৫ বছরেও উড়ল না আন্তর্জাতিক বিমান!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের আন্তর্জাতিক স্বপ্ন যেন দীর্ঘশ্বাস হয়ে ঝুলে আছে আগরতলার আকাশে। ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারী ধুমধাম করে মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরকেক আন্তর্জাতিক মানের বলে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। এক সময় বলেছিল এখান থেকেই খুলবে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদেশ গমনের নতুন দরজা। বিদেশ যেতে আর গুয়াহাটি বা কলকাতায় যেতে হবে না। ব্যাংককে শপিং, সিঙ্গাপুরে ব্যবসা- সবই হবে আগরতলা থেকেই। কিন্তু পাঁচটি বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বপ্নের বিমান আজও মাটি ছাড়েনি। লাখো মানুষের প্রত্যাশা আর সরকারকে আশ্বাসকে ব্যঙ্গ করে আজও আন্তর্জাতিক টার্মিনালের চকচকে করিডরে বাতাসেরই বেশি যাতায়াত।
বিমানবন্দর নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে জনগণের রোজগারের টাকা থেকে। উদ্বোধনের দিন লাল কার্পেট, রিবন কাটার উৎসব, প্রচারের ঝলকানি, ব্যানার হোর্ডিংয়ের ঢল সবই দেখা গেছে চোখধাঁধানো আয়োজনে। ত্রিপুরার উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে বারবার প্রচার করা হয়েছে এই বিমানবন্দরকে। অথচ বাস্তব চিত্রে যাত্রীদের মুখের হতাশা দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। বিমান সংস্থাগুলো আজও আগরতলা থেকে নিয়মিত আন্তর্জাতিক রুট চালাতে আগ্রহী নয়। যাত্রী নেই যুক্তি তুলে কেউ কেউ দায়িত্ব এড়ালেও সাধারণ মানুষের বক্তব্য, যাত্রী তো তৈরি হবে রুট চালু হলে, আগে তো বিমান উড়ুক।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল সূত্রে খবর প্রায় রোজই রাজ্য থেকে বহু মানুষ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ঘুরতে যায়। তার মধ্যে অন্যতম ব্যাকক,সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, হোচিমিন শহর। গুয়াহাটির সাথে ব্যংককের সরাসরি বিমান যোগাযোগও রয়েছে।আগরতলার সাথে ব্যাংককের সরাসরি বা ভায়া গুয়াহাটি কলকাতা বিমান চালানো লাভজনক হবে বলে মনে করে রাজ্যের ব্যবসায়ী মহল। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যাংকক ট্যুরের অফার দেয় হররোজ।এছাড়া রাজ্যবাসী চিকিৎসা, ব্যবসা, পর্যটন, পড়াশোনার কারণে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া- এই গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করে। ট্রানজিটের অতিরিক্ত খরচ, সময় অপচয়, যন্ত্রণা সবই বইতে হচ্ছে বিমানযাত্রীদের। বিমানপথে আগরতলা থেকে চিটাগাং মাত্র ৩০-৩৫ মিনিট আর ঢাকা মাত্রা ২৫-৩০মিনিটের পথ। অথচ আজও মানুষকে কলকাতা ঘুরে ঢাকা-চিটাগাং যেতে হয় তিনগুণ ভাড়া দিয়ে।এতে ক্ষতি হচ্ছে পরিবার ও পর্যটকদের পাশাপাশি রাজ্যের বাণিজ্যের।
এই দুটি রুটে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমান চালাবে বলে আশা দেখিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের নিজস্ব পণ্য রাবার, আনারস, চা পাতা সবই আন্তর্জাতিক বাজার ধরা থেকে বঞ্চিত। কারণ বিমানে কার্গোর সুবিধা কাগজেই আছে, বাস্তবে নেই কোনো বাস্তবায়ন।নতুন টার্মিনাল ভবনের ভেতরে পৃথক আন্তর্জাতিক লাউঞ্জ আছে ঠিকই, কিন্তু তা ব্যবহার করার মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নেই। সরকারের প্রচার আর বাস্তবতার ব্যবধান দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ভোটের আগে বিস্তর প্রতিশ্রুতি শোনা গেলেও ঢাকা, চিটাগাং রুট শীঘ্রই, ব্যাংকক রুট আসছে। এই সব কথার কোনোটাই আজও বাস্তবের আলো দেখেনি। কেন্দ্র- রাজ্য-এয়ারলাইন্স, কার দোষ সাধারণ মানুষ তা বিচার করতে পারছে না। তারা শুধু জানতে চায়, কখন উড়বে আন্তর্জাতিক বিমান? কবে তাদের মাথা উঁচু করে বলতে পারবে ‘আমাদের আগরতলা বিমানবন্দর সত্যিকারের আন্তর্জাতিক।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য পরিকাঠামো গড়ে তোলাই প্রথম ধাপ, তাতে ভুল নেই। কিন্তু পরিকাঠামো তৈরি করে সেটাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাই সবচেয়ে জরুরি। এখানে সেই পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। কোথাও প্রশাসনিক জট, কোথাও সমন্বয়ের ঘাটতি, কোথাও রাজনৈতিক সদিচ্ছার সংকট। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ট্যাগ শুধুই নামের বোর্ডে আটকে আছে, আর পাঁচ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে জনমানসে। তরুণ প্রজন্ম প্রশ্ন তুলছে, আমরা কি শুধুই প্রচারের শিকার? উন্নয়ন কি শুধু ফটোশুট আর কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ? রাজ্যের মানুষ এখন আর বড় বড় ঘোষণায় বিশ্বাস করে না। তারা বাস্তব চায়। আকাশে উড়তে চায়। নিজেদের বিমানবন্দর থেকে পৃথিবীর পথে যাত্রা করতে চায়। আগরতলার আকাশে লুকিয়ে থাকা আন্তর্জাতিক স্বপ্ন কবে ডানা মেলবে তার অপেক্ষায় আজও চোখ রাখছে।ফ্লাইট চালু হলেই আগরতলার আন্তর্জাতিকতার পরীক্ষা সত্যিকারের সফল হবে।

Dainik Digital: