দেশি-বিদেশিদের উপচে পড়া ভিড়,আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জম্পুই!!
ঢোল-ধুমসার বাদ্যে উদ্বোধন বর্ণিল ওয়ানগালা উৎসব!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-২০ তম রাজ্যভিত্তিক ওয়ানগালা উৎসব-২০২৫-এর বর্ণাঢ্য সূচনা হয়েছে উদয়পুরের নাতিনটিলায়। গোমতী জেলার উদয়পুর মহকুমার গর্জি নাতিনটিলা মেলারমাঠ সোমবার সন্ধ্যায় জমকালো পরিবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হলো দু’দিনব্যাপী ২০তম রাজ্যভিত্তিক ওয়ানগালা উৎসব ২০২৫। সন্ধ্যা সাতটায় প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা। উৎসবের পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে ছিলেন হাজারো দর্শনার্থী, গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা ও মন্ত্রমুগ্ধ করা ঢোল- ধুমসার শব্দ।উদ্বোধনী বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী ওয়ানগালা উৎসবের ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন-‘গারো জনজাতির এই উৎসব নতুন ফসল তোলার পর দেবতা মিসি সালথ- এর উদ্দেশে প্রথম নবান্ন নিবেদনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়।এটি শুধু কৃষিজীবী সংস্কৃতির নয়, আমাদের রাজ্যের বহু ভাষা-বহু সংস্কৃতির ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ।রাজ্য সরকার সর্বদাই চেষ্টা করছে প্রতিটি সরকারের বিভিন্ন কল্যাণ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান- রাজ্যের বিভিন্ন জনজাতি এলাকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯ টি জনজাতি এ রাজ্যে থাকলেও আরও ৪০টির মত সাবট্রাইবেল রয়েছে। সরকার চেষ্টা করছে এ রাজ্য থেকে কোন জনজাতি গোষ্ঠী যেন হারিয়ে না যায়। তাই জনজাতি সমাজপতিদের ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা সাম্মানিক বাড়ানো হয়েছে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক গারো উৎসব করতে। বিকশিত ভারত গড়তে সবার উন্নয়ন দরকার বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, কোন জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষাগাড়া সম্প্রদায়ের শিক্ষার হার ৯২শতাংশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, গোমতী জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, বিধায়ক অভিষেক দেবরায় ও জিতেন মজুমদার, উদয়পুর পৌর পরিষদের পৌরপিতা শীতল মজুমদার, মাতাবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন শিল্পী দাস, গোমতী জেলার পুলিশ সুপার ড. কিরণ কুমার কে, ডিআইসিএ-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অজয় দে। এছাড়া ত্রিপুরা গারো ইউনিয়নের অ্যাডভাইজার শান্তি চিরণ ও সভাপতি সুভাষ মারাকও অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল ঐতিহ্য- সংস্কৃতির রঙিন জমকালো আয়োজন। উদয়পুরের গর্জি নাতিনটিলা মাঠ যেন সোমবার রূপ নিয়েছিল গারো সংস্কৃতি ও জনজাতীয় ঐতিহ্যের বর্ণিল উৎসবমুখর স্থানে। উৎসব মঞ্চে ছিল-ঐতিহ্যবাহী গারো ঢোল বাজনা, মনোমুগ্ধকর ওয়াগালা নৃত্য প্রদর্শন, বিভিন্ন জনজাতির লোকনৃত্য, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও হাতের কাজের প্রদর্শনী, স্থানীয় উদ্যোক্তা ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি জিনিসের স্টল। মেলার অংশে কৃষিপণ্য, জনজাতি খাদ্যসামগ্রী, বাঁশ-বেত শিল্প, কাঠের কারুশিল্প, প্রাকৃতিক রংয়ের পোশাক ও গয়নার স্টল ছিল বিশেষ আর্কষণ। উৎসব সফল করতে গোমতী জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উৎসব স্থলে পুলিশবাহিনীর বিশেষ মোতায়েন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, মেডিকেল টিম, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, দর্শনার্থীদের নির্বিঘ্নে উৎসব উপভোগের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত চলা এ উৎসবে থাকছে- বড় সাংস্কৃতিক আয়োজন, আন্তঃ জনজাতি নৃত্য প্রতিযোগিতা, স্থানীয় খাদ্য উৎসব, কৃষি ও হস্তশিল্প প্রদর্শনী, গারো ঐতিহ্যের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনা সভা। সমাপনী দিনে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন বিশিষ্ট অতিথিরা। ওয়ানগালা উৎসবকে কেন্দ্র করে উদয়পুরের নাতিনটিলা, গর্জি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। গারো জনগোষ্ঠী সহ বিভিন্ন জাতি-উপজাতির মানুষে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণ। আয়োজকদের দাবি- ‘ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ ধরনের উৎসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীদিনেও আরও বৃহত্তর পরিসরে ওয়ানগালা উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, এই রাজ্যে ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য এক কোটি টাকা থেকে দুই কোটি টাকা বাজেট বাড়ানো হয়েছে।