স্মার্ট সিটি না স্মার্ট লুট? শহরের ড্রেন ফুটপাথ নিয়ে ক্ষোভের ঝড়!!
আত্মবিশ্লেষণ জরুরি

সাম্প্রতিককালে এক ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রাজ্যজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। এক ছাত্রী স্কুলে এক শিক্ষিকার বকুনি খেয়ে বাড়িতে গিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এ নিয়ে রাজ্যের শিক্ষাজগতে আলোড়ন ফেলেছিলো। পরবর্তীতে শিক্ষা দপ্তর এই ইস্যুতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার পর অবশেষে তিন শিক্ষক শিক্ষিকাকে সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে বদলি করা হয়েছে। আপাতত বিষয়টি হিমঘরে রয়েছে। কিন্তু সমাজের সামনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেছে এক মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু। শিক্ষকের বকুনিতে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যদি নিজের জীবনের চরম পথ বেছে নেয় তাহলে সমাজ এনিয়ে কী বলবে? কোথায় যাবে সমাজ? সমাজ কার কাছে গিয়ে জবাব দেবে? কার কাছে গিয়েই বা বিচার চাইবে এই ঘটনার। ঘটনা বিলোনীয়ার একটি স্কুলের। এই স্কুলের মেধাবী এক ছাত্রী পরীক্ষায় একটি বিষয়ে সামান্য নম্বর বাড়ানো নিয়ে শিক্ষিকার বকুনি খায়। এতে সে অভিমানী হয় এবং বাড়িতে গিয়ে আত্মঘাতী হয়। মেধাবী ছাত্রীটি অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছিল। তার পিতা মেয়েকে ঘিরে অনেক আশার স্বপ্ন বুনেছিলো। কিন্তু ছাত্রীটি এক নিমেষে নিজেকে শেষ করে দিয়ে তার পরিবারকে যেমন বেজায় আঘাত দিয়েছে, তেমনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে গোটা সমাজ এবং সর্বোপরি শিক্ষক সমাজকেও দারুণ এক প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ওই মেধাবী ছাত্রীটি তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
একসময় গুরুগৃহে শিক্ষালাভের চল ছিল। গুরুগৃহে শিক্ষা প্রথার পর এলো ধীরে ধীরে টুল প্রথা। ধীরে ধীরে স্কুল কলেজের জন্ম হতে লাগল। শিক্ষকদের বলা হয় সমাজ গড়ার কারিগর। জাতির মেরুদণ্ডও বলা হয়ে থাকে শিক্ষকদের। কিন্তু কালের নিয়মে এখন শিক্ষকদের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। একদিকে চাকরি বাঁচানোর তাগিদ, অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের মানুষ গড়ার কাজ। শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি সমাজের চাহিদাও বেশি। এখনও বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন শিক্ষক /শিক্ষিকারাই ছাত্রছাত্রীদের মানুষ করে দেবে। সেই থেকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপরও চাপ বাড়তে থাকে। বর্তমানে রয়েছে আবার প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়। প্রত্যেক মা বাবা চান তাদের বাচ্চাকে ফার্স্ট করাতে। নম্বরের পেছনে সবাই ছুটছেন। একদিকে এতে করে সবাই ‘প্রফেশনাল’ হয়ে গেছে। সবাইকে ফার্স্ট হতে হবে। এ এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা চলছে অন্যদিকে, ছাত্রছাত্রীরাও প্রযুক্তির যুগে অতি বেশি আধুনিক এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে। শিক্ষক শিক্ষিকারাও ছাত্রছাত্রীদের শাসন করা আজকাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। কেননা আইন বলছে, শিক্ষানীতি বলছে শিক্ষকরা এখন ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন শুধু খেলার ছলে, আনন্দদায়ক পরিবেশ পরিস্থিতিতে। সুতরাং শিক্ষকরা এখন আর ছাত্রছাত্রীদের কাছে আতঙ্কের কোন ‘বস্তু’ নয়। শিক্ষকরা এখন তুলনায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে বন্ধুবৎসল। ছাত্রছাত্রীরা পারলে শিক্ষকদের মাথায় উঠে নাচনকোদন করে শিক্ষকের জন্মন্মদিন পালন করে ইত্যাদি ইত্যাদি।একসময় গুরুগৃহে শিক্ষালাভের চল ছিল। গুরুগৃহে শিক্ষা প্রথার পর এলো ধীরে ধীরে টুল প্রথা। ধীরে ধীরে স্কুল কলেজের জন্ম হতে লাগল।

শিক্ষকদের বলা হয় সমাজ গড়ার কারিগর। জাতির মেরুদণ্ডও বলা হয়ে থাকে শিক্ষকদের। কিন্তু কালের নিয়মে এখন শিক্ষকদের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। একদিকে চাকরি বাঁচানোর তাগিদ, অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের মানুষ গড়ার কাজ। শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি সমাজের চাহিদাও বেশি। এখনও বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন শিক্ষক /শিক্ষিকারাই ছাত্রছাত্রীদের মানুষ করে দেবে। সেই থেকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপরও চাপ বাড়তে থাকে। বর্তমানে রয়েছে আবার প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়। প্রত্যেক মা বাবা চান তাদের বাচ্চাকে ফার্স্ট করাতে। নম্বরের পেছনে সবাই ছুটছেন। একদিকে এতে করে সবাই ‘প্রফেশনাল’ হয়ে গেছে। সবাইকে ফার্স্ট হতে হবে। এ এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা চলছে অন্যদিকে, ছাত্রছাত্রীরাও প্রযুক্তির যুগে অতি বেশি আধুনিক এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে। শিক্ষক শিক্ষিকারাও ছাত্রছাত্রীদের শাসন করা আজকাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। কেননা আইন বলছে, শিক্ষানীতি বলছে শিক্ষকরা এখন ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন শুধু খেলার ছলে, আনন্দদায়ক পরিবেশ পরিস্থিতিতে। সুতরাং শিক্ষকরা এখন আর ছাত্রছাত্রীদের কাছে আতঙ্কের কোন ‘বস্তু’ নয়। শিক্ষকরা এখন তুলনায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে বন্ধুবৎসল। ছাত্রছাত্রীরা পারলে শিক্ষকদের মাথায় উঠে নাচনকোদন করে শিক্ষকের জন্মদিন পালন করে ইত্যাদি ইত্যাদি। আগেকার দিনে যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের দেখলে ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত, দিনের পড়া দিনে না শিখলে বেত পড়ত পিঠে, সেই ব্যবস্থা কবেই উঠে গেছে শিক্ষাব্যবস্থায়। আগেকার দিনে শিক্ষকের চাকরি ছিল অনেকটা সেবামূলক। শিক্ষকরা বেতন পেতেন অনেক কম। তবুও তারা শিক্ষকের চাকরিটা করতেন প্রাণ দিয়ে, ছাত্রছাত্রীদের সবটুকু উজাড় করে দিতেন। মা-বাবারা ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষকের কাছে দিয়ে বলতেন, ‘শুধু হাড়গুলি রাখবেন, বাকিটা আপনার উপর’। ফলে ছাত্রছাত্রীদের অনুশাসনের পাঠ দিতে পারতেন শিক্ষকরা। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও ডর, ভয়, সম্মান আতঙ্ক ইত্যাদি জড়িয়ে থাকত শিক্ষকদের নিয়ে। ফলস্বরূপ ছাত্রছাত্রীদের কাছে বকুনি, বেত্রাঘাত ইত্যাদি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্বল্প আঘাতেই অভিমানী হোত না। অপমানবোধও কম পরিলক্ষিত হতো ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।কিন্তু দিন পাল্টেছে। ছাত্রছাত্রীরা এখন বেশি অভিমানি, অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। মা বাবার আদুরে সন্তানদের এখন সংবেদনশীলতা পেয়ে বসেছে বেশি করে। এছাড়া রয়েছে তাদের উপর প্রতিযোগিতার জন্য নানাহ চাপ। সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মনে ছোট বয়স থেকেই একটা প্রতিযোগিতার ইদুর দৌড়সুলভ মনোভাব তৈরি হয়।
বিলোনীয়ার যে মেধাবী ছাত্রীটি নিজেকে শেষ করে দেবার চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে গভীর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, অন্যদের থেকে সে আধা বা এক নম্বর কম পেয়েছে বলে তার মধ্যে এক হীনমন্যতা জন্ম নিয়েছিল। সেজন্যই সে দিদিমণির কাছে গিয়ে নম্বর বাড়ানোর জন্য তদ্বির করে। সে যে কারণেই হোক দিদিমণি হয়তো তাকে বকুনি দেয় বা বুঝিয়েসুজিয়ে ফেরত পাঠায়। তাতেও তার মধ্যে যে সংবেদনশলীতা তা কিন্তু দমেনি এবং শেষ পর্যন্ত সে নিজেকে শেষই করে দেয়। সমাজ তাতে গভীর অনুতপ্ত। দিদিমণি বা ওই স্কুলের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা কিংবা ওই ছাত্রীটির সহপাটিরা গভীর অনুতপ্ত। আখেরে এতে সমাজ কী শিক্ষা পেলো? ভবিষ্যতে কোন শিক্ষক বা শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের বকুনি বা শাসন করার পথে কি আর যাবে? বলা হয় মা বাবার পরের স্থানই শিক্ষক-শিক্ষিকার। কিন্তু এই আপ্তবাক্যটি সমাজকে বোঝাবে কে? শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাত পা যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে! গভীর পর্যালোচনা দরকার। আর কোনো মেধাবী কিংবা অমেধাবী কোন ছাত্রছাত্রীকে আমরা এভাবে,এই পন্থায় হারাতে চাই না।