October 29, 2025

গৌরীসেনের টাকা!

 গৌরীসেনের টাকা!

জীবনের আর্থিক নিরাপত্তাকে সবসময়ই প্রাধান্য দেয় মানুষ। বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা তাদের কষ্টার্জিত ধন/অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে জমা করে, সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের জন্য। এরকমই দেশের দীর্ঘদিনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হলো ভারতীয় জীবন বিমা নিগম। ভারতের কোটি কোটি জনগণ এই নিগমে তাদের কষ্ট করে রোজগারের টাকা সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের লক্ষ্যে। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়ের পর মানুষ কিছু অর্থ পেয়ে তার একদিকে যেমন ভবিষ্যৎ গড়ে অন্যদিকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও কিছু রেখে যায়। এভাবেই জীবন বিমা নিগমের প্রতিপত্তিও বাড়তে থাকে, তেমনি সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা কিছুটা বেঁচেবর্তে আছে। সেই টাকা যদি বেসরকারী কোনও সংস্থায় লগ্নি হয়ে যায় এবং তাও যদি সরকারী চাপে তাহলে সাধারণ মানুষ কী শঙ্কায় পড়বে না! সম্প্রতি এরকমই এক খবর প্রকাশ্যে এসেছে যে, জীবন বিমা নিগমের বিপুল পরিমাণ অর্থরাশি ভারতের এক শিল্পপতির সংস্থায় লগ্নি করা হয়েছে। এই পুঁজিপতি সংস্থা আবার কেন্দ্রের শাসকদলের বেজায় ঘনিষ্ঠ। খবরে প্রকাশ পেয়েছে, কেন্দ্রের শাসক গোষ্ঠীর চাপেই এলআইসির মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মোদি ঘনিষ্ঠ আদানীর সংস্থাকে ঋণ দিতে বাধ্য হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বহুল প্রচারিত খবরের কাগজ ওয়াশিংটন পোস্ট সম্প্রতি এ মর্মে একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। এতে লেখা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদানী গোষ্ঠী ঘুষকাণ্ডে ফেঁসে যাবার পর এর থেকে উতরাতেই বিপুল অঙ্কের লগ্নি নিয়েছে এলআইসি থেকে। এবং কেন্দ্রীয় সরকার চাপ দেওয়াতেই এলআইসি তা আদানী গোষ্ঠীকে দিতে বাধ্য হয়েছে। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে একেবারে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এর আগেও এসবিআইর বিরুদ্ধে আদানীর সংস্থায় টাকা খাটানোর অভিযোগ উঠেছে। দুই বছর আগে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াও আদানীর সংস্থায় ৫২৫ কোটি টাকা লগ্নি করেছিল বলে শোরগোল পড়ে গেছিল।সেবারও এর তথ্য দাবি করেছিলো বিরোধীরা।
এদিকে সাম্প্রতিক এলআইসির প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা লগ্নির বিষয়টি মার্কিন সংবাদপত্র ফাঁস করে দেওয়ায় চাপে পড়ে যায় এলআইসি। কংগ্রেস এই বিষয়টি লুফে নিয়ে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি দিয়ে তদন্তের দাবি করেছে। যদিও এলআইসি চাপে পড়ে জানিয়েছে, তারা কারো চাপে আদানী গোষ্ঠীর সংস্থায় লগ্নি করেনি। তারা ভেবেচিন্তে সততার সাথে এই লগ্নি করেছে। তবে এলআইসি লগ্নির বিষয়টি অস্বীকার করেনি। প্রশ্ন উঠেছে, এই বিপুল লগ্নির পেছনে আসল রহস্য কী? কেন জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ মোদি ঘনিষ্ঠ আদানীর সংস্থায় লগ্নি করতে গেলো এলআইসি। এলআইসি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা। মানুষ এতে টাকা সঞ্চয় করে ভরসা করেই নিজের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে। কিন্তু এলআইসি এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি এক লহমায় আদানীর কোম্পানিকে সঁপে দিল! এর আগেও এরকম স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বিজয় মালিয়ার মতো এক সময়ের ভারতীয় ধনকুবের। এই সমস্ত টাকা সাধারণ মানুষের। এই টাকা ফেরত আনার কি কোনও চেষ্টা হয়েছে? না সরকারী তরফে, না স্টেট ব্যাঙ্কের তরফে, কোনও চেষ্টা নেই এযাবৎ।
এবার এলআইসির এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি যে করা হয়েছে আদানী গোষ্ঠীর সংস্থায় তা যে জলে যাবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? এই অর্থও সাধারণ মানুষের।
কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিকে বাঁচাতে মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লগ্নি করা হয়েছে কেন? এটা কি বিশ্বাসভঙ্গ নয়? এটা কি লুট নয়? কাদের চাপে পড়ে এলআইসি একটি বেসরকারী সংস্থাকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে। শেয়ার বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি এলআইসির এই কাণ্ডকারখানায় এলআইসির শেয়ার পর্যন্ত পড়ে গেছে।
ভবিষ্যতে যে শেয়ার আরও পড়বে না এর গ্যারান্টি কোথায়? আদানী গোষ্ঠীতে লগ্নি করার পর সেই টাকা যে এলআইসি ফেরত পাবে এবং পেলেও কবে পাবে এর গ্যারান্টি কোথায়? আর তখন সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? সুতরাং সাধারণ মানুষের সাথে যে খেলা হচ্ছে তা আরও একবার স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *