উন্নয়নে পাখিরালয় বিপন্ন মানেকা গান্ধীর হস্তক্ষেপ দাবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- স্মার্ট সিটির একবগ্গা উন্নয়নী অভিযাত্রায় ধ্বংস হচ্ছে জৈব বৈচিত্র। হারিয়ে যাচ্ছে স্মার্ট সিটি আগরতলার অঘোষিত পাখিরালয় কলেজ লেক। প্রতি শীতে পরিযায়ী পাখিদের আস্তানায় এখন ইট-সিমেন্ট-কনক্রিটের উন্নয়নী সন্ত্রাস চলছে। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আপত্তিতে কান দিচ্ছে না প্রশাসন। অগত্যা আগরতলার এক নাগরিক পরিযায়ী পাখিদের জন্য মানেকা গান্ধীর দ্বারস্থ হলেন।
প্রসঙ্গত, আগরতলায় নির্বিচারে জলাশয় ভরাট সহ জৈব বৈচিত্র ধ্বংসের বিরুদ্ধে যে মৃদু প্রতিবাদ শোনা যায়, গত ২০২৩ সালে এমন একটি সংগঠনের পক্ষে প্রথম কলেজ লেক-এ কনক্রিটের ছাদ তোলার বিরোধিতা করা হয়েছিল।কিন্তু নিগমের তদানীন্তন পুর কমিশনার যিনি স্মার্ট সিটি প্রকল্পেরও সিইও, তিনি কোনও ধরনের আপত্তিতে আমল দেননি। পরিবেশ ও জলাশয় সংগঠন মঞ্চ এ নিয়ে নিগমের চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীদের দরজায় ধরনা দেয়। কিন্তু স্মার্ট সিটি সব বক্তব্যেই অনড়। এডিবির সহায়তায় কলেজ লেকে ‘মহারাজা বীর বিক্রম কলেজ লেক রিভাইটেলাইজেশন’ নিয়ে ২০২১ সালে সিইও যাদব নাগরিক সমাজ সহ বিভিন্ন পক্ষকে ডেকে ওয়ার্কশপ করিয়েছিলেন। সেখানেও তীব্র আপত্তি উঠেছিল। ‘পাবলিক জোন বি’ এই জলভূমির ব্যাপক ক্ষতি হবে। বাস্তুতন্ত্রের যে ক্ষতি হবে তা আর পোষানো সম্ভব নয়। পরিযায়ী পাখিদের আসা যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উন্নয়নমূক কাজের গতি অব্যাহত রাখতে এই কয়েক বছরে কলেজ লেকের একটা বড় অংশ কংক্রিটে ঢাকা হয়ে গেছে।যে পাড়গুলিতে এই শ্রাবণে লাল শাপলা ফুটে থাকতো, ছাতা মাথায় সারসার হয়ে বসে থাকতো বড়শি হাতে মাছ শিকারি- সেই দৃশ্য হারিয়ে গেছে। সেখানে জল ঢেকেছে কোটি টাকার দেওয়াল-ছাদ, ভাসমান সেতু হচ্ছে জল বরাবর। আবার লেকের পাড়ে পাড়ে হচ্ছে তকতকে চকচকে পাকা রাস্তা, যা জলাশয়কে কনক্রিটে মুড়িয়ে দিচ্ছে আপাদমস্তক। এই জলাশয়ের পাড়ে পাড়ে কৃত্রিম সৌন্দর্যায়নের নামে তীব্র আলোর স্তম্ভ বসানো হচ্ছে। এতে একদিকে জলার বাস্তুতন্ত্র হাজার লক্ষ জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ যেমন বিপন্ন তেমনি মাছের অস্তিত্ব শেষ হতে চলেছে। বন দপ্তর এই জলার পাড়েই বাদুরের বসতি হিসেবে ‘ব্যাট জোন’ ঘোষণা করেছে। তীব্র আলো যে তাদেরও বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে তা নিশ্চিত। এই বিষয়গুলি নিয়ে কেউ কোনও কথা শুনতে চাইছে না। কৃত্রিমতার উন্নয়নে চাপা পড়ে যাচ্ছে পরিবেশ, স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র। উন্নয়নের একবগ্গা সন্ত্রাসে “জলার পাড়ের গাছ-গাছালি নির্বিচারে কাটা চলছে। যেন এডিবির তহবিলের অর্থানুকূল্যে সরকারী প্রকল্পের টাকা খরচ করতে পারাটাই শেষ কথা, সর্বোচ্চ সাফল্য। সব দরজা যখন বধিরতার নিপুণ অভিনয় করে চলেছে তখন আগরতলার এক নাগরিক এই দেশে পিপল ফর অ্যানিমেল (পিএফএ) এর প্রতিষ্ঠাতা, পশু *ও পরিবেশ কর্মী, সাংসদ মানেকা গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন।
কলেজটিলা এলাকার বাসিন্দা সুবীর দেববর্মা লিখেছেন, প্রতি শীতে এই জলায় ২৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। মধ্য এশিয়া,সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসে বিরল দর্শন পাখির দল। তালিকায় রয়েছে রুডি শেলডাক, নর্দার্ন পিলটেইল,কমন টিয়েল, গার্গানি, লেসার হুইসলিং ডাক, নর্দার্ন শোভেলর, হোয়াইট সওয়াগটেইল, কমন সেন্টপাইপার, পিয়েট এভোসেট, সিটরাইন ওয়াগটেহল জাগোত্রের ও নামের পাখিরা। ছয় পাতার চিঠিতে লেখক জানিয়েছেন,স্মার্ট সিটি প্রকল্পের এই একবগ্গা নির্মাণ যাত্রায় প্রচলিত কোন কোন আইন কি কি ভাবে কালঙ্ঘন করা হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রকের জাতীয় কর্মসূচি এমওইএফসিসির তোয়াক্কা শিকরছেন না সিইও শৈলেশ যাদব ও তার দলবদল। সুবীর দেববর্মা এই বিষয়ে মানেকা গান্ধী এবং তার পিএফএর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন।
এদিকে পরিবেশ ও জলাশয় সংরক্ষণ মঞ্চ কলেজ লেকে পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আস্তানা নষ্ট করার ঘটনাকে মারাত্মক অপরাধ ও পরিবেশ বিরোধী উন্নয়ন বলে মনে করছে।কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাখিদের অভিবাসন একটি অনন্য প্রাকৃতিক ঘটনা। বিশ্বের প্রায় দুই হাজার প্রজাতির পাখি উপযুক্ত পরিবেশ এ আবাসের জন্য হাজার হাজার মাইল,ডজন ডজন দেশের সীমানা অতিক্রম করে থাকে।বিশ্বের প্রায় ১৪ শতাংশ পাখি বিপন্নতার শিকার।জীববৈচিত্রের ক্ষয় ও পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এই বিপন্নতার কারণ। রাষ্ট্র সংঘের (ইউএনইপি) জানিয়েছে,ত্রিশ বছরে অভিবাসী পাখির সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে
।বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, বিরতি স্থলগুলিতে বসতের সংকট, চোরাশিকার, বড় শহরের কৃত্রিম কাঠামোর সঙ্গে ধাক্কা, বিদ্যুতের ছোবল পাখি মৃত্যুর সাধারণ কারণ। এবার -কলেজ লেকের বিরতিস্থলে এই ধরনের সবগুলি প্রতিবন্ধকতাকে দাঁড় করানো হচ্ছে মহা ধুমধাম করে।