দ্বিতীয় উড়ালপুল, টেকনিক্যাল বিড স্ক্রুটিনি চলছে শীঘ্রই খুলবে ফিনান্সিয়াল বিড!!
গণতন্ত্রের পোড়ামাটি!!
গণতন্ত্রে ক্ষমতা কোনো দল বা ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। জনগণের দেওয়া ম্যান্ডেট মানে দায়িত্ব, শপথ- ধ- এই রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া, সমান মর্যাদায় দেখা এবং সংবিধানের আত্মাকে রক্ষা করা। কিন্তু যখন সেই দায়িত্ব পালন না করে সরকার নীরব দর্শকে পরিণত হয়, তখন সেটাই হয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি ঠিক সেই অশুভইঙ্গিতই দিয়েছে – ত্রিপুরার রাজপথে যেন দেখা গেল সভ্যতার মুখোশ ছিঁড়ে পড়েছে।
ত্রিপুরা একদিন পরিচিত ছিল শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের রাজ্য হিসাবে যেখানে পাহাড়ি ও বাঙালি, হিন্দু ও খ্রিস্টান, সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক সাথে বাস করেছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের ‘ত্রিপুরা বন্ধ’ সেই ঐতিহ্যে রক্তের দাগ টেনে দিল। এনজিওর আড়ালে রাজনীতির মঞ্চ সাজিয়ে ‘সিভিল সোসাইটি’ নামের এক সংগঠনের নেতৃত্বে বিজেপি সরকারের শরিক দলের ডাকা বন্ধের আড়ালে যে ভয়াবহ সহিংসতা, দোকান পুড়িয়ে দেওয়া, গাড়িতে আগুন লাগানো এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রক্তাক্ত করা হল- তা কেবল একটি আন্দোলনের ব্যর্থতা নয়, বরং শাসনের সম্পূর্ণ পতন।

রাজধানী আগরতলার রাস্তায় সকাল থেকেই উন্মত্ত শ্লোগান,সংবিধানবিরোধী ভাষা ও সাধারণ মানুষের উপর ভয় দেখানোর রাজনীতি – সবই চলছে পুলিশের চোখের সামনে। প্রশাসন নিঃশব্দে দেখেছে, কীভাবে অল্প কিছু উগ্র নেতা জনগণের মঞ্চ দখল করে রাজ্যকে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করেছে। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ নির্বিকার, তখন তা নৈরাজ্যের অনুমোদন হিসাবেই গণ্য হয়।
কমলপুরে যা ঘটল, তা ত্রিপুরার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। বিডিও অভিজিৎ মজুমদার, ইঞ্জিনীয়ার অনিমেষ সাহা, এসডিপিও সমুদ্র দেববর্মা এদের উপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়েছে, রক্তাক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও সাধারণ ব্যবসায়ী। দোকানে হামলা, অগ্নিকাণ্ড, সন্ত্রাস বাদ যায়নি কিছুই। লুণ্ঠিত হয়েছে তাদের সর্বস্ব। সরকারী অফিসার, আরক্ষা কর্মকর্তারা যারা আক্রান্ত হয়েছেন, এরা শুধু সরকারী কর্মকতা নন, এরা রাষ্ট্রের প্রতীক। রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের উপর আক্রমণ মানে গণতন্ত্রের বুকের উপর লাথি মারা। এ লজ্জা ত্রিপুরার, এ ব্যর্থতা গোটা প্রশাসনের।
আরও ভয়াবহ হলো- এই সহিংসতার মাঝেও সরকারের নীরবতা। প্রধানমন্ত্রীর ‘শান্তির ত্রিপুরা’র স্বপ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর ‘উন্নয়নের ত্রিপুরা’র প্রতিশ্রুতি – সবই ম্লান হয়ে গেছে দুষ্কৃতীদের অট্টহাস্যে। যাদের হাতে আগুনের মশাল, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় যদি থাকে, তবে ত্রিপুরা আজ সত্যিই ভয়াবহ মোড়ে এসে তাঁড়িয়েছে।
মণিপুরের ক্ষত আজও শুকায়নি। সেই রাজ্যের রক্তক্ষরণ এখনও দেশের বিবকেকে কাঁপায়। অথচ মণিপুরের ট্র্যাজেডি থেকে কিছুই শিক্ষা নিল না প্রশাসন, না কেন্দ্রীয় সরকার। যদি এখনই রাজ্য ও কেন্দ্র সতর্ক না হয়, যদি ত্রিপুরার পাহাড় সমতল আবার বিভেদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তবে মণিপুরের পুনরাবৃত্তি আর কেবল আশঙ্কা থাকবে না- তা বাস্তব হয়ে উঠবে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার মানেই জনগণের সেবক। সরকার মানে নিরাপত্তা, সমতা, ন্যায়। কিন্তু যখন সরকার নিজেই নাগরিক সুরক্ষা দিতে অক্ষম হয়, তখন জনগণের হাতে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটে ভোটের মাধ্যমে, প্রতিবাদের মাধ্যমে। ইতিহাস তার সাক্ষী সরকার জনগণের কান্না শোনে না, সে সরকার টিকে থাকে না।যে
আজ তাই প্রশ্ন একটাই- ত্রিপুরা কি আবার শান্তির পথে ফিরবে, নাকি আগুনের খেলায় হারিয়ে ফেলবে নিজেকে?
স্মরণ রাখতে হবে- ত্রিপুরা পাহাড়ের নয়, দানবের রাজ্য নয়, ত্রিপুরা সৌভ্রাতৃত্বের মাটিতে দাঁড়ানো মানুষের রাজ্য। গণতান্ত্রিক সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা। কিন্তু যদি সেই সরকার হিংসার মুখে নির্বাক থাকে, ভেদাভেদের আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষদের পাশে না দাঁড়ায়, তবে সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ইতিহাস সাক্ষী – জনগণের রোষে এমন সরকার বারবার বিদায় নিয়েছে।
অতএব, সময় এসেছে দোষীদের কঠোর আইনি শাস্তি দেওয়ার,অরাজকতার উৎসে হাত দেওয়ার।কারণ, ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ রক্তে নয়, শান্তিতেই লেখা হোক।
