৩৭ বছর বাদে ভয়াবহ বন্যা পাঞ্জাবে,ভাসছে ২৩ জেলা মৃত বেড়ে ৩৭!!
অর্থবহ নির্দেশিকা!!

আবার উঠল নাগরিকত্ব ইস্যু।নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট নিয়ে গতকাল রাতে বড় ঘোষণার পরই রাজনীতির ময়দান ফের সরগরম।কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নতুন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে আবেদন জানানোর সময়সীমা আরও ১০ বছর বাড়বে। এতদিন পর্যন্ত এই সময়সীমা ছিল ২০১৪ সালে ৩১ডিসেম্বর।নতুন সংশোধনী এনে কাট অফ ডেট এক ধাক্কায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ‘ক্যা’ পাস করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার।ওই আইনে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান-বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যদি ভারতে আশ্রয় নিতে চান, তাহলে তা কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করবে। কিছু তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই আইনে হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও, মুসলিম সম্প্রদায়ের কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা আইনে বলা হয়নি। তবে আইনে একটা কথা বলা ছিল, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানানোর আগে অন্তত ১ বছর এবং তারও আগে অন্তত ৫ বছর ভারতে থেকেছেন এমন ব্যক্তিরাই নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হবেন। যদিও আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার ক্ষেত্রে এই আইনে কিছু ছাড়ের কথা উল্লেখ ছিল। ২০১৯ সালে দেশে নাগরিকত্ব সংশোধণী বিল পাস হলেও বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে ২০২৪ সালের আগে কার্যকরী করা যায়নি। গত বছর ১১ মার্চ গেজেট নোটিফিকেশন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সিএএ কার্যকরী করার কথা বলা হয়।
কিন্তু ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন, আর ২০১৯ সালের সিএএর মধ্যে উসকে দেওয়া ফারাক বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।কারণ ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের মধ্যে কোনও ধর্মের উল্লেখ নেই। অথচ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ২০১৯ এর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে পরিষ্কার ধর্মের উল্লেখ রয়েছে। আর তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, আর কিছুদিন বাদেই বিহার বিধানসভার ভোট। ইতিমধ্যেই বিহারে ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষাতে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। যে ঘটনায় গোটা দেশ উত্তাল। বিহার বিধানসভা ভোটের পরই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। এই আবহের মধ্যে গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কর্তৃক সিএএকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানানোর সময়সীমা ১০ বছর বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা যে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সেকথা মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। এনআরসি নিয়ে বিতর্ক ও উদ্বেগ দীর্ঘদিন ধরেই। বিশেষ করে পূর্বোত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক তীব্র। আসামে ইতিপূর্বে এনআরসি করার ফলে কয়েক লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব সেখানে প্রশ্নের মুখে উঠেছিল। এইসব মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখা হবে কিনা এই নিয়েও বিস্তর গুঞ্জন ও জলঘোলা হতেদেখা গিয়েছিল। এবার সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত প্রদেশে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে এমনটাই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন আরও কঠোর হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফ থেকে একটি বিবৃতিতে সব রাজ্যকেই ডিটেনশনে ক্যাম্প তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নোটিফিকেশন স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে যারা ভারতে ঢুকেছেন এবং বৈধ নথি ছাড়াই এসেছেন কিংবা বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করলেও যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট বা ভিসা আইন পুরোপুরি কার্যকর হবে না। তবে যারা ছাড়ের আওতায় নেই, তাদের কঠোর নিয়ম মানতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ডিটেনশন সেন্টারে তাদের আটক রাখা হবে এবং প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তা কার্যকরী থাকবে। স্বাভাবিক কারণেই সিএএ নিয়ে নতুন করে আগামীদিনে রাজনৈতিক উত্তাপ প্রবল হবে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বৈচিত্রের মিশ্রণে বেড়ে উঠা একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে এই সিএএ এবং এর নবতম সংযোজন ভারতীয় জাতীয়তার বিরুদ্ধে কতটা প্রভাব বিস্তার করে সেটাই আগামীদিনে বড় জিজ্ঞাস্যা।