দেশি-বিদেশিদের উপচে পড়া ভিড়,আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জম্পুই!!
কৃষিক্ষেত্রে পেঁয়াজের চাষ রাজ্যে নয়া ইতিহাস: রতন!
অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। এ কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। কিন্তু এই স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিল লেম্বুছড়া স্থিত কৃষি কলেজের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।

আর রাজ্যের মাটিতে এই পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা কৃষিক্ষেত্রে নতুন ইতিহাসই সৃষ্টি করল না, তার সাথে বুঝিয়ে দিল দেশ ও রাজ্যের উন্নয়নে জাদুকরের ভূমিকা রয়েছে অন্নদাতা কৃষকরা। শুক্রবার ত্রিপুরা কৃষি কলেজের রবি পেঁয়াজ প্রকল্প ও কৃষকদের নিয়ে কর্মশালার উদ্বোধন করে উদ্বোধকের ভাষণে কৃষি কলেজ এবং কৃষকদের এইভাবে সম্বোধন করে কথাগুলি বলেন রাজ্যের কৃষি ও কষি কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ।

এদিন পেঁয়াজ চাষের সাফল্যে আনন্দিত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ কৃষিমন্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন। কষি কলেজের উদ্যোগে প্রগতিশীল কৃষকদের হাতে ৪০ কেজি পেঁয়াজের বীজ, স্প্রে মেশিন, জল ক্যান, কেঁচো সার এবং কীটনাশক ওষুধ সহ উপকরণ তুলে দেন মন্ত্রী। রাজ্যে পেঁয়াজ চাষে এত উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখে এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত আড়াইশো জন চাষীদের একজনকে মঞ্চে ডেকে এনে বসিয়ে কষিমন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন খাবার সময় এই অন্নদাতা কৃষকদের প্রতি একটু কৃতজ্ঞতা জানান। আজ যে অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে তার প্রধান ভরসা এই কৃষক। এর উন্নতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগে কেউ এভাবে ভাবেনি। একসময় কৃষকদের নিয়ে চিৎকার করা লোকরা কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন এবং কৃষি কাজে উৎসাহিত করার বিষয়ে ভাবেনি। যে কৃষকরা জমি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তারা আজ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা সহযোগিতা পুনরায় কৃষি ক্ষেত্রে ফিরে আসছে। রাজ্যে ৬৫ লক্ষ কানি ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ লক্ষ সতের হাজারের মতো কানিতে ফসল হয়। আর ধান চাষ হয় মাত্র পনের লক্ষ কানিতে। কৃষকদের অন্নদাতা ভগবান কেন বলেন। তার যুক্তিতে কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ৪২ লক্ষ ২২ হাজার লোক বসবাস করে। মাত্র চার লক্ষ ৭২ হাজার লোক কৃষি ফসল উৎপাদন করে আমাদের খাদ্যের জোগান দেয়। তারা বন্ধ করে দিলে আমাদের জীবন অন্ধকার হয়ে যাবে। জমির স্বল্পতা এবং কৃষিকাজে সহযোগিতার লোকের অভাব হেতু কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিকাজে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানান মন্ত্রী। ভারতের উন্নয়নের ধারার কথা বলতে গিয়ে বলেন, এক সময় ভারত শুনতো। এখন ভারত কথা বলে অন্যরা শোনে। তার মূল উৎস হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বর্তমান রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের একটা অংশ তুলে বলেন, সরকার আসার আগে রাজ্যে সকলে মিলে মোট আয় ছিল ৪৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বর্তমানে ৮৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ত্রিশ সালের মধ্যে আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে একটা বিশেষ কারণ হলো, রাজ্য সরকারের আয়ের ক্ষেত্রে কৃষি ক্ষেত্র থেকে অবদান ৪৬ শতাংশ। ব্যবসা, পর্যটন থেকে আয় ৪১ শতাংশ এবং শিল্প থেকে তেরো শতাংশ। তাই মোট উন্নয়নের চাবিকাঠি হল কৃষি। এমনকী কৃষকদের উন্নয়নের জন্য ফসল বীমার ক্ষেত্রে কৃষক ১০ টাকা এবং রাজ্য সরকার ২১০ টাকা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, দুই লক্ষ ১৫ হাজার কৃষককে ফুয়েল কার্ড প্রদান করা হয়েছে। কৃষাণ কার্ড, ফসল বীমা থেকে শুরু করে সবরকম সহযোগিতা করছে রাজ্য সরকার। কৃষিমন্ত্রী কলেজের উদ্দেশে বলেন, কৃষি কলেজকে ইউনিভার্সিটিতে উন্নীত করার জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীর নিকট তিনি আবেদন জানিয়েছেন।

পেঁয়াজ চাষের গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে কৃষিমন্ত্রী বলে, চার কোটি এক লক্ষ বিশ হাজার পেঁয়াজ বছরে চাহিদা রয়েছে রাজ্যে। আগামী দিনে পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজ্য স্বয়ংভর হওয়ার পথে পা বাড়িয়ে রেখেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ বিভাগের পরিচালক ডক্টর ফনি ভূষণ জমাতিয়া, উদ্যান তথ্য ও মৃত্তিকা সংরক্ষণের পরিচালক দীপক দাস, নাবার্ডের ত্রিপুরা শাখার মহা ব্যবস্থাপক অনিল কোটমির, অল ত্রিপুরা ফার্মার্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট প্রদীপবরণ রায় এবং কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. দেবাশিস সেন সহ অন্যরা।
