ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব!!

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মৃত অর্থনীতি’ মন্তব্যে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতি। শুধু জাতীয় রাজনীতিই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও ট্রাম্পের এই মন্তব্য ঘিরে নানারকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেননা, মার্কিন রাষ্ট্রপতি একই সঙ্গে ‘ভারত এবং রাশিয়া’ এই দুই দেশকে ‘মৃত অর্থনীতির দেশ’ বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই ভারত এবং রাশিয়া দুই দেশের পক্ষ থেকেই পাল্টা মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জবাবে কি আর রাজনীতি থামে? বরং ট্রাম্পের এই মন্তব্যে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে, বিরোধীদের কিছুটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘মৃত অর্থনীতি’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল বৃহস্পতিবার সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘ভারত মৃত অর্থনীতির দেশ নয়। উল্টো ভারত ‘দ্রুততম বর্ধনশীল’ অর্থনীতির দেশ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হিসাবে পরিণত হবে। সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল আরও বলেছেন, পরিকল্পিত সংস্কার, কৃষক, এমএসএমই এবং শিল্পপতিদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে ভারত এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের ১১ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থেকে ৫ম অর্থনীতির দেশে উঠে এসেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। এ সময়ের বিশ্বের নানা অর্থনীতি সমীক্ষক প্রতিষ্ঠান, তামাম অর্থনীতিবিদরা ভারতকে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি উজ্জ্বল স্থান হিসেবে দেখছেন।
এখানেই শেষ নয়, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ভারতের তাৎক্ষণিক নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আরও বলেছেন, সরকার শিল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করছে। একই সাথে সরকার সাম্প্রতিক যাবতীয় ঘটনাবলির প্রভাব পরীক্ষা করছে। সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে, খবরে প্রকাশ ভারতকে নিয়ে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন স্কটিশ ইতিহাসবিদ এবং ভারত বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডালরিম্পল। তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃত পক্ষে ভারতের অর্থনীতি মৃতপ্রায় নয়। বরং গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তিনগুণ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে’। আইএমএফের সর্বশেষ বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ২০২৫ এবং ২০২৬ উভয় অর্থ বছরেই ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬.৪ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১.৯ শতাংশ এবং ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিশ্বের দ্রুততম সম্প্রসারণশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারত তার অবস্থান বজায় রাখবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের এই অগ্রগতিই কি ট্রাম্পের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে? এজন্যই কি ট্রাম্প রাতারাতি ভোলবদল করে ভারতের তা বিরুদ্ধে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য এবং বিষোদ্গার করা শুরু করেছেন? নাম বিশেষজ্ঞদের অনেকেই কিন্তু এমনটাই মনে করছেন। কেননা, বিশ্বের জে একাধিক অর্থনৈতিক সমীক্ষক সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে ৪.১৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সাথে ভারত জাপানকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিনত হয়েছে। এখন ভারতের আগে রয়েছে জার্মানি ৪.৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার, চিন ১৯.২৩ ট্রিলিয়ন ডলার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩০.৫০ ট্রিলিয়ন ডলার। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ব অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যার জিডিপি ৭.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তবে এটা ঠিক যে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ ভারতের ২০২৫-২৬ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০ থেকে ৩০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দিতে পারে। এতে ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় কতটা ক্ষতি হবে? তা এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ভারত যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাল্টা জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ট্রাম্পের এই মনোভাব, ভারতের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, আবার হিতে বিপরীতও হতে পারে। কারণ, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম বাজার। এই বাজারকে উপেক্ষা করা ট্রাম্পের পক্ষে এতটা সহজ হবে না। ভারতও বিষয়টি জানে। তাই চটজলদি কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভারত ধীরে চলো নীতি নিয়ে এগুতে চাইছে। ট্রাম্পের এই নয়া সমীকরণে বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণেও একটা পরিবর্তন আসতে পারে, এমন সম্ভাবনাও কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে মৃত অর্থনীতির দেশ বলে ট্রাম্পের এই মন্তব্যে মোদি বিরোধীরা উৎসাহিত হলেও, ভারতের অর্থনীতি যে মৃত নয়, সেটা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প যেমন ভালো করে জানেন, তেমনি গোটা বিশ্বও জানে। মূল কথা হচ্ছে, এই ছায়া যুদ্ধ কতদিন ধরে চলতে থাকে এবং ভারত কীভাবে এই যুদ্ধ মোকাবিলা করে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পথে এগিয়ে যাবে-সেটাই দেখার।