো বড় রাজ্যে দলের সংগঠন সেই ভাবে গড়ে উঠেনি।গত দুই বছরে বিহারে কোনও নির্বাচনে জন সরাজ পার্টির প্রভাব বাড়ার তেমন কোনও আভাস বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে দলীয় প্রার্থীদের
টিকিট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার পক্ষে জনমত এবং জনসমর্থন গড়ে উঠার মতো এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যে সুবিধা দিল্লীর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পেয়েছিলেন, সেই সুবিধা প্রশান্ত কিশোর পাননি। আন্না হাজারের আন্দোলন থেকে নতুন দল গঠন করে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীর ক্ষমতা, পরবর্তীকালে পাঞ্জাবেও সরকার গঠনে সফল হয়েছিলেন। বিহারে এই মূহূর্তে নানা বিষয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, নানা অভিযোগ-অনুযোগ আছে, এটা ঠিক। বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, পলায়ন, পরিকাঠামো, উন্নত সড়ক, পানীয় জল, আবাসন ইত্যাদি নানা ইস্যুতে নীতীশ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ আছে। কিন্তু একেবারে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বলতে যা বোঝায়, সেটা তেমন নেই। গত দুই দিন বিহারের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল বিজেপি, আরজেডি এবং জেডি (ইইউ)-এর রাজ্যস্তরীয় নেতাদের সাথে কথা বলে যে আভাস পাওয়া গেছে, তাতে প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি এবার ‘ভোট কাটোয়া’ হিসাবে পরিচিতি পেতে পারে। এমনটাই অভিমত বিহারি আমজনতার।
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, নতুন দল জন সুরাজ পার্টি এবার তৃতীয় শক্তি হিসেবে বিহার ভোটে টক্কর দেবে। কিন্তু কতটুকু টক্কর দেবে বা দিতে পারবে, তা এখনই বলা মুশকিল। প্রশান্ত কিশোরের দল যে ভোট কাটবে, এটা কিন্তু একশ শতাংশ নিশ্চিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তার দল কোন দলের ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাবে? এটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিহারের আমজনতা, সকলেই একবাক্যে এই দাবি করছে। ফলে একটা আশঙ্কার মধ্যে আছে সকলেই। বিশেষ করে বিরোধী মহাজোট। অন্যদিকে এনডিএ জোটের নীতীশ কুমারের দলও প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে চিন্তায় আছে। নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) এর রাজ্য সহ-সভাপতি বৈদ্যনাথ প্রসাদ একান্ত আলাপচারিতায় স্পষ্টভাবেই বলেছেন, প্রশান্ত কিশোরের দল একটি আসনেও জয়ী হবে না, কিন্তু ভোট কাটবে। এমনকী জেডি (ইউ) এর ভোটও কাটবে। তার আরও দাবি, ভোটের রণকৌশল তৈরি করা আর ময়দানে নেমে নিজে ভোটে লড়াই করার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। বিষয়টা অনেক কঠিন। তাছাড়া রাজনীতির ময়দানে প্রশান্ত কিশোর সবেমাত্র এসেছে। একমাত্র প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই দেখা গেলো বিজেপির। বরং প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি এবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ায়, বিজেপি দল এটাকে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা হিসাবে দেখছে। বিজেপির বিহার প্রদেশের মিডিয়া ইনচার্জ সঞ্জয় ময়ূখ-এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটাই আভাস পাওয়া গেলো। তার দাবি, প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি বিজেপির একটি ভোটও কাটবে না। তবে জোট শরিক জেডি (ইউ)-এর ভোট নিয়ে তার কণ্ঠেও আশঙ্কার সুর শোনা গেছে। ফলে তার এই আশঙ্কা যদি বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে বিহারে এবার ভোটের ফলাফল ওলট পালট হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, ভোট কাটাকাটির অংকে জেডি (ইউ) যে ১০১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, সেখানে সুবিধা পেয়ে যেতে পারে বিরোধী মহাজোট।এই আশঙ্কাই তে তাড়া করছে বিজেপিকে। যদিও দলের প্রদেশ মিডিয়া ইনচার্জ সঞ্জয় ময়ূখ আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে দাবি করেছেন যে, বিহার নির্বাচনে এবার এনডিএ জোট গতবারের চাইতেও আরও ভালো ফলাফল করবে এবং আরও বেশি আসনে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করবে। এ নিয়ে কোনও আশঙ্কা বা দ্বিমত নেই। তার আরও দাবি, গত পাঁচবছরের বিহারে এনডিএ সরকারে যে উন্নয়নের কাজ করেছে, তারই নিরিখে বিহারবাসী পুনরায় এনডিএ সরকারকে বিপুল ভোটে জয়ী করে ক্ষমতায় আনবে। সঞ্জয়ের আরও দাবি, বিহারের মহিলারা এমনকী মুসলিম মহিলারাও বিজেপি এবং এনডিএ জোটকে মন খুলে সমর্থন করবে। শুধু তাই নয়, বিহার এখন মোদিময়। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
তবে একটা বিষয় উল্লেখ করতেই হবে, বিজেপি এবং মোদির কাঁধে ভর করেই বিহারে নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড ক্ষমতায় টিকে আছে। এমনকী বিহার রাজনীতির অঙ্গনেও নীতীশ কুমার ও তার দলকে বাঁচিয়ে রেখেছে বিজেপি এটা এখন অস্বীকার করার উপায় নেই। বিজেপিও নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য নীতীশ কুমারকে জিইয়ে রাখতে হচ্ছে। গত ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষেত্রেও এই সমীকরণ দেখা গেছে। এককথায় একে অপরের পরিপূরক। ২০২৫ বিধানসভা নির্বাচনেও একই সমীকরণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে বিধানসভায় ত্রিমুখী লড়াইয়ে চিন্তায় শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই।