September 24, 2025

আইন যত আছে, তার চেয়ে বেশি সশব্দে আছে ডিজে বক্স!!

 আইন যত আছে, তার চেয়ে বেশি সশব্দে আছে ডিজে বক্স!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আনন্দের নাম করে আতঙ্ক, উৎসবের নামে যন্ত্রণা। দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো, গণেশ চতুর্থী থেকে দীপাবলি প্রতিবারই রাজ্যজুড়ে দেখা যায় শব্দদানবের দাপট। প্রশাসন, আদালত, পরিবেশকর্মী সকলের নির্দেশ, আবেদন, হুঁশিয়ারির পরেও ডিজে বক্সের তাণ্ডব কমেনি এক চুলও। বরং বছর বছর বেড়েই চলেছে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ প্রতি বছরই বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা দেয় – শব্দদূষণ রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে? বিজ্ঞপ্তি জারি করাটাই যেন প্রশাসনের দায় সারার মতো কাজ। বাকিটা অন্ধকারে তলিয়ে যায়। আদালতের নির্দেশে সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত অনুমতি থাকলেও বিসর্জনের মিছিলে মিনি ট্রাকে চড়ে ১০-১২ ফুট উঁচু ডিজে বক্স কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা শহর।
পরিবেশকর্মীদের দাবি, কিছু ডিজের আওয়াজ তো ২৫০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়! এ কি উৎসব না মানুষের জীবনের সঙ্গে নির্লজ্জ ছেলেখেলা?
ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রতিটি নাগরিকের ‘জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার’ সুরক্ষিত। উচ্চ আদালতও স্পষ্ট বলেছে, ‘জোরে শব্দ শুনতে না চাওয়াটাও এক জনের মৌলিক অধিকার।’ অথচ সেই অধিকারকে বারবার রাতের পর রাত সহ্য করতে হচ্ছে নরকযন্ত্রণা।
ডিজের দৌরাত্ম্যে শহর অবরুদ্ধ। আগরতলা ও শহরতলি যেন শব্দতাণ্ডবের আঁতুড়ঘর। প্রতিমা ভাসান মানেই কয়েক ডজন ডিজে ট্রাক তারস্তরে বাজিয়ে রাস্তা জুড়ে হইচই। কানের পর্দা ফাটানো আওয়াজে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, অসহায়তা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা সীমাবদ্ধ কেবল কয়েক জায়গায় সামান্য ডিজে বক্স বন্ধ করায়। কড়াকড়ি ব্যবস্থা? কার্যত শূন্য।

শব্দ না সাউন্ড? আদালতের ব্যাখ্যা ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায়ে জানিয়েছিল – ‘যে শব্দ কানকে আরাম দেয়, সেটাই সাউন্ড। যা কানকে যন্ত্রণা দেয়, সেটাই নয়েজ।’ কিন্তু আজ সেই নয়েজই রাজত্ব করছে উৎসবের ময়দানে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ৮০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ টানা আট ঘণ্টা সহ্য করলেই কান ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অথচ দুর্গাপুজোর বিসর্জনের রাতে বা দীপাবলিতে সেই সীমা একাধিকবার অতিক্রম করে যাচ্ছে ডিজে বক্স। এর পরিণাম দীর্ঘমেয়াদি ও ভয়াবহ।
অবসরপ্রাপ্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কর্মকর্তাদের কথায়, ‘আজ সবাই রায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত। সেটা হওয়া দরকার। কিন্তু শব্দদূষণের ভয়ঙ্কর দিকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। অথচ এই শব্দতাণ্ডব প্রতিদিন বহু মানুষকে দুর্ভোগে ফেলছে।’

প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন ও পুলিশ কি কেবল কাগজে-কলমে নির্দেশ জারি করেই দায় সারবে? নাকি একদিন সত্যিই আদালতের নির্দেশ মানা হবে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হবে? আপাতত রাজ্যের মানুষের কাছে উৎসব মানেই উল্লাসের আড়ালে লুকোনো এক অদৃশ্য যন্ত্রণা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *