কলুষিত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন!

শিক্ষা কী? আমরা সকলেই জানি- শিক্ষা হলো এমন একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। জন্মের পর থেকে একটি শিশুকে বড় হওয়া পর্যন্ত, তার সার্বিক বিকাশ থেকে শুরু করে সমাজের একজন সৃষ্টিশীল এবং প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। এজন্যই সমাজবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সকল মহান ব্যক্তিরাই বলে গেছেন, শিক্ষা জাতি গঠন করে। শিক্ষা জাতির চরিত্র গঠন করে। আর শিক্ষাঙ্গন হলো সেই প্রতিষ্ঠান, যেখানে জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করার স্থান। শিক্ষাঙ্গণ, যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রস্তুত হয়। চরিত্র গঠন ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রকৃত মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। তাই শিক্ষা এবং শিক্ষাঙ্গন একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে ভাবা অসম্ভব। ফলে শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ সবসময়ই থাকতে হবে সর্বাধিক উত্তম। কিন্তু আমাদের এই ছোট্ট রাজ্যে শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ কি সর্বাধিক উত্তম? এই দাবি করা যায়? এককথায় উত্তর হলো, না। সর্বাধিক উত্তম, মোটেও এই দাবি করা যাবে না। তার কারণও রয়েছে যথেষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে এসে ঠেকেছে। মারাত্মকভাবে কলুষিত হচ্ছে শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় চলে যাচ্ছে, যেখানে শিক্ষার ও শিক্ষাঙ্গনের সংজ্ঞাটাই আজ বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনা, রাজ্যের শিক্ষার ও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কিত সচেতন মহল।
কেননা,বিগত কয়েক মাসের মধ্যে রাজ্যের শিক্ষা জগতে এবং শিক্ষাঙ্গনে এমন সব মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে, তাতে আঁতকে উঠছেন অনেকে। এমন সব ঘটনা রাজ্যের শিক্ষা জগতে এবং শিক্ষাঙ্গনে ঘটেছে বলে জানা নেই। এককথায় নজিরবিহীন।এতে করে কলুষিত হচ্ছে রাজ্যের শিক্ষার পরিবেশ, কলঙ্কিত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ ও পবিত্রতা।
সম্প্রতি রাজধানীর রামঠাকুর কলেজে ছাত্রভর্তিকে কেন্দ্র করে যে কলঙ্কের অধ্যায় রচিত হয়েছে, তা এর আগে রাজ্যে কখনও ঘটেনি। কলেজে ভর্তি নিয়ে প্রতিবছরই নানা সমস্যা তৈরি হতে দেখা গেছে। কিন্তু সেই সমস্যা কখনো শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে কলুষিত করেনি। যথাসময়ে সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা কেউই কলেজে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়নি। কিন্তু এবারই দেখা গেল ব্যতিক্রম। ভর্তিকে কেন্দ্র করে একাংশ অধ্যাপকের সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া, অনৈতিক অর্থ আদায়, শিক্ষাঙ্গনে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব, হুমকি- কিছুই বাদ যায়নি। এমনকী শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ পর্যন্ত প্রবেশ করতে হয়েছে। এর থেকে লজ্জার আর কী আছে?
আরও মারাত্মক ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। কমলপুর কলেজের এক অধ্যাপক শিক্ষাঙ্গনেই এক ছাত্রীর সাথে এমন কাণ্ডে নিজেকে জড়ালেন, যা নিয়ে গোটা রাজ্যে ছি ছি রব উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এরা কী ধরনের অধ্যাপক? এরা কী ধরনের শিক্ষক? আমাদের এই সমাজে ছাত্রী-শিক্ষকের প্রেম, ভালোবাসা শেষে পরিণয়, এটা নতুন কিছু বিষয় নয়। তাই বলে ঘরে স্ত্রী, সন্তান রেখে কন্যাসম ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনেই এমন অশালীন কাজে জড়িয়ে পড়তে হবে? এই ধরনের কলঙ্কিত অধ্যাপক, শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র গঠনের কী শিক্ষা দেবে? এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে।সম্প্রতি, বিলোনীয়া বড়পাথরী একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর আত্ম হত্যার ঘটনাও, সমাজে নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অভিযোগ, স্কুলের এক শিক্ষিকার অপমানজনক কথাতে আঘাতপ্রাপ্ত ওই ছাত্রী নিজেকে অকালে শেষ করে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমনটা হবে? এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে রাজ্যের শিক্ষার এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে আর বেশি দিন সময় লাগবে না। সময় থাকতে হাল না ধরলে, ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু অঘটনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।