চিকিৎসকরা মানবিক হোন!!

বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে বর্তমান সময়ে এবং প্রতিনিয়ত আরও উন্নতির জন্য গবেষণা চলছে নিরন্তর। বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির দুনিয়া বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা না পেয়ে কারো তিল তিল করে মৃত্যু আমাদের সমাজের ক্ষেত্রে এক বড় অভিশাপ। তেমনি এক অভিশপ্ত ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি আমাদের রাজ্যে। যা গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নয় বছরের একটি ফুটফুটে শিশু তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। কিছুক্ষণ আগে সে ভাত খাবে বলেছিল মাকে। কিন্তু নয় বছরের ফুটফুটে কন্যাসন্তানটির আর ভাত খাওয়া হয়ে উঠেনি। এক বিষধর তাকে কেটেছিল ঘরের মধ্যে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির সময়ও চিকিৎসক তার রোগ ধরতে পারেনি। তার চিকিৎসা হয়নি বললেই চলে। ফলে ফুটফুটে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। প্রায় বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলা যায়। এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে আঙুল উঠেছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসকের দিকে। সম্প্রতি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। পরিবারের তরফে চিকিৎসা গাফিলতিতে চিকিৎসক কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ জেলার শান্তিরবাজারের বাইখোড়ায়।
এক রাতে একরত্তি মেয়েটিকে কিছু একটা বিষধর কেটেছিল বাড়িতে। তাকে নিয়ে আসা হয় বাইখোড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে দেন এবং তাতে রক্ত পরীক্ষার কথা বলেন। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা সেই হাসপাতালে নেই। তাকে কয়েকটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময় রোগীর পরিবার রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যায়। চিকিৎসক সাপ কেটেছে ধরে নিয়ে শিশুটির শরীরে অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দেননি। বাড়িতে যাওয়ার পর শিশুটির অবস্থার আরও অবনতি হয়। ফের তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে শান্তিরবাজারে রেফার করা হয়। পরবর্তীতে জিবি হাসপাতালে রেফার করা হয়। পথেই তার মৃত্যু হয়। বর্তমান সময়ে শিশুটির এই মৃত্যু কি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় না যে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা কী হালে চলছে? এতো চিকিৎসক, এতো স্বাস্থ্যকর্মী, এতো ঝাঁ চকচকে বিল্ডিং, এতো অ্যাম্বুলেন্স কত কী। আদলতে সব সোনার পাথরবাটি যে!
সম্ভবত নয় বছরের শিশুটিকে সাপেই কেটেছিল। অন্ধকারে দেখেনি তাই হয়তো শিশুটি বলতেও পারেনি। চিকিৎসকের কাছে তো হাজারো অজুহাত রয়েছে। একজন চিকিৎসকের কাছে যখন কোন রৌীগ যান তখন রোগী কিন্তু মনে করেন যে তিনি পৃথিবীর সবচেয় বড় লেমেন। কেননা রোগী তখন নিজেকে চিকিৎসকের কাছেই পুরোপুরি সঁপে দেন।রোগীর ভালো-মন্দ চিকিৎসক ছাড়া আর কে বুঝবেন? আর এই সুযোগে একাংশ চিকিৎসক রোগীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করেন, অবহেলা করেন, তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হন অনেক সময় রোগী এবং তার পরিবার। যদিও চিকিৎসকরা এটা মানবেন না ঠিক কিন্তু অনেক সময় এরকম ঘটনা ঘটেই থাকে। বাইখোড়ার ঘটনায় চিকিৎসক শুধু তার দায়িত্ব পালন করেছেন, একটি প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছেন, তার মধ্যে কোন মানবিকতা ছিল না। মানবিক হলে তিনি রোগীকে বাড়ি পাঠাতেন না। সেখানে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি রোগীকে পাঠাতে পারতেন শান্তিরবাজার। অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দিতে দেরি হওয়ায় রোগীর সারা শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি।
আধুনিক যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সাফল্যের ঢাক যখন আমরা পেটাই সেই সময় ফুটফুটে একটি নয় বছরের শিশুর কেবলমাত্র একটি অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশনের অভাবে মৃত্যু এটা কোনমতেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি সত্যিকার অর্থে বেদনার, এটি মেনে নেওয়া কঠিন। যে বাবা মার কোল খালি হয়েছে তারাই কেবলমাত্র বুঝতে পারবেন সন্তান হারানোর ব্যথা, যন্ত্রণা। চিকিৎসক তো প্রেসক্রিপশন লিখেই খালাস। তার কাছে রোগী মানেই কেবলমাত্র রোগী। একজন চিকিৎসকের কাছে সমাজের অনেক চাহিদা। কিন্তু চিকিৎসকরা যে আজকাল বড্ড বেশি পেশাদার হয়ে গেছেন। মানবিকতা তাদের কাছে পুরোপুরি লোপ পেয়ে গেছে। সুতরাং একটি ফুটফুটে শিশুসন্তান শুধুমাত্র একটি অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশনের কারণে পৃথিবী থেকে চলে গেলেও চিকিৎসকদের যেন কিছুই আসে যায় না। সমাজও যেন অনেকটা ভাবলেশহীন। আর পাঁচটা ঘটনার মতো এই ঘটনাটিও মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু বর্তমান সময়ে এ ধরনের মৃত্যু কোনমতেই কাম্য নয়। চিকিৎসকদের আরও মানবিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। চিকিৎসকদের মানবিকতা যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে তাদের যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।