কৃষকের মাঝেই ঈশ্বরের অবস্থান: রতন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান!!

 কৃষকের মাঝেই ঈশ্বরের অবস্থান: রতন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :;মঙ্গলবার সারা রাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হলো।

এদিন মূল অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানীর রবীন্দ্রশতবার্ষিকী ভবনে।সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতনলাল নাথ সহ বিশিষ্ট জনেরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কৃষক সমাজ যেন জীবনের নতুন আশার আলো দেখছে। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে আবার সবুজ ফসলের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন তাঁরা। কারণ, এই রাজ্যের কৃষকদের জন্য এবার সরকার দাঁড়িয়েছে। শুধু সহানুভূতির কাঁধ নয়, বাস্তবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে যে বিপুল আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তার পরিমাণ, পরিসংখ্যান আর তার মানবিক ব্যাখ্যা, আজ এক যুগান্তকারী মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে মঞ্চে এক অনন্য উদ্যোগের সূচনা হল। এদিন অনুষ্ঠানে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, মঞ্চে কৃষকদের দেওয়া হয়েছিল সম্মানের আসন।এমনকী অনুষ্ঠান শুরুর সময়ও মন্ত্রী নিজে অনুরোধ করেন, অতিথিদের আগে যেন কৃষকদের পুষ্পস্তবক ও উত্তরীয় দিয়ে বরণ করা হয়।পরে যখন মন্ত্রীকে বরণ করা হয়, তখন পুরো প্রেক্ষাগৃহ হাততালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।এ যেন এক ঐতিহাসিক পালাবদল।রাজনীতির মঞ্চে প্রথম আসন এখন কৃষকের।মন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল, দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, কৃষি অধিকর্তা ডক্টর ফনি ভূষণ জমাতিয়া, উদ্যান অধিকর্তা সহ অন্য আধিকারিকরা।২০২৪ সালের ১৯ থেকে ২২ আগষ্ট রাজ্যের সর্বত্র যে অতিবৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছিল, তা ছিল গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। শুধু বগাফা কৃষি মহকুমায় তিনদিনে ৯৪৪ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেখানে আগষ্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ থাকে ৩১৬ মিমি।এই অতিবৃষ্টিতে কৃষিজমি প্লাবিত হয়। মাঠে জমে নুড়ি-পাথর। কোথাও আবার ভূমিধসে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাদযোগ্য জমি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজ্যের ২ লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাঁদের আর্থিক দুরবস্থার কথা ভেবে দ্রুত -উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট পাঠায়।কেন্দ্রে এনডিআরএফ প্রকল্প থেকে রাজ্যকে ৭৯ কোটি ৮৮ লক্ষ টাককার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।এর বাইরে এসডি আরএফ থেকে অতিরিক্ত ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয় কৃষি দপ্তরকে। – মঙ্গলবারের এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের মোট ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৪৩ জন কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ডিবিটির মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয় ৭৯ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা। ক্ষতিপূরণ শুধুই প্রতীকী নয়, বরং বাস্তবিক প্রয়োজনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই তৈরি – করা হয়েছে এই আর্থিক প্যাকেজটি। ইনপুট সাবসিডি (ফসল উৎপাদনের জন্য) – জন্য বরাদ্দ হয় ৬০ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে কৃষিজ ফসলের জন্য ৫২ কোটি ৬৪৫ লক্ষ এবং উদ্যানজাত ফসলের জন্য ৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। বালি ও নুড়ি– পাথর সরানোর জন্য দেওয়া হয় ৬ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ও ৭ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। * ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত জমি পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়া হয় ৫ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা। এছাড়াও, নভেম্বর মাসেই রবি চাষের প্রস্তুতি জন্য ২৭৭৮ হেক্টর জমি থেকে বালি সরানোর কাজে ১১ হাজার ৮৫০ জন কৃষককে এফডিআরএফ এর অর্থে ৫ কোটি টাকা ডিবিটির মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য শুধু সংখ্যায় নয়, বরং এর নীতিগত অবস্থানে। মন্ত্রী রতনলাল নাথ স্পষ্টভাবে বলেন, ‘কৃষকের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস।আমি প্রতিটি সরকারী অনুষ্ঠান কৃষকদের প্রণাম করেই শুরু করি। কারণ অন্নদাতা কৃষকের হাতেই দেশ বাঁচে। এমন অনুভব, প্রশাসনিক স্তরে কৃষকদের জন্য যে সম্মানের পরিবেশ তৈরি করে, তা নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদে রাজ্যের কৃষিব্যবস্থায় নৈতিক ও সামাজিক স্থিতি আনবে অনেকে মনে করেন। কৃষিমন্ত্রী রতনলাল নাথের নেতৃত্বে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের এই অভাবনীয় প্রয়াস নিঃসন্দেহে একটি রোল মডেল। শুধু অর্থ বরাদ্দই নয়, কীভাবে তা সঠিক সময়ে, সঠিক প্রাপককে, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থায় পৌঁছে দেওয়া যায়- এই প্রশাসনিক কৌশল ভবিষ্যতের জন্য এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। মন্ত্রী নিজে জানান, আমি চাই, এই দপ্তরের প্রতিটি কর্মী যেন জানেন, কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আজকের অনুষ্ঠানে কৃষকদের সামনে বসিয়ে, তাঁদের আগে বরণ করে আমরা সেই দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছি।আর এই মর্যাদা থেকে জন্ম নিচ্ছে আস্থা, আত্মবিশ্বাস এবং আগামী দিনের টেকস কৃষির ভিত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.