ছ’মাস পর ভারতকে আবার বিরল খনিজ রফতানি শুরু করল চিন, নতুন চুক্তিতে কড়া শর্ত আরোপ বেজিংয়ের!!
কতকাল চলবে প্রতিশ্রুতি
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের শাসনে দেশে মূল্যবৃদ্ধি সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।দেশে মুদ্রাস্ফীতি ,আর্থিক অবনমন , বেকারত্ব , কর্মহীনতা , জিডিপির অবস্থান সবকিছুতেই চরম নিরাশার ছবি । এই সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রীর অফিস মঙ্গলবার দেশের আম জনতার জন্য এক বড় ঘোষণা দিয়েছে । প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে এক ট্যুইট বার্তায় জানানো হয়েছে , কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত দপ্তর ও মন্ত্রকের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের আগে আগামী দেড় বছরে সরকার ১০ লক্ষ নতুন নিয়োগ করবে । গত পাঁচ দশকে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকেছে । ২০১৪ সালে দেশে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন বছরে ২ কোটি করে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি । সেই হিসাব অনুযায়ী মোদি সরকারের গত ৮ বছরে দেশে ১৬ কোটি চাকরি হয়ে গেছে । কিন্তু আচমকাই সরকারের আরও দুই বছর মেয়াদ থাকতে ১০ লক্ষ পদে নিয়োগের ঘোষণা কেন ?

আসলে গত ৮ বছরে ১৬ কোটি চাকরির নামে কেন্দ্রীয় সরকার বেকারদের সঙ্গে যে ছেলেখেলা করেছে , এখন ভোটের আগে তা থেকে মুখ রক্ষা করতেই নতুন ফন্দি ফিকির খুঁজছে কেন্দ্রীয় সরকার – পিএমও অফিসের ট্যুইটের পর এটাই হলো মোদ্দা কথা । মোদি সরকারের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরে একের পর এক বহু সরকারী প্রতিষ্ঠান বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে । ২০২০ সালে ১ লা মার্চের প্রদত্ত সংসদীয় একটি রিপোর্টে দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও সরকারী দপ্তরে খালি পড়ে আছে সাড়ে ৩০ লক্ষের বেশি পদ । শুধুমাত্র রেল , প্রতিরক্ষা , স্বরাষ্ট্র এবং ডাক বিভাগেই শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষের বেশি । বিস্ময়কর হলো । দপ্তরগুলোতে এত বিরাট সংখ্যায় শূন্যপদ পড়ে থাকা সত্ত্বেও দেশের ছেলেমেয়েরা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে । অথচ প্রতি বছর দেশে ২ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে বলে ডঙ্কা পিটিয়েছিল বিজেপি । এখানেই প্রশ্ন উঠেছে , আর এত শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও তা যদি পূরণ করা না হয় , তাহলে বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি সবটাই ছিল ভাঁওতা ?

তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়াল ? ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে শুধুই ক্ষমতায় আসার জন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করে অসর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্মসংস্থানের ডঙ্কা বাজিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি । সেই সব যে সবই ফাঁকা আওয়াজ- মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের দেড় বছরে ১০ লক্ষ চাকরি দেওয়ার নতুন টোপ সেটাই আবারও প্রমাণ করে দিচ্ছে । ইতিমধ্যেই বিরোধীদের তরফে অভিযোগ উঠেছে , বছরে ২ কোটি ‘ নতুন কর্মসংস্থান তো দূরে থাকুক , বরং দেশে কর্মচ্যুতি বেড়েছে । আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে সরকার যদিও পরিসংখ্যানের কচকচানিতে ব্যস্ত , কিন্তু এতে করে কি আদৌ দেশে কর্মসংস্থানের বেহাল দশা এতটুকুও বদলেছে ? গত ৮ বছরে কর্মসংস্থানের হার পর্যায়ক্রমে নিচের দিকেই যাচ্ছে । ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন বলছে বছর শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়বে । নির্মাণ শিল্প , তথ্যপ্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলিতে কিছুটা কর্মসংস্থান তৈরি হতো এতদিন । এখন সেগুলিও কর্মী ছাঁটাইয়ে ব্যস্ত।

অনেকের রোজগার কেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর নোটবন্দি । জিএসটির কোপে পড়ে বহু ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে । মোদি সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা বলেছিলেন , নোটবন্দি জিএসটির মতো অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণের দরকার নেই । তবুও চমকপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী সেটাই করে গেছেন । বছরের পর বছর বাজেট হয়েছে । পরিকল্পনার নামে নতুন নতুন প্রকল্প আর কর্মসূচির ঘোষণা হয়েছে । কিন্তু বেড়ে গেছে দেশে কর্মসংকোচনের হার । শিক্ষিত বেকাররা দেশে চাকরির জন্য হাহাকার করছেন । অপরদিকে চটকদার কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি এক এক করে কখনও স্বচ্ছ ভারত , কখনও গো রক্ষা , নোটবন্দি , মেক – ইন ইণ্ডিয়া , স্কিল ইণ্ডিয়া , স্টার্ট আপ ইণ্ডিয়া , সবকা সাথ সবকা বিকাশের রঙিন স্লোগান দিয়ে সবকিছু ঢেকে রাখতে চাইছেন । কিন্তু এই মোহময়ী স্লোগান দিয়ে বাস্তবের দুঃসহ পরিস্থিতি যে বেশিদিন চাপা দেউয়া যাচ্ছে না তা এখন স্পষ্টই প্রকাশ্যে আসছে । কর্মসংস্থান হতে গেলে চাই অবাধ শিল্পায়ন । শিল্পায়ন মানে অপ্রতিহত গতিতে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠে । কিন্তু বর্তমান সময়ে সরকার যখন একদিকে বেসরকারীকরণ এবং কেন্দ্রীয় নীতির চাপে সরকারী ছোট শিল্প বন্ধ হওয়ার মুখে তখন কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা কতটা ? নাকি শুধুই ভোটের লক্ষ্যে বেকারদের মন ভরাতেই এই প্রতিশ্রুতি ?