December 13, 2025

কোটি টাকা হাতিয়ে পালাল টিআরজি চিটফান্ড সংস্থা!!

 কোটি টাকা হাতিয়ে পালাল টিআরজি চিটফান্ড সংস্থা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আবারো কয়েক কোটি টাকা আমানত নিয়ে পালাল অনলাইন সংস্থা। মঙ্গলবার বন্ধ হয়ে যায় টিআরজি নামের একটি অনলাইন সংস্থা। সংস্থাটির লিঙ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলে দেশজুড়ে হাজারো গ্রাহক সমস্যায় পড়ে। এর প্রভাব পড়ে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর মহকুমার এলাকাতেও। হঠাৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অর্থ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা কাঞ্চনপুরের রবীন্দ্রনগর এলাকায় টিআরজি সংস্থার স্থানীয় কর্মী রীনা রায়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ক্রমশ ভিড় বাড়তে থাকায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।খবর পেয়ে কাঞ্চনপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জনতার চাপে পড়ে পুলিশ ও সংস্থার স্থানীয় কর্মী রীনা রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। তবে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনও তথ্য মেলেনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় মঙ্গলবার কাঞ্চনপুর থেকে এই চেইন মার্কেটিং সংস্থা কয়েক হাজার মানুষের আমানত নিয়ে পালিয়ে গেছে। টিআরজি নামে এক ভুঁইফোঁড় অনলাইন চেইন মার্কেটিং সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষের সঞ্চিত আমানত মুহূর্তে ধুলোয় মিশে যাওয়ায় গোটা এলাকায় উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরে ‘টিআরজি’ নামের এই সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন গ্রামে শাখা খুলে দ্রুত লাভ, দ্বিগুণ ফেরত, মাত্র তিন মাসে অস্বাভাবিক মুনাফা- এই সব প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করে। এলাকার বহু শ্রমজীবী পরিবার, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, এমনকী চাকরিজীবী মানুষও লোভনীয় কথার ফাঁদে পড়ে তাদের সঞ্চয়ের বড় অংশ এই প্রতিষ্ঠানে জমা রাখে। প্রথম দিকে কিছু সামান্য ফেরত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা আরও আমানত টেনে নিত। ধীরে ধীরে যখন টাকার অঙ্ক কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যায় তখনই শুরু হয় প্রতারণার আসল খেলা। মঙ্গলবার হঠাৎই স্থানীয় অফিস বন্ধ পেয়ে মানুষ বুঝতে পারে কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। দরজায় তালা, ভেতরে কেউ নেই, ফোন নম্বর বন্ধ, ওয়েবসাইটও অচল। মুহূর্তেই ভিড় জমে যায় রবীন্দ্রনগরের এজেন্টের সামনে। ক্ষুব্ধ জমাকৃত গ্রাহকরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে কাঞ্চনপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তদন্তে নেমে পুলিশের পক্ষ থেকে স্থানীয় রীনা রায়কে হাতে-নাতে পাকড়াও করা হয়েছে। সে সংস্থাটির মধ্য-পর্যায়ের কর্মী বলে জানা গেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এই সংস্থাটি কোনও সরকারী অনুমোদন ছাড়াই চেইন মার্কেটিং-এর নামে অবৈধ পিরামিড স্কিম চালাচ্ছিল। কোনও পণ্য বা পরিষেবা না রেখেই শুধুমাত্র আমানত সংগ্রহ করে নতুন সদস্য তৈরি করাই ছিল তাদের ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি। এই ধরনের প্রকল্প ভারতীয় অর্থনৈতিক আইন অনুযায়ী অপরাধ। অভিযোগ প্রশাসনকে বহুবার সন্দেহজনক কার্যকলাপের কথা জানানো হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংস্থাটি দিনের পর দিন চোখের সামনে বাড়তে থেকেছে। আকর্ষণীয় প্রচারাভিযান, সেমিনার- সবকিছু করে জনসাধারণকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষিত যুবককেও এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ‘মোটিভেটর’ বানিয়ে গ্রামে গ্রামে পাঠানো হয়েছিল। এক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানিয়েছে তারা প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিল। আশা ছিল কয়েক মাসের মধ্যেই লাভ হবে। এখন সব শেষ। কেউ কেউ আবার ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছিল এখন তারা দিশাহারা। এলাকার পরিবেশ এখনও উত্তপ্ত। মানুষ ভিড় করছে দপ্তরে সবার একটি প্রশ্ন তাদের কষ্টার্জিত টাকা কি ফিরে পাওয়া যাবে? কাঞ্চনপুরের এই ঘটনা গোটা রাজ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মানুষ চাইছে দোষীদের কঠোরতম শাস্তি এবং আমানতদারদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত হোক। এখন শুধু অপেক্ষা – কখন ধরা পড়বে এই লোপাট ব্যবসার মূল কুশীলবরা ও সাধারণ মানুষের সঞ্চিত ঘামের টাকা আদৌ ফিরে মিলবে কিনা। এই বিষয়ে কাঞ্চনপুর থানার ওসি শ্রীকান্ত রুদ্রপালকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান এখনো পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের হয়নি। নিরাপত্তার জন্য টিআরজি অনলাইন চেইন মার্কেটিং সংস্থার এক মহিলা কর্মীকে থানায় আনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *