জনজাতি কল্যাণে ঘুঘুর বাসা! পিএম আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা শুরুই হয়নি, খরচ ৫.৬১ কোটি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে রাজ্যের উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের বিরুদ্ধে। এবার প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনায় অর্থাৎ পিএমএএজিওয়াই প্রকল্পে বড়সড় অনিয়মের তথ্য সামনে এসেছে। জানা গেছে, ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ০৮ (আট) জন প্রজেক্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল ২০২৪-এর জুন মাসে। যা এখনও ত্রিপুরার উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে। ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারির পর ইতিমধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও, প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনায় ০৮ টি প্রজেক্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগের কোনো খবর নেই। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনায় ৫ কোটি ৬১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে প্রকল্পের নিয়োগ প্রক্রিয়াই এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি, সেই জায়গায় প্রকল্পের তৃণমূলস্তরে বাস্তবায়ন না হওয়াই স্বাভাবিক। এরপরেও উপজাতি কল্যাণ দপ্তর কীভাবে এবং কোথায় এত বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলো? প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল, জনজাতি এবং জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। চাহিদা এবং সম্ভাবনা অনুযায়ী গ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করা। যার মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি রয়েছে। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, টেলিকম সংযোগ প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও রয়েছে আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা প্রকল্পে।অভিযোগ, শুরুতেই এই প্রকল্পকে ডুবিয়ে দেওয়ার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে নিয়েছেন অধিকর্তা।এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ত্রিপুরার আট জেলার ৩৪৪টি গ্রামকে নির্বাচিত করা হয়েছে। চলতি মাসের ২৮ মে প্রজ্ঞা ভবনে ত্রিপুরার উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তার তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিবিরে জেলা কল্যাণ কর্মকর্তা, ব্লকের প্রতিনিধি, পিএফএমএস রাজ্য অধিদপ্তর এবং ব্যাঙ্ক কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে এই প্রকল্পের কার্যকর এবং সময়োপযোগী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একসাথে মিলেমিশে কাজ করার জন্য।
এদিকে,কেন্দ্রীয় সরকারের উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পোর্টালের তথ্য বলছে,কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরা সরকারের উপজাতি কল্যাণ দপ্তরকে ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ৬ কোটি ৩১ লক্ষ ৭৮ হাজার, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ৯ কোটি ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার এবং ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেছে।সবমিলিয়ে ১৫ কোটি ৩১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উক্ত প্রকল্পে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার পেয়ে গেছে। ওই প্রদেয় অর্থ থেকে ৫ কোটি ৬১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যয়ও হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় ওই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে? যে জায়গায় এখনও প্রকল্পের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি এবং তৃণমূলস্তরে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও এখনও শুরু হয়নি। সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, যে ৩৪৪টি গ্রামকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, সেই সব গ্রামের মানুষজন এই প্রধানমন্ত্রীর আদি আদর্শ গ্রাম যোজনার নামই শোনেননি। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা বাস্তবায়নের নামে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দের খরচ করা অর্থের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাতে পারছে না ত্রিপুরা উপজাতি কল্যাণ দপ্তর। ব্যয়িত অর্থের ইউসি না পাঠানোর ফলে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রকল্পে ত্রিপুরাকে কোনো অর্থ বরাদ্দ করেনি। উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধীনে টিআরইএসপি প্রকল্প নিয়ে যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, ঠিক একই কায়দায় প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনা প্রকল্পেও দুর্নীতিরও গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনার মতো একটি অতি মহৎ প্রকল্পও রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে।