ক্রস ভোটিংয়ের শঙ্কা!

উপরাষ্ট্রপতি পদে অকাল ভোট আগামী ৯ সেপ্টেম্বর।এবারে উপরাষ্ট্রপতি ভোট অন্যান্য বারের ভোটের চাইতে আলাদা। এর অন্য গুরুত্ব রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।কেনা গত ২১ জুলাই উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তাফা দেন জগদীপ ধনখড়।
তার মেয়াদ আরও তিন বছর ছিল। বলা হচ্ছে সরকারের সাথে একটি বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।ফলে উপরাষ্ট্রপতি পদে আকাল ভোট হচ্ছে। উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে এভাবে ইস্তফাও দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এবারের উপরাষ্ট্রপতি ভোট আরেকটি কারণেও গুরুত্বপূর্ণ কেনা এই ভোটে যে দুইজন প্রার্থী হয়েছেন তারা উভয়ই দক্ষিণ ভারতীয়। একজন তামিলনাড়ুর অপরজন অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের। সে নিরিখে দুই দক্ষিণ ভারতে লড়াইর এবারের উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে দেখার মতো বিষয়। যদিও সংখ্যার বিচারে এনডিএ প্রার্থী জয়ী হবার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তবে ইন্ডিয়া ব্লক এবার অনেক অঙ্ক কষে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। এতে শাসক এনডিএ’র চিন্তা বহুলাংশে বেড়ে গেছে, উল্লেখ্য, উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ’র প্রার্থী মহারাষ্ট্রের বর্তমান রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণান। তিনি তামিলনাডুর বিজেপি নেতা, সংঘ ঘনিষ্ঠ। অন্যদিকে ইন্ডিয়া ব্লকের উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। ফলে দুই দক্ষিণ ভারতীর লড়াইয়ে এবারের উপরাষ্ট্রপতি ভোট জমজমাট অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু এনডিএ’র ঘরে চিন্তার অন্যতম কারন হচ্ছে অন্ধ্রের চন্দ্রবাবু নাইডুর অবস্থান। কংগ্রেস চন্দ্রবাবুর ঘরে হানা দিয়েছে। বি-সুদর্শন রেড্ডির সাথ চন্দ্র বাবু নাইডুর সখ্যতা রয়েছে। চন্দ্রবাবু নাইডু আবার মোদি সরকারের অন্যতম শরিক ফলে চন্দ্রবাবু নাইডুর যে কারণে সাংসদ রয়েছে তাদের নিয়ে চিন্তার শেষ নেই এনডিএ শিবিরের। তাদের তাড়া করছে ক্রস ভোটিয়ের এর চিন্তা। উল্টোদিকে, ইন্ডিয়া শিবিরেও চিন্তা রয়েছে ক্রস ভোটিং-এর কেননা তামিলনাড়ুর বাসিন্দা রাধাকৃষ্ণন তা নিয়ে তামিল জ্যাতাভিমান উস্কে দিয়েছেন। ফলে ইন্ডিয়ার অন্যতম শরিক ডিএমকের ২/৪ জনত যদি ফসকে যান তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
তবে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে মোদি-শাহকে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডিকে নিয়ে।প্রার্থী হিসাবে ইন্ডিয়া ব্লকের দারুণ চয়েস সুদর্শন রেড্ডিড় তিনি অন্ধের জাত্যাভিমান উসকে দিয়েছেন। তাই এনডিএ শিবিরে চিন্তা তার পক্ষে না তেলেগুদেশম পার্টির ক্রশ ভোটিং হয়ে যায়।ইতিমধ্যেই দৌত্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী বেভন্ত রেড্ডি।তার মাধ্যমে কংগ্রেস যোগাযোগ রাখছে চন্দ্রবাবুর সাথে বলে খবর।
এই অবস্থায় মোদি-শাহ ঠিক করেছেন তিন দিন ধরে বৈঠকে করবেন। শরিক নেতাদের সাথে বৈঠক। এরপর সমস্ত সাংসদদের বৈঠক। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী ডিনার পার্টি দেবেন। সবাই ৯ সেপ্টেম্বরের প্রস্তুতি। একটি ভোটও যাতে অন্যত্র না পড়ে তার জন্যই এত এলাহি ব্যবস্থা।
ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেছেন চন্দ্রবাবুর পুত্র লোকেশের সাথে।লোকেশ অন্ধ্রপ্রদেশের মন্ত্রী। এককথায় সেকেণ্ড ইন কমান্ড। সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে। তাই সাংসদদের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং হুইপ জারির জন্য মোদি তার সাথে একপ্রস্থ বৈঠক করেন শুক্রবার। মোদিকে তাড়া করছে অন্ধ্রের অস্মিতা। সুদর্শন রেড্ডি যদি কিছু ভোট কেটে নেয় তাহলে মোদি-শাহের নাক কাটা যাবে। সেদিকে এবার বেজায় খেয়াল রাখা হচ্ছে। এনিডিএর জয় নিশ্চিত জেনেও মোদি-শাহ কোন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। যেমনটা হয়েছে সম্প্রতি কনস্টিটিউশন ক্লাবের নির্বাচনে। এই ক্লাবটি হল সাংসদদের একটি ক্লাব। এই নির্বাচনে বিজেপির সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুদি সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তিনি অমিত শাহের অফিসিয়াল প্রার্থী ছিলেন না। অমিত শাহ অন্য প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছিলেন সভাপতি পদে। কিন্তু ভোট কাটাকুটিতে অমিত শাহের প্রার্থী হেরে যান। শোনা যাচ্ছে। কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া ব্লকের সাংসদরা রাজীব প্রতাপ রুদিরিকে জেতাতে সাহায্য করেছেন। সুতরাং কনস্টিটিউশন ক্লাবের ভোটের মতো যাতে উপরাষ্ট্রপতি ভোটে ভোট কাটাকুটি না হয় তাই আগে থেকে সচেষ্ট এনডিএ শিবির। কিন্তু এরপরও কি নিশ্চিত মোদি শাহ?
সংখ্যার বিচারে এনডিএ’র জয় নিশ্চিত হলেও যদি, কিন্তু থেকেই যাচ্ছে উপরাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে। সুতরাং ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যের অপেক্ষা পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতির নাম জানার জন্য। এরই সাথে কোন্ শিবির কত ভোট পেলো সেদিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।