জল বহুদূর গড়াবে!!

বিহারে বিশেষ নিবিড় ভোটার সমীক্ষা নিয়ে সরগরম যেমন জাতীয় রাজনীতি তেমনি সরগরম সে রাজ্যের রাজনীতিও। বুধবার বিহার বিধানসভায় এই ইস্যুতে তীব্র বাদানুবাদ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের মধ্যে। তেজস্বী নীতীশকে প্রশ্ন করেন, আপনি কী তাহলে ভুয়ো ভোটারের মুখ্যমন্ত্রী? তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন নীতীশ কুমার। শুধু তাই নয়, এ দিন দিল্লীতে জেডি(ইউ)’র এক সাংসদ মন্তব্য করেছেন, আসলে নির্বাচন কমিশনের কোনও বাস্তব জ্ঞানই নেই। এত কম সময়ে কীভাবে রাজ্যে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন সম্ভব। কমপক্ষে ছয় মাস সময় দরকার বলে তার দাবি। বিরোধী দলগুলি একই ইস্যুতে বেজায় সরব হয়েছে। মঙ্গলবারের পর বুধবারও তারা সংসদ চত্বরে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। তারা চান সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হোক। সরকার এখনও ঠিক করেনি বিহারের নিবিড় ভোটার সমীক্ষা নিয়ে তারা আলোচনায় রাজি কি না।
২০০৩ সালের পর বাইশ বছর পর বিহারে এই ধরনের বিশেষ সমীক্ষা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই সময়ে এটা কি দরকার ছিল। এর পেছনে যে রাজনৈতিক বড় গেম প্ল্যান রয়েছে তা বুঝতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়। সম্প্রতি কেন্দ্রের শাসক বিজেপির নেতারা একসুরে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে এসে অনুপ্রবেশ নিয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন। আসলে অনুপ্রবেশের মোড়কে কেন্দ্রের শাসক মুসলিমদের যে টার্গেট করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ঝড়খণ্ড ইত্যাদি সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলিকে প্রথমে টার্গেট করেছে বিজেপি। ঝাড়খণ্ডে কিছুদিন আগে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সে রাজ্যের প্রভারি করা হয়েছিল আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে।হিমন্ত সুযোগ পেলেই শুধু অনুপরেশ অবৈধ বাংলাদেশি ইত্যাদি ইস্যকে খুঁচিয়ে তুলতেন।আসামে তিনি বরাবরই এই ইস্যুতে সোচ্চার।এবার তাই ভোটের রাজ্য বিহারকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে কেন্দ্র তথা বিজেপি। বিহারে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যেই ভোট হবার কথা। এর আগে হঠাৎ করেই বিশেষ নিবিড় ভোটার তালিকা পরিমার্জনের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আপত্তি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলো। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এতে স্থগিতাদেশ দেয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্ট এর সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ছিল এই সময়টাকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছে এসআইআরের জন্য।তবে সুপ্রিম কোর্টের সৌজন্যে ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড, রেশনকার্ডকে এসআইআরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে জানা গেল যে বিহারে এখন পর্যন্ত এই এসআইআরের দৌলতে ৫২ লক্ষ ভোটারের নাম কাটা গেছে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে এতদিন তারা কিভাবে ভোটার হিসাবে রয়ে গেলেন? তারা তো গত লোকসভা নির্বাচন এমনকি গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। তাহলে এই ভোটাররা ভোট দিয়েছেন বলেই তো সরকার নির্বাচিত হয়েছে, সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তেজস্বী তো যুক্তিসঙ্গত প্রশ্নই তুলেছেন, তাহলে নীতীশ কুমার কি ভুয়ো ভোটারদের ভোটে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ৫২ লক্ষ ভোটার বাদ একটা রাজ্যের পক্ষে সাংঘাতিক ঘটনা। অনেক রাজ্যে এত সংখ্যক জনসংখ্যাও নেই। আসলে কেন্দ্রের শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনে নির্বাচন কমিশন যে লক্ষ্যে এই এসআইআর চালিয়েছে তাতে তারা এখন অবধি সফল বলাই যায়। কেন্দ্রের শাসকের লক্ষ্য আদতে মুসলিম ভোট। বিহারে বাংলায় মুসলিম ভোটই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় ভোটে। বিহারের নির্বাচনে এমওয়াই (MY) অর্থাৎ মুসলিম যাদব বিশাল ফ্যাক্টর। আর তাদের বাড়া ভাতে যদি ছাই দেওয়া যায় তাতে শাসক বিজেপির লাভই লাভযেখানে ভোটের আর বেশিদিন বাকি নেই। তাই বিহার দিয়ে শুরু।এরপর বাংলাকেও হয়তো ধরা হবে। তাহলে কি বলা যায় এটা এনআরসির প্রাথমিক ধাপ শুরু।তবে বিহারের এই এসআইআরের জল যে বহুদূর গড়াবে তা বলাই বাহুল্য।