শক্তি সংরক্ষণে ফের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলো ত্রিপুরা!!
তিপ্রা মথাকে দেওয়া হোক স্বরাষ্ট্র দপ্তর! ৩ মাসেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা! মন্ত্রীর বক্তব্যে গুঞ্জন!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের একদিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অন্যদিকে শরিকি লড়াই এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, যা দেখে রাজ্যবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার রাজ্য সরকারের অন্যতম শরিক তিপ্রা মথা দলের বিধায়ক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা এমন এক মন্তব্য করে বসেন, যাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যজুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। সরকারের শরিক হয়ে মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা নিজেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার এই মন্তব্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার বিরুদ্ধে সরাসরি অনাস্থা প্রকাশ বলে মনে করছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল। শুক্রবার মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা খুমুলুঙে তিপ্রা মথার ক্ষতিগ্রস্ত পার্টি অফিস পরিদর্শনে যান।সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরটি তিপ্রা মথাকে দেওয়া হোক। তিন মাসের মধ্যে রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়ে দেবে তিপ্রা মথা। এর জন্য তিপ্রা মথা প্রস্তুত আছে। আমাকেই দিতে হবে এমন কথা বলছি না। তিপ্রা মথার যে কাউকে দেওয়া হোক, রাজ্যে তিন মাসের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার এই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচার হতেই বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। সামাজিক মাধ্যমেও তার এই বক্তব্য মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। রাজ্য রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনমনেও এই নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কেননা, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরটি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার হাতে।তারই মন্ত্রী পরিষদের একজন দায়িত্বশীল সদস্যের এমন মন্তব্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার এই বক্তব্যের যে সারমর্ম, তার সহজ মানে হলো মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা স্বরাষ্ট্র দপ্তরটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না। যে কারণে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে এবং রাজ্যে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার এই বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার বিরুদ্ধে সরাসরি অনাস্থা প্রকাশ বলে মনে করছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল। মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার পাল্টা অভিযোগ, এডিসি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তিপ্রা মথার নেতা, কর্মী এবং সমর্থকদের উপর প্রাণঘাতী হামলা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে মথার কর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছে। মথার কর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুঠপাট হচ্ছে। দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এই ধরনের ঘটনা, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট পুলিশের উপস্থিতিতেই হচ্ছে। অথচ ওইসব দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।অনিমেষ দেববর্মা আরও বলেন, অথচ উল্টো মথার নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মথার নেতা, কর্মী- সমর্থকরা এইসব হামলার সাথে জড়িত। যদিও এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ইতিপূর্বে কখনো এতটা ভঙ্গুর হয়নি। রাজ্যের সর্বত্র ঠিকাদারি নিয়ে সংঘর্ষ, নিগো বাণিজ্য ঘিরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ, প্রকাশ্যে গোলাগুলীর মতো ঘটনা রাজপথে ঘটছে। নেশার সাগরে ভাসছে গোটা রাজ্য, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেই অর্থে পুলিশের ভুমিকা কোথায়? এসবের সঠিক জবাব তো মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারবেন। অনিমেষ দেববর্মা আরও বলেন, এডিসি এলাকায় যা ঘটছে, এর সাথে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিপ্রা মথাকে জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কার সাথে কে শরিক থাকবে, সেটা সময়ে দেখা যাবে। আমাদের উপর তো প্রথমদিন থেকেই হামলা হচ্ছে। মথার কর্মীরা আক্রান্ত। শরিক আছি বলে সব দোষ আমাদের উপর চাপানো হবে- এটা আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করবো না। তার দাবি, যারা এসব করছে তারা দুষ্কৃতকারী। সমাজদ্রোহীরা এসব ঘটনার সাথে যুক্ত। সমাজদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেই আমরা এই দাবি করছি। সরকারে আমাদের সমর্থন রয়েছে। এখন সরকারের বদনাম হলো, সরকারের ছবি খারাপ হলে, আমাদেরও বদনাম হবে। আমাদেরও ছবি খারাপ হবে।এদিকে, মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার এই বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হতেই রাজ্যের বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা মুখ টিপে হাসতে শুরু করেছে। বিরোধী দলের অনেকেই বলছেন, রাজ্যের শাসক ও শরিক দল (তিপ্রা মথা) যে পথে এবং যেভাবে চলছে, তাতে বিরোধী দলের কিছুই করতে হবে না। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৮ বিধানসভা নির্বাচনে এই সরকার এমনিতেই বিদায় হয়ে যাবে।