শক্তি সংরক্ষণে ফের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলো ত্রিপুরা!!
ক্ষমতা হস্তান্তরের জটে বিপত্তি ডিএমের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা!!
অনলাইন প্রতিনিধি :- প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তরে আমলাদের অনীহার ঘটনায় উত্তরজেলা শাসক চাঁদনী চন্দ্রন (আইএএস) সহ চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা হল। এই ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কদমতলা ব্লকের কালাগাঙ্গের পাড় পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক ক্ষমতা ঘিরে নয়া বিতর্ক মাথা তুলেছে। নির্বাচিত প্রধান মমতা বেগম এবং উপপ্রধান আব্দুল বাসিত দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত দপ্তরের গেজেট নোটিফিকেশন না পাওয়ায় যে প্রশাসনিক জটিলতার মুখে পড়েছেন শেষমেশ আদালত পর্যন্ত পৌছে গেল। হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর সাধারণত দ্রুত প্রশাসনিক অনুমোদন জারি হয় এবং নতুন নেতৃত্ব দাপ্তরিক কাজ শুরু করেন। কিন্তু কালাগাঙ্গের পাড় পঞ্চায়েত সেই নিয়মের বর্হিভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও গেজেট নোটিফিকেশন জারি না হওয়ায় দু’জনেই দীর্ঘদিন ধরে একটিও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে গোটা পঞ্চায়েতের চাকা কার্যত থেমে যায়। কালাগাঙ্গের পাড় পঞ্চায়েতের মোট ১২৩৫ টি পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৫৯৫৮ জন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পাণীয় জল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট মেরামতির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় নানা কাজ গেজেট নোটিফিকেশন না থাকায় ঝুলে থেকে যেতে থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অসহায়ভাবে শুধু দপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিলেন। এই অচলাবস্থার কারণে স্থানীয় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। এদিকে ডিপিও নর্থ, জেলা শাসক (নর্থ) মহকুমা শাসক ধর্মনগর এবং বিডিও কদমতলা- সব দপ্তরই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বারবার প্রশাসনিক ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। কিন্তু তাদের সেই দাবি মাসের পর মাস উপেক্ষিত থেকে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। গত আট অক্টোবর পরিস্থিতি বিস্ফোরণের মুখে পৌঁছে যায়। নির্বাচিত প্রধান ও উপপ্রধান সহ পঞ্চায়েত এলাকার মানুষেরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। প্রবল বিক্ষোভের মাঝে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ধর্মনগর মহকুমা শাসক। তিনি বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দেন সাত দিনের মধ্যে সরকারীভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে এবং সমস্যার সমাধান পথ খুঁজে বের করা হবে।
কিন্তু আশ্বাসের সেই সাতদিন কেটে গেলেও কোন সিদ্ধান্তই জানানো হয়নি। বরং দিন যত গড়িয়েছে প্রশাসনিক বিভ্রান্তি ততই গভীর হয়েছে। নির্বাচিত প্রধান মমতা বেগম এবং উপপ্রধান আব্দুল বাসিত প্রশাসনের নিরবতা ও উদাসীনতায় ক্ষুব্দ ও হতাশ হন। তাদের বক্তব্য গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও তাদের কাজ করতে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে যা সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন করছে।
শেষ পর্যন্ত আর কোন পথ না দেখে প্রধান এবং উপপ্রধান হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন। জেলা শাসক চাঁদনী চন্দ্রন, পঞ্চায়েত অধিকর্তা সহ চারজন সরকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে তারা একটি রিট পিটিশন জমা দেন। সেই আবেদনে তারা উল্লেখ করেন গেজেট নোটিফিকেশন না দেওয়া শুধু অবিচার নয় পঞ্চায়েত আইনের লঙ্ঘনও বটে। হাইকোর্টে মামলা দায়ের হতেই বিষয়টি প্রশাসনিক অন্দরে আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। সরকারী মহল, রাজনৈতিক মহল, এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকে। কেন এত দীর্ঘ সময় গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হলো না তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি। ফলে প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। এদিকে পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নের কাজ বন্ধ থাকায় তারা চরম সমস্যায় পড়ছে। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশিত লাইন পরিষ্কার, রাস্তাঘাট সংস্কার, সামাজিক ভাতা সংক্রান্ত ফাইল- কোন কিছুই এগোচ্ছে না। এখন হাইকোর্টের নির্দেশই নির্ধারন করবে পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ। প্রধান ও উপপ্রধানের অভিযোগ আদালতের সামনে খতিয়ে দেখা হবে। গ্রামবাসীরা আশাবাদী যে আদালতের হস্তক্ষেপে অন্তত দ্রুত সমাধান মিলবে। আদালতের হস্তক্ষেপই এখন একমাত্র ভরসা। সামগ্রিক ভাবে কালাগাঙ্গের পাড় পঞ্চায়তকে ঘিরে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের যে জট সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল একটি গ্রাম নয় সমগ্র জেলার শাসন ব্যবস্থার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নির্বাচনের পর জন প্রতিনিধিদের ক্ষমতা হস্তান্তর একটি মৌলিক শাসন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হলে জনগণের অধিকার ও উন্নয়নের গতি উভয়ই থমকে যায়। হাইকোর্টে মামলা দায়েরে পর পুরো ঘটনাকে ঘিরে যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে তা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।