এক পক্ষ ও তৃতীয় পক্ষ!!

 এক পক্ষ ও তৃতীয় পক্ষ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পাকিস্তানের সহিত যুদ্ধ বিরতি লইয়া ভারতীয় সামাজিক মাধ্যমে এই সময়ে তোলপাড় চলিতেছে।যদিও একাংশ সংবাদ মাধ্যম বলিতেছে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কায় বিরতির প্রস্তাবে রাজি হইতে হইয়াছিল।কিন্তু এই সকল কথা কেহই গ্রাহ্য করিতেছে না।ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ বাড়াইয়া প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের ঘন্টা তিনেক আগে প্রেস কনফারেন্স ডাকিয়া ভারত পাক সংঘাত বিরতির কৃতিত্ব জাহির করিলেন। তিনি পুনরুচ্চারণ করিলেন, হোয়াইট হাউসের প্রচেষ্টায় এশিয়া মহাদেশে এই দফায় পরমাণু যুদ্ধ বন্ধ হইলো। ট্রাম্প যাহা বলিলেন, মোদ্দা কথায়-ভারভারিক্কি ব্যবসার প্রস্তাব শুনিয়াই নাকি ভারত ও পাকিস্তান আচমকা সংঘাত বিরতিতে রাজি হইয়া যায়।
ঘটনা যাহাই হোক,ভারতীয় জনমানস এই সকল প্রস্তাব মনেপ্রাণে মানিতে পারিতেছে না।ফলে সামাজিক মাধ্যমেই হোক কিংবা হাটে বাজারে-সর্বত্র গাল্মন্দের ফোয়ারা ছুটিতেছে।সব চাইতে অধিক অসন্তোষ দেখা যাইতেছে প্রধানমন্ত্রী মোদির নিজ রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে। সাধারণ কর্মীরা যারপরনাই হতাশায়। বিজেপি গত শুক্রবার নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের অ্যাকাউন্টে লিখিয়াছিল, যাচনা ন্যাহি, আব রণ হোগ্যা। অর্থ দাঁড়ায়, অনুরোধ নহে, এইবার যুদ্ধ হইবে। এই পঙক্তিমালার সহিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিমানবাহিনীর জাম্পস্যুট পরিহিত একটি ছবিও যুক্ত করা হইয়াছিল। বিজেপি যখন এই পোস্ট দেয়, তখন উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছিল যে মনে হইয়াছিল, ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাহা আর হইলো না। কারণ বিজেপির ওই পোস্টের ২৪ ঘন্টার একটু অধিক কালের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ ভারতের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ সামাজিক মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। ফলে সংঘাত হঠাৎ থেমে যায়।
যুদ্ধ বিরতির ঘোষণায় দুইটি দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করিয়া সীমান্তবর্তী মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিলেও একটি বৃহৎ অংশ অস্বস্তিতে পড়িয়া যায়। অখুশি জনসমষ্টির মধ্যে সর্বাগ্রে রহিয়াছে ভারতের শাসক দল বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির লোকেরা। তাঁহারা হতাশা ও ক্ষোভ গোপন করিবার প্রয়োজন বোধ করিতেছেন না। সরকারপন্থী প্রচারমাধ্যম, এমনকী বিজেপি নেতারাও সামাজিক জাধ্যমে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করিতেছেন।তাঁহাদের মতে,শক্তিমত্তার দিক হইতে আগাইয়া থাকিয়াও যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ভারত নাকি আত্মসমর্পণই করিয়াছে। সমর্থকেরা কঠোরভাবে মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাইতে চায়। বিজেপির ছাত্রসংগঠন এবিভিপির সহিত যুক্ত শক্তি সিং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ট্যাগ করিয়া এক্সে লিখিয়াছেন, পাকিস্তানে ওসাম বিন লাদেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যা করিয়াছে, দাউদ ইব্রাহিম ও হাফিজ সাঈদের বিরুদ্ধে ভারত সেই ধরনের কিছু করিতে পারে নাই। তাঁর মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই সব জঙ্গি জীবিত থাকিবে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতির কোনো অর্থ হয় না।
গুয়াহাটির ব্যবসায়ী, প্রাক্তন এবিভিপি, বর্তমানে বিজেপি সদস্য মুন তালুকদার লিখিয়াছেন, হঠাৎ যুদ্ধবিরতি দিয়া ভারত ভূখণ্ডে পাকিস্তানের জঙ্গি প্রেরণ বন্ধ করিতে পারিবে না। ভারতের উচিত
ছিল পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর দখল করিয়া লওয়া। যতক্ষণ না আমরা সম্পূর্ণ কাশ্মীর দখল করিতেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চলিতেই থাকিবে।যদি যুদ্ধবিরতি না দিয়া পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা যাইত, তাহা হইলে ভারত প্রমাণ করিতে পারিত যে আমরা দুর্বল দেশ নই। রাশিয়া ও আমেরিকার মতন আমরাও বিশ্বশক্তিগুলির সমতুল্য। শাসক দলের ভেতরেই যখন এই ধরনের প্রতিক্রিয়া তখন সাধারণ মানুষের ও মোদিভক্ত, সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া সহজেই অনুমেয়।মোদি ভক্তরা সরাসরি মোদিকে আক্রমণ না করে সঞ্জয় মিশ্রি এবং তাঁর পরিবারবর্গকে আক্রমণ করিতেছেন।
ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভেদ প্রকাশ মালিক সামাজিক মাধ্যম এক্সে লিখিয়াছেন, ১০ মে ২০২৫-এর যুদ্ধবিরতি লইয়া ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাস একদিন প্রশ্ন তুলিবে, আমাদের সামরিক ও বেসামরিক পদক্ষেপের পর কোনও ধরনের রাজনৈতিক, কৌশলগত সুবিধা অর্জিত হইয়াছিল? সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি জানিতে চাহিয়াছেন, ভিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নহে, আমি আশা করিয়াছিলাম, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করিবেন। সিমলা চুক্তির (১৯৭২) পর হইতে আমরা সব সময় তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করিয়া আসিতেছি। তাহা হইলে এইবার কেন তাহা গ্রহণ করিলাম? আমি আশা করি, কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠিবে না। কারণ, উহা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
অপারেশন সিন্দুর লইয়া সমগ্র বিরোধী সরকারের পাশে দাঁড়াইয়াছিল একবাক্যে। বিরোধী নেতাদিগের মধ্যে সেই দিন পাকিস্তান বিরোধীতা ও সমালোচনায় ওয়াইসির কণ্ঠ উচ্চকিত হইয়াছিল। আজ ওয়াইসি জানিতে চাহিতেছেন, কাশ্মীর কি সত্যই তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনা হইবে? কাশ্মীর কি আন্তর্জাতিক বিষয় হইয়া গেল? এই প্রশ্ন আজ জানিতে চাহেন গোটা বিরোধী বেঞ্চ।তাহারা ট্রাম্প কথিত ত্রিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব কি মোদি সরকার মানিয়া লইয়াছে কিনা জানিতে চাহেন। যে বিরোধিরা পাকিস্তান ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর যে কোনও পদক্ষেপে তাঁর পাশে থাকিবার অঙ্গীকার করিয়াছে, তাহার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমরাঙ্গনে হোক কিংবা কূটনৈতিক যুদ্ধ-সব খানে জয় প্রত্যাশা করিয়াই অঙ্গীকার করিয়াছে।দেশের বিষয় লইয়া বিদেশি হস্তক্ষেপের জন্য সব রকম সমর্থনের কথা বলেন নাই। আজ জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জাতির তৃষ্ণা মিটাইতে পারে নাই। সেই কারণেই সংসদের যৌথ সভায় তাহাকে দাঁড়াইতে হইবে, আশ্বস্ত করিতে হইবে, কাশ্মীর তৃতীয় পক্ষের ইস্যু নহে। হাকডাক করিয়াও অবশেষে এক পাক্ষিক যখন করা সম্ভব হয় নাই তখন অন্তত দ্বিপাক্ষিকই থাকুক।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.