ক্রমেই শীর্ণ ইউনুস!!

 ক্রমেই শীর্ণ ইউনুস!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বাংলাদেশে নির্বাচন লইয়া ক্রমেই সংকটাপন্ন হইতে দেখা যাইতেছে ইউনুস সরকারকে।সরকারের সহিত সরাসরি বিএনপির বিরোধ এখন প্রকাশ্য।গত আগষ্টে দেশে পালাবদলের পর এই প্রথম দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইউনুস সরকারের প্রকাশ্য বিরোধে আসিয়া গেলো। ইস্যু একটাই যথাসম্ভব শীঘ্র নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করিয়া দেওয়া।এই দিকে সম্পর্কে যতই টানাপোড়েন চলিতে থাকুক, ইউনুস নিজেও বলিয়াছেন, ভারতের সহিত বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হইবার বা দূরত্ব বৃদ্ধির সূযোগ নাই। সেই ভারত এখন প্রত্যাশা করিতেছে, বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অন্তর্ভুক্তিমূলক জননির্বাচিত সরকার গঠিত হোক। আবার অন্যদিকে সেই দেশের সেনা প্রধানও মানবিক করিডর প্রদান প্রসঙ্গে জানাইয়া দিয়াছেন, অনেকগুলি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কেবল একটি নির্বাচিত সরকারই লইতে পারে। ফলে ঘরে ও বাইরে ইউনুস সরকারের উপর চাপ বাড়িতেছে।
সেই চাপের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়াছে ইদানীং তাহার পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। ইউনুস যে পদত্যাগ করিবেন না তাহা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বুঝা গিয়াছিল। তাহার উপদেষ্টামণ্ডলী এবং আগষ্ট আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ প্রায় সকলেই তাহাকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হইতে সরিয়া আসিতে অনুরোধ করিয়াছেন। বেশ কয়েক মাস ধরিয়া বিএনপি নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার জন্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করিতেছিল। ইহা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারে জুলাই আন্দোলনের দুই উপদেষ্টার উপস্থিতি লইয়া তাহাদের অসন্তোষ জানাইয়া আসছিল। বিএনপির প্রবীণ নেতারা কেহই চাহিতেছিলেন না যে, এতো তাড়াতাড়ি ইউনুস সরকারের সহিত কোনও বিরোধ তৈরি হইয়া যায়। তাহারা আপোষে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই কাজ চালাইতে চাহিয়াছিলেন।
স্থানীয় প্রশাসনের এক প্রশাসক নিযুক্তি লইয়া একটি বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রধান ইস্যু হইয়া উঠে।সেইখানেই বাদানুবাদে ইউনুস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন।যদিও ওই বৈঠকেই তাহাকে নিরস্ত করা হইয়াছে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত হইতে। জানা যায়, ওই বৈঠকে তিন পক্ষের অভিমত বেশি করিয়া সেইদিনের আলোচনায় আসে। সরকারপক্ষ,বিএনপি এবং এনসিপি। তাহার সঙ্গে যোগ হইয়াছিল সেনাপ্রধানের বক্তব্য।বলা হইতেছে ওই বৈঠকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইউনুস বিচলিত হইয়াই পদত্যাগ করিবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছেন। সংকট বাড়িতেছে দেখিতে পাইয়া সকল পক্ষ ফের আলোচনায় বসিয়া ইউনুসকে নিরস্ত করিলেও কেহই নিজ নিজ অবস্থান হইতে সরিয়া আসেন নাই। নিজ নিজ দাবি পুনর্ব্যক্ত করিয়াছেন। তবে সংকট আপাতত ধামাচাপা দিলেন।
সরকার পক্ষ সাংবাদিকদের নিকট ব্যক্ত করিয়াছেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস বলিয়াছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর দেশের অভ্যন্তরে ও বাহিরে একধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হইয়াছে। তাহারা বিভাজন সৃষ্টির যে প্রচেষ্টা চালাইয়াছে, তাহা আমরা কিছুতেই মানিয়া লইতে পারি না। অর্থাৎ সমস্যার মূল বিষয়গুলি এড়াইয়া গিয়াছে সরকার পক্ষ। বিএনপি বলিয়াছে, তাহারা অধ্যাপক ইউনুসের পদত্যাগ চাহেন নাই। শুধু নির্বাচনের তারিখ চাহিয়াছেন। সেনাপ্রধানের প্রস্তাবকে ইতিবাচক অভিহিত করিয়া বিএনপি জানাইয়াছিল, সেনাপ্রধান বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলিয়াছেন। বিএনপিও তাহাই বলিতেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বলিল, দ্রুত নির্বাচন হইলে স্বচ্ছ সুষ্ঠু হইবে না, নির্বাচন কলঙ্কে পরিণত হইবে। অর্থাৎ সকল পক্ষ নিজ নিজ আস্তানায় ফিরিয়া গিয়া নিজ অবস্থান হইতে পরবর্তী কর্মসূচি তৈয়ার করিতেছে।
ফলে ইউনুসের পদত্যাগের হুমকিকে কেহ বলিতেছেন,মাস্টার স্ট্রোক।কেহ বলিয়াছেন, অভিমান। তবে এই কথা সত্য ইউনুসের সরকারকে রক্ষা করিতে বিএনপি কসুর করে না। তাহারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহ্য করিতেছে পরবর্তী নির্বাচনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির খাতিরে। বিএনপির একটি উক্তি এই ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাহারা বলিয়াছেন, ড. ইউনুস না থাকিতে চাহিতে জনগণই ঠিক করিবে কে অস্থায়ী সরকার চালাইবে। এই কথার অন্তর্গত অর্থ – বিএনপি সরকারের উপর চাপ কমাইবে না। ইহাতে সরকার দিন দিন দুর্বল হইবে। ছাত্র আন্দোলনের রসদে গঠিত এনসিপির রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা কোনওভাবেই ইউনুস সরকারকে অক্সিজেন জোগাইতে পারিবে না। প্রশ্ন আসিতেছে, ইউনুস সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা লইয়াছিল যে বিএনপি তাহারা হঠাৎ করিয়া পুরাতন রাজনীতিতে ফিরিয়া যাইতেছে কেন? বিএনপির এই সময়ে অন্য সকল কার্যক্রম আলোচনার বাহিরে ফেলে ঠেলিয়া ফেলিয়া নির্বাচনকেই একমাত্র রুটিন করিয়া লইয়াছে। বিএনপি নেতারা বলিতেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিতে সেনাপ্রধান বক্তব্য রাখিলে সমস্যা কোথায়? সব মিলাইয়া পরিস্থিতি যে পথে আগাইতেছে তাহা বিএনপিকে যত উদ্দীপ্ত করিতেছে ততই ম্রিয়মান করিতেছে ইউনুস সরকারকে। এই রাজনৈতিক পর্যায়ে যথারীতি এনসিপি লাভবান হইতে পারে নাই এবং তাহাদের আত্মবিশ্বাস আঁচড়, হোঁচট খাইলো। অর্ধশতক প্রাচীন এক রাজনৈতিক দলের সহিত পাল্লা দেওয়া নবীনদের পক্ষে কখনও সহজ নহে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিয়াও পুরোপুরি তাহারা যে বিপদমুক্ত নহে তাহা তারা টের পাইলো। একমাত্র ইসলামি দলসমূহ এনসিপি ও সংস্কার ইস্যুতে সরকারের বক্তব্যগুলিকে কিছু সমর্থন দিয়াছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দূরত্ব কমাইবার উদ্যোগ লইয়া জামায়াতের নেতারা সেনাপ্রধানের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছেন। এইদিকে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলি এই দফায় আরও বেশি করিয়া বিএনপির ঘনিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে। এইদলগুলির নেতাদের জন্য তারেক রহমানের আগেভাগে মনোনয়ন আসন ছাড়িয়া দেওয়া একটা চৌকস রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলিয়া মনে করা হইতেছে। প্রসঙ্গত, নির্বাচন বিষয়ে সেনাপ্রধানের মতামত লইয়া দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল। ফলে আবারও বলিতে হয় বিএনপি এখন দারুণ উজ্জীবিত। তাহারা স্পষ্ট জয়ের সম্ভাবনা দেখিতেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.