August 1, 2025

জনযুদ্ধের ডাক হাসিনার!!

 জনযুদ্ধের ডাক হাসিনার!!

ফের উত্তাল বাংলাদেশ। হাসিনাকে উৎখাত করার ঘটনার বছর ফের উত্তাল ঘুরতে না ঘুরতেই ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ।তবে এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।কেননা, এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনুস এবং তাঁর প্রত্যক্ষ সমর্থনে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধে নেমেছে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা। আর এই প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ থেকে। এই প্রতিরোধ এতটাই প্রবল ছিল যে, সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ১৮ (আঠারো) জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আহত এবং গুরুতর আহত অনেকেই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে যে, গোটা জেলায় কাফু জারি করতে হয়েছে। প্রত্যেকেরই গুলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। আহত এবং গুরুতর আহতদের অধিকাংশই গুলীবিদ্ধ বলে খবরে প্রকাশ। অভিযোগ, প্রতিরোধকারী বিক্ষুব্ধ জনতার উপর নির্বিচারে গুলী চালিয়েছে সেনাবাহিনী। বর্তমানে পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। বুধবারের এই ঘটনায় দেশজুড়ে জনযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বুধবার গভীর রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন”। হাসিনার এই আহ্বানকে অনেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সেই ঐতিহাসিক আহ্বানের সাথে তুলনা টানছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও এই ভাবিষ্যতেই দেশবাসীকে পাকিস্তান সেনার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর এই আহ্বানের পরই লক্ষ লক্ষ বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধে। পাকিস্তানি বাহিনীকে দেশছাড়া করার ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আবার একই আহ্বান শোনাগেল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কণ্ঠে।
হাসিনাও মাঝরাতে ভিডিও বার্তায় একই ডাক দিয়েছেন পাক মদতপুষ্ট মহম্মদ ইউনুস সরকারকে উৎখাত করতে।তিনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশেও আবেদন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের দিকে নজর দেওয়ার জন্য। বলেছেন, কীভাবে ইউনুস সরকার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণ করেছে, তাতে বিশ্ববাসীর প্রতিবাদ করা উচিত।
বুধবার গোপালগঞ্জে গণহত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং তিনটি শাখা সংগঠন যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্র লীগ।তারই অঙ্গ হিসাবে আজ ১৭ জুলাই গোটা বাংলাদেশব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করা হচ্ছে। আগামীকাল ১৮ জুলাই হবে দেশব্যাপী শোক মিছিল। শহিদের জন্য দোয়া এবং সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা। বুধবারই আওয়ামী লীগের তিনটি শাখা সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার, জঙ্গিঘাঁটি বানানোর এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার ইউনুসীয় ষড়যন্ত্র কোনভাবেই তাঁরা বাস্তবায়িত হতে দেবে না। খুনি- জঙ্গি-সন্ত্রাসী-অবৈধ- ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকারকে চিরতরে উৎখাত করার লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই ‘যমুনা ঘেরাও’ করা হবে। তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে গোটা বাংলাদেশ ব্যাপী।
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ শুধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মভিটাই।নয়, সেখানেই রয়েছে শেখ মুজিবের কবর, যা এখন জাতীয় সৌধ। খবরে প্রকাশ, বুধবার নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা গোপালগঞ্জে সভা করতে যাওয়ার আগে টুঙ্গিপাড়ায় মুজিবের মাজার ভাঙতে যাবে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল। এই গোয়েন্দা রিপোর্ট যেভাবেই হোক প্রকাশ হয়ে যাওয়ায়, প্রতিরোধে প্রস্তুত ছিল আওয়ামী লিগের কর্মী সমর্থকরাও। সাথে ছিল বঙ্গবন্ধু অনুগামী সাধারণ মানুষও। খবরে প্রকাশ, প্রতিরোধে সবার আগে ছিল মূলত ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগ। ইউনুসের নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠনের দাপটেই এনসিপি আর টুঙ্গিপাড়ামুখো হয়নি। তবে দিনভর গোপালগঞ্জে পুলিশ ও সেনার সঙ্গে ছাত্রদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। তাতে এখনও পর্যন্ত ১৮ জন গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। খবরে আরও প্রকাশ, পুলিশ ময়দানে থাকলেও, ছাত্রদের মোকাবিলায় বুধবার অতিসক্রিয় ছিল সেনা। তারাই পুলিশের আগে আগে গিয়ে দেহ লক্ষ্য করে গুলী করেছে বলে অভিযোগ। তাছাড়া, দিনভর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও-তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে বর্বরতার ছবি দেখা গেছে- তা এককথায় নৃশংস ও অমানবিক।
সেনাবাহিনীর এই বর্বরতায় জ্বলে উঠেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার গভীর রাতে ভিডিও বার্তায় তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামানের নাম না করলেও তাঁর বাহিনীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। বুধবারের সেনার অতি সক্রিয়তাকে তিনি ১৯৭১-এ পাক সেনার সন্ত্রাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, নির্বিচারে গুলী চালনা এবং আরও নানাভাবে সেনাবাহিনী যে অত্যাচার গোপালগঞ্জে করেছে, তা ১৯৭১ কেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জনতার বুকে গুলী চালিয়েছে। যা সমগ্র জাতিকে ক্ষুব্ধ ও হতবাক করেছে। সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, মুজিবর কন্যা শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জে সংঘটিত নারকীয় ঘটনার পর আওয়ামী লিগের সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি, একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদেরও এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের জনগণ সেই পথে হাঁটে কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *