ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- অন্যায় আবদার নিয়ে শিক্ষাঙ্গণে একদল ছাত্র ও বহিরাগত লোকজনের হাঙ্গামায় নৈরাজ্য কায়েম হয়েছে। রামঠাকুর কলেজের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীরা শুক্রবার উচ্চ শিক্ষা অধিকর্তার দপ্তরে ছুটে গিয়ে তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে এসেছেন। এর আগে পুলিশ যায় শিক্ষাঙ্গনে। এক ঘণ্টা ধরে বন্দি কলেজের প্রিন্সিপাল ও অন্যান্য শিক্ষকদের মুক্ত করে আনে।
এই শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ভর্তি নিয়ে রামঠাকুর কলেজে অভাবনীয় সব ঘটনা শুরু হয়েছে। অনৈতিকভাবে ছাত্র ভর্তির চেষ্টায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে কলেজের শিক্ষক, ভর্তি কমিটির প্রধান অভিজিত নাথ। একই অনৈতিকতায় বরখাস্ত হন শিক্ষক অর্জুন গোপ, তিনি অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে কলেজে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যে জল মিশিয়ে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরকে অবগত করিয়েছিলেন। শিক্ষক অভিজিত নাথ যতজন ছাত্রকে জাল ফি কার্ড ইস্যু করেছিলেন সেই ছাত্রছাত্রীর অঙ্কটি গোপ স্যার ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন রিপোর্টে। যা পরবর্তীতে অধ্যক্ষ কলেজে কাজে যোগ দিলে ধরা পড়ে এবং বাতিল হয়।
প্রসঙ্গত, সেই অঙ্কের ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ভর্তি আবদার নিয়েই এইদিন
২২/২৩ খানা ফি কার্ড।

অন্যদিকে যে সব ছাত্রছাত্রী নকল ফি কার্ড হাতে কলেজে এসে রুলকলে তাদের নাম লেখানোর দাবি জানিয়েছিল তারা জেরার মুখে জানায় তারা প্রত্যেকে কলেজ কাউন্সিলের দুই দাদার মাধ্যমে মাথা পিছু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তদন্তের এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে এবং এই পত্রিকার তদন্তমূলক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ শিক্ষা দপ্তর জুলাই মাসে অভিজিৎ নাথকে অনৈতিকভাবে ছাত্র ভর্তির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করে। যদিও এক পর্যায়ে কলেজের প্রভাবশালী এবং বর্তমান সরকারের অনুগামী কলেজ শিক্ষক সমিতির অন্যতম নেতা অর্জুন গোপ এবং আরও কয়েকজন চেয়েছিলেন, ‘আত্মীয়স্বজন কোটা’ হিসেবে এই ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ভর্তি করে নেওয়া হোক। জাল ফি কার্ড নিয়ে বেশি কথা না বলার হুলিয়াও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক শিক্ষিকা তা মানেননি।

শুক্রবার কিছু লোক কলেজ অধ্যক্ষার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান এবং তারা নিজেদের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র সূর্যমণিনগর, কমলাসাগর এবং বড়দোয়ালীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। বস্তুত তারা ছিল কলেজেরই একাংশ ছাত্র এবং কলেজ পোশাক পরা। সঙ্গে কলেজের কিছু পাস আউট কিংবা কলেজের চৌহদ্দিতে কোনদিন পা দেয়নি এমন কিছু লোকও ছিল দলে। ২০ থেকে ২৫ জনের এই দলটির একটি দাবি, জাল ফি কার্ডধারীদের ক্লাসে নিতে হবে। অধ্যক্ষা জানান, নিয়মমতো ভর্তি চলবে। অপেক্ষমান তালিকায় যারা ভালো নম্বর নিয়ে আছে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে। স্বভাবতই এই নিয়ে তুমুল পরিস্থিতি দেখা দেয়। অধ্যক্ষার কক্ষে জনা দশ শিক্ষক সহ সবাইকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভকারীরা বাইরে থেকে স্লোগান দিতে থাকে ও ছাত্র ভর্তির দাবি জানায়। সিনিয়র শিক্ষকদের নাম ধরে জুতোপেটা করা সহ অশ-লীল গালাগাল দেওয়া চলতে থাকে। প্রায় এক ঘণ্টা চলে এই নৈরাজ্য। এক সময় দরজায় লাথি পড়তে থাকলে পুলিশ ডাকা হয়। পুলিশ এসে শিক্ষকদের মুক্ত করে। এই ধরনের হৈ হুল্লোড়ে অসুস্থ হয়ে যান এক শিক্ষিকা। পরে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল উচ্চ শিক্ষা অধিকর্তার ঘরে গিয়ে পরিস্থিতি জানান এবং তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে এসেছেন। রাতে প্রতিবেদন লেখা অবধি এই ঘটনায় পুলিশে মামলা হয়নি।