ছাত্র ভর্তির অনৈতিক দাবিতে উত্তাল কলেজ,শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ, অশ্লীল গালাগাল!!
গুরু-শিষ্য পরম্পরার এক অপূর্ব নজির গড়লেন রতনলাল নাথ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- গুরু মানে কী?খুব সহজভাবে বললে,গুরু মানে পথপ্রদর্শক।যিনি তাঁর শিষ্য বা অনুগামীদের আলোর পথ দেখান। গুরু মানে এমন একজন, যিনি জীবনের যেকোনো সময়ে এবং পরিস্থিতিতে সঠিক নির্দেশনা দেন। তিনি স্কুলের শিক্ষক হোন কিংবা আধ্যাত্মিকতায় দক্ষ হোন। শিষ্যদের অগ্রগতিতে সবসময় সহায়তা করা, সঠিক পরামর্শ করা এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ে তোলাই হচ্ছে একজন গুরুর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। অপরদিকে, একজন প্রকৃত শিষ্য হলেন তিনি, যিনি গুরুর শিক্ষার সমস্ত কিছু অত্যন্ত নম্রতা এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন এবং জীবনকে বিকশিত করেন। গুরু ছাড়া জাগতিক জ্ঞান বা আধ্যাত্মিক অর্জন কোনোটাই সম্ভব নয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ও পরম্পরা চিরন্তন। তাই গুরু-শিষ্যের মিলনও অত্যন্ত সুখকর। গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে এমনই এক সুখকর মুহূর্তের সাক্ষী হলেন মোহনপুরবাসী। শুক্রবার দুই প্রজন্মের অর্থাৎ গুরু-শিষ্যের মিলনের আবেগে ভাসলো মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অভিভাবকরা। গুরুকে পাশে বসিয়ে গুরুপূর্ণিমায় আবার যেন নতুনভাবে দীক্ষিত হলেন শিষ্য। এখানে শিষ্য রাজ্যের কৃষি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতনলাল নাথ। শুক্রবার নিজের গাড়িতে করে শৈশবের শিক্ষক নিতাই আচার্যকে নিয়ে এলেন সেই বিদ্যালয়ে, যেখানে আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে শিশু রতন লাল প্রথম স্কুলের গন্ডিতে পা দিয়েছিলেন মায়ের হাত ধরে। আর গুরু হলেন নিতাই আচার্য, যিনি তাঁর শিক্ষকতার মহান কর্মটি এই স্কুল থেকেই শুরু করেছিলেন। যার হাত ধরে শিক্ষায় আলোকিত হয়েছিলেন আজকের রতনলাল।

আজ সকাল থেকেই মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিলো অন্যরকম। ঘোষকের মুখে হঠাৎ যখন শোনা গেল “স্যারের স্যার আসছেন” তখন পরিবেশটায় যেন এক বিশেষভাবে লাগা মুহূর্ত তৈরি হয়। গুরু তথা শিক্ষক নিতাই আচার্যকে নিয়ে যখন শিষ্য তথা ছাত্র রতন লাল নাথ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেন, তখন চতুর্দিকে যেন আনন্দধ্বনি বেজে ওঠে। মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা সাক্ষী হয়ে রইল এক অপার সৌন্দর্যের। প্রিয় স্যারকে কাছে পেয়ে ছাত্র রতন যেন ফিরে গেলেন তাঁর শৈশবের পাঠশালায়।মন্ত্রী রতনলাল নাথ প্রিয় শিক্ষকের পা ধরে প্রণাম করে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে নতুন বার্তা দিলেন। বললেন, শিক্ষকের কাছে নত হতে শিখো। তাহলেই জীবনে উঁচু হতে পারবে। মন্ত্রীর বক্তব্য এবং মন্ত্রীর প্রিয় শিক্ষকের বক্তব্য যখন চলছিল, তখন গোটা অনুষ্ঠান মঞ্চ যেন নিঃশব্দ রজনীর মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক অভিভাবক আপন মনে শুনছিলেন গুরুশিষ্যের আবেগ তাড়িত হৃদয় তানপুরার সুর। মন্ত্রী রতনলাল নাথ এদিন গুরু তথা শিক্ষকের জ্ঞানদান থেকে শুরু করে শাসন, আদর সবকিছুর বর্ণনায় নিজেকে ভাসিয়ে দিলেন। এক অদ্ভুত নৈঃশব্দে ভরা আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হলো অনুষ্ঠানে। একসাথে গুরু-শিষ্য মঞ্চে বসে ধুলোমাখা পুরনো দিনের স্মৃতিজড়িত বইয়ের পাতাগুলি যেন একে একে খুলে ধরলেন আগামী প্রজন্মের সামনে। গুরু-শিষ্য তথা শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কের মধ্যে যে সেতুবন্ধন রয়েছে, তা বারবার উঠে আসে তাদের বক্তব্যে। বুঝিয়ে দিলেন বারবার বক্তব্যের শব্দ ব্যবহারে। রতন নাথ বলেন, একবার স্কুলে

শরীর খারাপ করায় বেঞ্চে বসেছিলেন। সেই সময় সব ছাত্রছাত্রীরা চলে গেলেও শিক্ষক তাকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন। তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বললেন, শিক্ষকদের শুধু প্রণাম বলতাম না। শিক্ষকদের পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিতাম। মাথা উঁচু করে নিজের সম্মান যেরকম বাড়ানো যায়, তেমনি শিক্ষকদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেও নিজের উচ্চতাকে বৃদ্ধি করা যায়। পিতা-মাতাকে শ্রদ্ধা করার পাশাপাশি শিক্ষককেও অগাধ শ্রদ্ধা করা উচিত। তিনি বলেন, শিক্ষক নিতাই আচার্যের মতো আচার্যরা আমার মতো শিষ্যের উপর হাত রাখায় আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি। মন্ত্রী বলেন, এই মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে স্যার প্রথম শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে এসেছিলেন। তাই গতকাল স্যারের বাড়িতে গিয়ে প্রণাম করে, স্যারকে বলেছিলাম আপনার সেই ছাত্র গড়ার প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে চাই। আজ সেই শিক্ষক এবং তাঁর সহধর্মিণী ও কন্যাকে নিয়ে সন্তান যে রকম বৃদ্ধ পিতাকে নতুন ঘর নির্মাণ দেখায়, সেভাবে গোটা স্কুলের পরিবর্তনের রূপ দেখালেন। একসময় যে শিক্ষককে দেখে একটা শ্রদ্ধাজড়িত ভয় ছিল, আজ যেন এই শিক্ষক হয়ে উঠলেন মন্ত্রীর একেবারে আপন হৃদয়ের লোক। এদিন মন্ত্রীর বক্তব্যে বারবার একটা আবেদন ওঠে আসে, পিতা-মাতার পাশাপাশি শিক্ষককে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী হৃদয়ের শ্রদ্ধার বিনি সুতায় বাঁধবার জন্য। অপরদিকে শিক্ষক নিতাই আচার্য হারিয়ে গেলেন স্মৃতির সারণিতে। তুলে ধরলেন বাঁশ এবং টিনের ছাউনিতে থাকা সেই ইতিহাসের সাক্ষী পুরনো মোহনপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের কথা। ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে পাঠদান, শাসন এবং আদর করতেন তার আবেগতাড়িত কন্ঠে শোনা গেল সেইসব দিনের কথা। তিনি উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের বললেন, কখনো মা বাবাকে ফাঁকি দেবে না। মিথ্যের আশ্রয় নেবে না এবং শিক্ষকদের সম্মান করবে। কেননা তারা তোমার জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। এদিন নিজের শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতার ধারাপাত থেকে
কিছু অংশ তুলে শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, স্কুলে ভালো ছাত্র থাকবে। তবে পেছনের সারিতে থাকা সেই ছাত্রদের আরও বেশি ভালোবেসে শিক্ষাদান করতে হবে। এই অনুষ্ঠানে আরেক ছাত্র জ্যোতির্ময় ভৌমিক তথা এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক জ্যোতির্ময় ভৌমিক এবং শিক্ষক বিষ্ণুপদ গোস্বামী সহ স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন। তিনিও এদিন বক্তব্যে আবেগের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে বলেন, প্রতিমাকে প্রাণদান যেরকমভাবে পুরোহিতরা করেন, তেমনি উচ্চশুদ্ধ মনের পথে ধাবিত করেন শিক্ষকরা। এদিনের অনুষ্ঠান গোটা মোহনপুরবাসীর কাছে এক ইতিহাস রচনা করলো।
