অনুপ্রবেশ : হাইকোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশ,বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সময় দিতে বললো কোর্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বেআইনি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতি যখন সরগরম হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই এলো
হাইকোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ রায়।বেআইনি অভিবাসীদের চিহ্নিত করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার দাবিতে করা একটি জনস্বার্থ মামলা, একদিনের শুনানিতেই নিষ্পত্তি করে দিয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকারকে এই প্রক্রিয়ায় আরও সময় দিতে মত প্রকাশ করলেন বিচারপতিরা। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি অপরেশ কুমার সিং এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ পালিতকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাটি শুনানির জন্য উঠে। মামলাটি করেছেন ডা. বিজয় দেববর্মা এবং জনৈক জন দেববর্মা। গত ৮ জুলাই এই জনস্বার্থ মামলাটি ত্রিপুরা হাইকোর্টে দায়ের করেছিলেন তাদের পক্ষে আইনজীবী মিন্টু দেববর্মা। আজ মামলাটি শুনানির জন্য উঠে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।
আবেদনকারীদের পক্ষে মামলায় সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবী মণীশ গোস্বামী এবং আইনজীবী মিন্টু দেববর্মা।আইনজীবী মণীশ গোস্বামী সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, গোটা দেশেই বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার গত মে মাসে সব রাজ্যকেই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। কীভাবে রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি ছাড়াও অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তার একটি নির্দেশিকাও দিয়েছে। গত ২৪ জুন মামলার আবেদনকারীরা রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা যেন শক্তভাবে প্রয়োগ করা হয়। এজন্য একটি কমিটি গঠন ছাড়াও বেশকিছু বিষয়ে পরিকাঠামো গঠনের দাবিও করা হয়। আইনজীবী মণীশ হাইকোর্টে আরও বলেন, বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে যে ধরনের পরিকাঠামো ও ব্যবস্থা দরকার এটা আসামে আছে। দেশে আর কোনও রাজ্যে নেই। ত্রিপুরায় বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ও অভিবাসীদের রাখার মতো উপযুক্ত ডিটেনশন ক্যাম্প নেই। তদন্তে কাউকে বেআইনি অভিবাসী পাওয়া গেলে,তাকে ফরেনারস ট্রাইব্যুনালে পেশ করতে হয়। এটা ত্রিপুরায় নেই এইসব বিষয় দ্রুত গড়ে তুলতে হাইকোর্টের নির্দেশিকা চাওয়া হয় মামলায়।
রাজ্য সরকারের পক্ষে এই মামলায় সওয়াল করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল শক্তিময় চক্রবর্তী এবং অতিরিক্ত জিএ মঙ্গল দেববর্মা। অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টে জানান, গত মে মাসে রাজ্যকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র সরকার। এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বেআইনি চিহ্নিত অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে কিছুটা সময় লাগবে। হাইকোর্ট দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আবেদনকারীদের আইনজীবী মণীশ গোস্বামীকে আরও কয়েক মাস দেখার পর সন্তুষ্ট না হলে, পুনরায় আবেদন করতে বলেছেন। মামলাটি এদিনই নিষ্পত্তি করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, বেআইনি অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে গত মাসখানেক ধরে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। বিশেষ করে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য রাজ্য সরকার যাতে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করে, তার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে সরকারের শরিক দল তিপ্রা মথা। সরকারের শরিক হয়েও তিপ্রা মথা এই ইস্যুতে রাজ্য সরকারের উপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। ধর্মনগর থেকে সাক্রম, রাজ্যের সর্বত্র তিপ্রা মথা মিছিল, সভা সংগঠিত করছে। গত দুদিন আগে এই ইস্যুতে রাজধানীতে অরাজনৈতিক মিছিলের নামে রাজনৈতিক মিছিল ও সমাবেশ করেছে মথার নেতৃত্বরা। শুধু তাই নয়, সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মথার নেতৃত্বরা রাজ্য সরকারকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এডিসি এলাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা কার্যকর করার সিদ্ধান্তের কথাও ঘোষণা করেছে মথার নেতৃত্বরা। দলের এক যুব নেতার নেতৃত্বে যুব কর্মীরা আগরতলা থেকে দিল্লী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে। এই নিয়ে রাজ্য রাজনীতির পারদ যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই এলো হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের এই পর্যবেক্ষণ। যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, হাইকোর্টের এই মত প্রকাশের পর, তিপ্রা মথার আন্দোলনের গতি ও গতিমুখ কোন্ দিকে অগ্রসর হয়। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, হাইকোর্টের এই রায়ে মথার আন্দোলনে কিছুটা হলেও ধাক্কা লাগবে।