October 20, 2025

এশিয়ায় নতুন অক্ষ!

 এশিয়ায় নতুন অক্ষ!

গত ত দু’দিন ধরে গোটা বিশ্বের নজর চিনের তিয়ানজিং শহরের উপর। আর এই দুইদিনে বিশ্ব-রাজনীতির কত কিছু যে ঘটে গেছে চিনের এই অত্যাধুনিক শহরটিতে, তা বলে বা লিখে এই মুহূর্তে শেষ করা সম্ভব হবে না। চিনের তিয়ানজিং শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) এর এবারের সম্মেলনে যেন, বিশ্ব রাজনীতির অভিমুখটাই বদলে দিয়েছে। শুধু বদলে দিয়েছে বললে হয়তো কম বলা হবে। বলা যায়, বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার একাধিপত্য এবং শক্তিকে রীতিমতো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে আসার পর থেকে, গোটা বিশ্বের উপর যেভাবে ছড়ি ঘোড়াতে শুরু করেছিলেন, যেভাবে হুমকি দিতে শুরু করেছেন, ‘হামসে বড় কোন’ মনোভাব নিয়ে যেভাবে নিজেকে জাহির করতে শুরু করেছেন, তাতে বড়সড় ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক খাঁড়ার আবহে এক মঞ্চে ভারত-চিন-রাশিয়া, একে অপরের হাতে হাত রেখে যে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়েছে, তাতে গোটা বিশ্বের ভূ-রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশিকা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে দীর্ঘ সাত বছর পর চিনে পা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। যোগ দিয়েছেন, পাকিস্তান, তুরস্ক, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, ফিরগিজস্তান, বেলারুশ, উজবেকিস্তান সহ আর বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানরা। কিন্তু সব নজর ছিলো মোদি-পুতিন এবং জিনপিং- এর উপর।

সম্মেলনে সোমবার সকাল থেকে ঘটতে দেখা গেলো? চিনের পাঠানো আরাস গাড়িতে পাশাপাশি বসে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়া প্রেসিডেন্ট পুতিন একসঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য যেতো। দুই রাষ্ট্র নেতা তাদের দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার জন্য তিয়ানজিং-এর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে যান। এই ছবি পোস্ট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং আমি একসঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকস্থলে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথোপকথন সর্বদা অর্ন্তদৃষ্টিপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা হওয়াটা সবসময় খুব আনন্দের’। এখানেই শেষ নয়, এসসিও সম্মেলনের মধ্যেই দেখা হলো দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পুতিনকে জড়িয়ে ধরলেন মোদি। সম্মেলনে বক্তব্য রাখার আগে মোদি-পুতিন-জিনপিং-কে দেখা গেলো বেশ খোস মেজাজে। একান্তে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করতে দেখা গেল তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনায় আমেরিকার ভারতীয় পণ্যের রপ্তানির উপর পঞ্চাশ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর ভারত আমেরিকার সম্পর্কে টানাপোড়ন চলছে। বারবার মার্কিন চোখ রাঙানি এবং হুমকি দেওয়া সত্বেও ভারত কর্ণপাত করা তো দূরের কথা, উল্টো তেল ক্রয় আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত-চিন-রাশিয়া এক মঞ্চে আসাকে, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।আমেরিকার আধিপত্য রুখতে এশিয়ায় তৈরি হচ্ছে ভারত-চিন-রাশিয়া অক্ষ।
সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সামনেই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। খবরে প্রকাশ, আমেরিকার শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে ভারত-চিন রাশিয়া। আমেরিকার চাপ প্রয়োগের নীতির বিরুদ্ধে এক নতুন কৌশল তৈরি হচ্ছে বলে খবর। খবরে প্রকাশ, ভারত-চিন-রাশিয়া বাণিজ্য নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সবথেকে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে ডলার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। যা আমেরিকার বিশ্বব্যাপী প্রভাবকে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে ফেলবে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় আমেরিকা সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী। কেননা, আমেরিকা সামরিক জোট ‘ন্যাটো’ এবং ডলার নির্ভর বাণিজ্যকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই দুটিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে এশিয়ার নতুন অক্ষ। এসসিও সম্মেলন শেষে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ন্যাটোর মতো সামরিক জোটের বিপরীতে একটি নতুন সামরিক জোটের ঘোষণা আসতে পারে। ডলারকে বিদায় জানানোর ক্ষেত্রেও বড় ঘোষণা আসতে পারে। এদিকে, সম্মেলন শেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি সোমবারই দেশে ফিরে এসেছেন। দেশের মাটিতে পা রেখেই বললেন, চিন সফর সফল। কতটা সফল? এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *