August 2, 2025

গুয়াহাটিতে রতন লালের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ,বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে দিলেন আর্থিক সুরক্ষা!!

 গুয়াহাটিতে রতন লালের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ,বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে দিলেন আর্থিক সুরক্ষা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ খাতের ইতিহাসে ১৮ জুলাই ২০২৫ ইং তারিখটি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ দিন গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শক্তি কমিটির ২৯ তম বৈঠক। বৈঠকে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ তাঁর দূরদৃষ্টি, তথ্যনির্ভর যুক্তি ও দৃঢ় অবস্থানের মাধ্যমে শুধু ত্রিপুরা নয়, বরং গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে এক বিশাল আর্থিক বোঝা থেকে রক্ষা করলেন। এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের প্রাক্কালে টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে ওটিপিসি-র পালাটানা গ্যাস বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আরও বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব আসে।প্রস্তাবটি কার্যকর হলে শুধু ত্রিপুরা নয়, অসম,মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উপর পড়ত বিশাল আর্থিক চাপ।এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সোজাসুজি ও জোরালো অবস্থান নেন ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, এই প্রস্তাব জনস্বার্থ বিরোধী। কোটি কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা জনগণের কাঁধে চাপানোর কোনও ন্যায্যতা নেই। তাঁর এই বলিষ্ঠ বক্তব্য ও যুক্তি নিষ্ঠ উপস্থাপনার ফলে, প্রস্তাবটি বাতিল করতে বাধ্য হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শক্তি কমিটি। এই বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব উদয়ন সিনহা, ত্রিপরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু, এবং বিদ্যুৎ পরিবহণ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মণ। তাঁদের সক্রিয় সহযোগিতায় ত্রিপুরার পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা, প্রতিরোধ এবং কৌশলগত বক্তব্য পেশ করা হয়, তা পুরো সম্মেলনের গতি পরিবর্তন করে দেয়।


সভায় কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের পক্ষে থেকে আরেকটি প্রস্তাব আসে যে, প্রয়োজনে লাগুক বা না লাগুক, কম করেও অতিরিক্ত ৩০ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করে রাখতে হবে রাজ্যগুলোকে। এক্ষেত্রেও মন্ত্রী রতন লাল নাথ ফের একবার যুক্তির নিরিখে দাঁড়িয়ে বলেন, এই ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবে অপ্রয়োজনীয়। এতে কোটি কোটি টাকা একেবারে জলে যাবে। এছাড়া এই বিদ্যুৎ এর অর্থ কোথা থেকে আসবে? এর ফলে গ্রাহকদের উপর চাপ বাড়বে। গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী নাথের কার্যকর যুক্তির ফলে এই প্রস্তাবও স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় কমিটি। এ দুটি প্রস্তাব বাতিল হওয়ায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির বিদ্যুৎ খাতে প্রায় শত কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় রোধ হলো। শুধু তাই নয়, সাধারণ গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ পড়া থেকে রক্ষা পাওয়া গেল।
গুয়াহাটির সভায় শুধু প্রতিরোধ নয়, ত্রিপুরা বিদ্যুৎ খাতে গত কয়েক বছরে অর্জিত সাফল্য এবং আগামী দিনের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনাও তুলে ধরেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতল নাল নাথ। তিনি জানান- বর্তমানে ত্রিপুরা ২৬ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ৪৫,০০০ সৌর রাস্তার আলো, ৪৯০০ সৌরচালিত পাম্প, ২১৫ টি সৌর মাইক্রো গ্রিড, ৩ মেগাওয়াট ছাদ সৌর প্যানেল, ২ মেগাওয়াট অফ-গ্রিড সৌর ইউনিট স্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর মুফত বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্পকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, মডেল সৌর গ্রাম এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গ্রামীণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় এক নতুন পরিবর্তন এসেছে। মন্ত্রী জানান, বর্তমানে ত্রিপুরায় এনএইচপিসি-র সহায়তার ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্পে কাজ এগোচ্ছে। যা দিনে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পর সেটিকে সংরক্ষণ করে রাতে ব্যবহারের ব্যবস্থা করবে। এর ফলে দেশের নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। তিনি আরও বলেন, One Sun, One World, One Grid’ এর লক্ষ্যপূরণে ত্রিপুরা আন্তঃদেশীয় বিদ্যুৎ রপ্তানীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিদুৎ বিনিময়ের জন্য আন্তঃরাজ্য গ্রিডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।


ত্রিপুরা বিদ্যুৎ পরিকাঠামো আধুনিকীকরণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্টে ব্যাঙ্কের সঙ্গে ২,২৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রোখিয়া ও গোমতী জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ। স্মার্ট মিটারিং। ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সংযোগ। আধুনিক ট্রান্সফরমার পরীক্ষাগার নির্মাণ। আরএম ইউ, সার্জ অ্যারেস্টর, ড্রোন নজরদারি, লাইভ লাইনে রক্ষণাবেক্ষণ, আগরতলায় ওভারহেড লাইন সরিয়ে ভূগর্ভস্থ সংযোগ সহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্র। এছাড়াও, ত্রিপুরার স্টেট লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার এবার ISO/IEC 27001:2013 সনদ অর্জন করেছে। যা বিদ্যুৎ খাতে সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত। গুয়াহাটির এই শক্তি সম্মেলনে রতন লাল নাথের তথ্যনিষ্ঠ উপস্থাপনা ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রশংসা করেন অন্যান্য রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীরাও। তাঁর নেতৃত্বে ত্রিপুরা যেভাবে বিদ্যুৎ খাতে নির্ভরতা থেকে আত্মনির্ভরতার পথে এগোচ্ছে, তা এখন পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি ‘রোড মডেল’।
মন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে আমরা শুধু নিজেদের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করছি না, বরং রপ্তানির প্রস্তুতিও নিচ্ছি। আমরা চাই স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও স্থিতিশীলতা ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ প্রস্তুত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণ করলো বলা যায়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ও বাজার চালিত চাপের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে এক বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হয়ে উঠলেন রতন লাল নাথ। তাঁর নেতৃত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তবসম্মত কৌশলই আজ ত্রিপুরাকে বিদ্যুৎ ঘাটতির দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত করে একটি নবায়নযোগ্য, আত্মনির্ভর ও ভবিষ্যৎমুখী রাজ্য হিসেবে জাতীয় মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *