দেশি-বিদেশিদের উপচে পড়া ভিড়,আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জম্পুই!!
একচেটিয়া সাম্রাজ্য!!
আকাশ যাত্রায় হাহাকার দেখা দিয়েছে। গত কয়দিন ধরেই দেশের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থার বিমান পরিষেবা একবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।এর জেরে হাজার হাজার বিমান বাতিল হয়েছে।যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পারছেন না। প্রচুর আপৎকালীন কাজ আটকে গেছে সাধারণ মানুষের। বিমানবন্দরগুলিকে রেলস্টেশনের মতো লাগছে। কাউন্টারে হাজারো যাত্রীর ভিড়। এক কথায় নজিরবিহীন এক অসহায় অবস্থায় পড়েছেন দেশের হাজার হাজার বিমানযাত্রী। গত কয়দিন ধরে ইন্ডিগোর বিমানেই এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এরজন্য দায়ী যেমন ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ তেমনি কেন্দ্রীয় সরকার, ডিজিসিএ – সবাই সমদোষে দুষ্ট। প্রত্যেকেরই দায় রয়েছে। এর জেরে দেশের হাজার হাজার বিমান যাত্রী নাকাল হয়েছেন গত কয়দিনে। বড়সড় আর্থিক ঘোটালারও অভিযোগ রয়েছে এই ক্ষেত্রে। সবচেয়ে বড়সড় যে অভিযোগ ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে উঠেছে তা হল বাজারের মনোপলির অভিযোগ। ইন্ডিগো এখন ভারতের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন। বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য তাদের। তাদের শেয়ার ৬.৪%-এর বেশি। অন্য এয়ারলাইনগুলি এর ধারেকাছে নেই। ফলে এই একচ্ছত্র আধিপত্যের বাজারে ধাক্কা আসায় এর বেজায় প্রভাব পড়েছে সাধারণ্যে। এটাই মনোপলি বাজারে সবথেকে খারাপ বিষয়। গত বছর বর্তমান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী পত্রিকায় এক নিবন্ধ লিখে সরকারের এই মনোপলি সম্পর্কে সতর্ক হতে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আজকের সময় ইন্ডিগোর সামনে যে দুর্যোগ ঘনিয়ে এসেছে এরজন্য পুরোপুরি দায়ী ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষই। কেননা বিমানের পাইলট, ক্রু সদস্যদের বিশ্রাম দিতে সম্প্রতি যে নির্দেশিকা লাগু হয়েছে তা ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসেই ডিজিসিএ জানিয়ে দিয়েছিলো। তা চালু হয় দুটি পর্যায়ে। একটি পর্যায়ে তা চালু হয় চলতি বছরের পয়লা জুলাই থেকে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তা চালু হয় চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে। কিন্তু সেই অনুযায়ী ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। তেমনি কোনো প্রস্তুতিও গ্রহণ করেনি। ফলে বেজায় কর্মী সংকট বিশেষ করে পাইলট এবং ক্রু সংকট দেখা দেয়। দেশের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা হওয়া সত্বেও ইন্ডিগো নয়া নির্দেশিকা লাগু হলে যে পাইলট, ক্রু সদস্য কমবে তা জেনেও প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করেনি। বলা ভালো এতে দৃষ্টিই দেয়নি। ফলে আজকের সংকট। মনোপলি বিজনেস চালাতে গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে ইন্ডিগো। লক্ষ লক্ষ মানুষ নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।বয়স্ক থেকে রোগী, ছাত্রছাত্রী থেকে বিজনেস জগতের মানুষ, শিল্পী, কলাকুশলী থেকে চিকিৎসক কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত হয়েছেন, বিপাকে পড়েছেন। এর দায় ইন্ডিগো নেবে তো! মনোপলি দুনিয়ার কথা এখানেই শেষ নয়, ইন্ডিগোর এই ক্রাইসিসের সুযোগ অন্যান্য এয়ারলাইনগুলি নিয়ে নেয়। সুযোগ বুঝে স্বল্প দূরত্বের ভাড়া এক লক্ষ টাকা নিতেও তারা কার্পণ্য করেনি। ইন্ডিগো যদি বিমানটি পরিষেবার দুনিয়ায় মনোপলি না চালাতো তাহলে অন্যান্য এয়ারলাইন তা করার সুযোগ পেতো না।
দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় সরকারও ফুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে। দেশব্যাপী যখন হাহাকার উঠেছে তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিয়ে কন্ট্রোল রুমে বসেছেন। দফায় দফায় বৈঠক করেন। ডিজিসিএ-রও এক্ষেত্রে দারুণ গাফিলতি রয়েছে। ডিজিসিএ নয়া নির্দেশিকা দিয়েই খালাস, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা এবং হলেও এর প্রভাব এয়ারলাইনগুলিতে কীভাবে পড়তে পারে এবং পড়বে এর কোনো হোমওয়ার্ক করেনি। ফলে গত কয়দিন ধরে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের এই চরম উদাসীনতার শিকার হতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার যাত্রীকে। অথচ এই ইন্ডিগোর কাছে সবচেয়ে বেশি পাইলট রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্রু সদস্য রয়েছে। সবচেয়ে বেশি গ্রাউন্ড স্টাফ সহ অন্যান্য কর্মী রয়েছে। এরপরও শুধুমাত্র মার্কেটে মনোপলি’র জন্য এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য দেশব্যাপী চরম সংকট নেমে এসেছে গত কয়দিন ধরে। বিমান সংস্থাগুলির উপর এখন কোনো নিয়ন্ত্রণই যেন আর রাখতে পারছে না কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে আমআদমির উপরই সব বোঝা এসে পড়ছে। যথারীতি কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নির্দেশিকা নিয়েও ঢোঁক গিলতে হয়েছে।শুধুমাত্র ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অবহেলার জন্য পাইলট, ক্রুদের জন্য যে নয়া যে নির্দেশিকা তা স্থগিত করতে হয়েছে। এর পুরো দায় ইন্ডিগোকে নিতেই হবে। শুধু ক্ষমা চেয়ে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের নিষ্কৃতি মিলবে না। গত কয়দিনে দেশের অর্থনীতিতে এর যে প্রভাব পড়েছে এর দায় কে নেবে? মানুষ যেভাবে হেনস্তা হয়েছে, নাকাল হয়েছে এর কী হবে? সরকারকেই এর জবাব দিতে হবে। মনোপলি করতে ইন্ডিগোকে পরোক্ষ, প্রত্যক্ষ মদত জুগিয়েছে তো সরকারই।সুতরাং আজকের এই সংকটের জন্য যেমন ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ দায়ী একই ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারও এর দায় এড়াতে পারবে না।