আশঙ্কাজনক!!

পহেলগাঁও হেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ষাট দিন অতিক্রান্তের পরেও হামলায় জড়িত একজন সন্ত্রাসবাদীরও হদিশ পাওয়া গেল না।এই বাহ্য, ঘটনা ঘটে যাওয়ার একষট্টি দিনের মাথায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানতে পেরেছে সম্পূর্ণ নতুন, তদুপরি অসীম চাঞ্চল্যকর তথ্য। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর জম্মু কাশ্মীর পুলিশ সন্দেহভাজন যে তিন জঙ্গির স্কেচ সহ নাম প্রকাশ করেছিল, এতদিনে এনআইএ জেনেছে, সংশ্লিষ্ট তিনটি স্কেচ-ই আদতে ভুয়া! তাদের মধ্যে একজনও হাড়-হিম করা হত্যাকাণ্ডের শামিল ছিল না।
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিনের মাথায় ২৭ এপ্রিল ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় এনআইএ। এতদিন দেশের মানুষ জানত, পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডে তিন জঙ্গির মধ্যে একজন স্থানীয়। এনআইএ তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত তৃতীয় হামলাকারীও পাকিস্তানি। অধিকন্তু সে-ই মূল হামলাকারী, তার নাম সুলেমন শাহ। এরপরে যদি কেউ গোটা বিষয়টিকে তদন্তের ব্যর্থতা, শূন্যতা, গাফিলতি, তাড়াহুড়ায় দেশকে বিভ্রান্ত করা ইত্যাদি নানা বিশে-লষণে সমালোচনা করেন, খুব ভুল বোধহয় হবে না। কীভাবে এমন বড় ভুল সংগঠিত হলো? এনআইএ-র বক্তব্য, গত চার ডিসেম্বর জম্মু কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে গুলীর লড়াইয়ে নিহত হয় জুনেইদ রমজান ভাট নামে সুলেমানের এক সহযোগী। নিহতের ফোন ঘেঁটে প্রাপ্ত ছবির ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে যে তিন জঙ্গির স্কেচ আঁকানো হয়, তা ছিল অনুমান-নির্ভর। সত্য সেলুকাস!
গত ২২ তারিখ পারভেজ আহমেদ জোঠর এবং বশির আহমেদ জোঠর নামে দুই কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, প্রাথমিক জেরায় এই দুজনই স্বীকার করেছে তারা পহেলগাঁও হামলার তিন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের খাওয়াদাওয়া, যাতায়াত এবং থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা জম্মু কাশ্মীরের পুলিশ তড়িঘড়ি তিন সন্দেহভাজন জঙ্গির নাম সহ তিনটি স্কেচ প্রকাশ করে তাদের মাথার দাম ঘোষণা করে। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, এত তড়িঘড়ি তিনটি স্কেচ প্রকাশের জন্য পুলিশের উপর কি কোনও ‘চাপ’ ছিল? এই প্রচেষ্টা কি সরকারের ‘হেডলাইন ম্যানেজমেন্ট’-এর বহিঃপ্রকাশ, অর্থাৎ যে কোনোও প্রকারে জনমানসের কৌতূহলের থালায় নিত্য-নতুন শিরোনাম সাজিয়ে দেওয়া?
পহেলগাঁওয়ের হত্যাকাণ্ড বস্তুত নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরমতম গাফিলতির সকরুণ পরিণতি। যে ভূস্বর্গ সারা বছর সেনাবাহিনী, আধা-সেনা সিআরপিএফ-বিএসএফ এবং জম্মু কাশ্মীর পুলিশের ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে থাকে, যে কাশ্মীরের পাহাড়ি রাস্তার প্রতিটি বাঁকে থাকে সশস্ত্র সেনা-পুলিশের চেকপয়েন্ট, ভরা পর্যটনের মরশুমে ছবির মতো সুন্দর বৈসরণ উপত্যকায় সেদিন একজন সশস্ত্র পুলিশেরও উপস্থিতি ছিল না কেন, সেটিই তো আদন্ত রহস্য। নিরাপত্তার এমন বজ্রআঁটুনি ভেদ করে তিনজন জঙ্গি পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করল। সেখানে দিন কয়েক বাস করল। তারপর কাঁধে রাইফেল নিয়ে, মুখে মাস্ক পরে, নি:শব্দে বৈসরণ উপত্যকায় ঢুকে নির্বিচারে নিরীহ ছাব্বিশজন মানুষের দেহ গুলীতে ঝাঁঝরা করে অবশেষে নি:শব্দে নিরাপত্তার সব ফাঁক গলে দিব্য পলায়ন করল! এর অধিক বিস্ময়ের আর কী হতে পারে? জঙ্গিরা শুধু নিজেরাই নিঃশব্দে উধাও হয়ে যায়নি, সেই সঙ্গে কাশ্মীরের পর্যটনকে কবরে পাঠিয়ে গোটা ভূস্বর্গকে ঢেকে দিয়ে গেছে স্তব্ধতার চাদরে। ঘটনার দুই মাস পরে খোদ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে যদি উঠে আসে যে, এতদিন যে দিশায় তদন্ত পরিচালিত হয়েছে সেটি ভ্রান্ত ছিল, সেক্ষেত্রে আশঙ্কা জন্মায়, এরপরে আরও কোনোও ‘ভুল’ সামনে আসবে না তো! এনআইএর সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্কেচ সংক্রান্ত ত্রুটির কথা স্বীকার করা হলেও অদ্যাবধি স্পষ্ট হয়নি এক) তদন্তের অগ্রগতি কতদূর? দুই) সংশ্লিষ্ট তিন সন্ত্রাসবাদী কি পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে, না কি এ দেশেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে? সরকারী সূত্রের অবশ্য দাবি, এনআইএ-র সেরা অফিসারদের তদন্তের কাজে লাগানো হয়েছে। একটি তদন্তকারী দল কাশ্মীরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত এনআইএ এবং জম্মু কাশ্মীর পুলিশ প্রায় তিন হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বৈসরনে কীভাবে সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়েছিল, সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। গোটা এলাকার ‘থ্রি-ডি ম্যাপিং’ করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা কোথা থেকে এসেছিল, কোন দিক থেকে পালায়, পালিয়ে কত দূরে যেতে পারে, সেই সমস্ত সম্ভাবনা ধরে নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ব্যবহার হয়েছে ড্রোন থেকে সন্ধানী কুকুর।তবুও সখেদে বলতে হচ্ছে, এই সমস্ত কিছুর দশ্যত নিটফল এখনও অবধি শূন্য।