সোনা বোঝাই বিমান ভেঙে পড়া লালছড়া হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোনা বোঝাই একটি বিমান ভেঙে পড়েছিল ধলাইয়ের লংতরাই পাহাড়ে। স্থানটির সঠিক অবস্থান লালছড়ার কাছে। এই জায়গাটি মনুঘাট থেকে কুড়ি থেকে বাইশ কিলোমিটার পশ্চিমে। আবার কমলপুর মহকুমার হালাহালী থেকেও যাওয়া যায় পায়ে হেঁটে পাহাড়ি পথে। ঘটনাটি ঘটেছিল আটষট্টি বছর আগে এপ্রিল মাসের শুরুতে ১৯৫৩ সালে। বিমানটিতে একাধিক লোহার বাক্স সোনা বোঝাই ছিল। এই বিমানটি আসছিল অবিভক্ত পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি থেকে। গন্তব্য স্থল ছিল পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের ঢাকা।করাচি বা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে আকাশ পথে যোগাযোগ সহজ হতো, দূরত্ব কম হতো ভারতের আকাশ পথ ব্যবহার করলে। তাই ভারতের সাথে চুক্তি ছিল আকাশ পথ ব্যবহারের। তাই ১৯৫৩ সালের এই বিমান প্রথম আসে দিল্লীতে। তারপর কলকাতা হয়ে আগরতলা। ঠিক সন্ধ্যায় বিমানটি আকাশে উড়ে। যাবে উত্তর ত্রিপুরা হয়ে সিলেট। সিলেট হয়ে ঢাকা। এরপরই বিপর্যয় ঘটে।বিপর্যয়ের বিবরণ ও সোনার খনির ঘটনা বলার আগে অন্য একটি বিষয়ের অবতারণা করছি। ১৯৫৩ সালের সোনা বোঝাই বিমানের বিবরণ সেই সময় বিস্তারিত ভাবে কখনও প্রকাশিত হয়নি। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হলো, ঘটনাস্থলটিকে এক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সৃষ্টি করা। এর সুযোগও আছে। লালছড়ার তীরে আছে নিহতদের এক সমাধি বেদী। আশপাশের বাড়ি ঘরে আছে সেই ভাইকাউন্ট বিমানের ধ্বংসাবশেষ। আবার লংতরাই পাহাড়ের বীরমণি পাড়ায় আছে ১৯৪৫ সালে ধ্বংস হওয়া একটি মার্কিন বিমানের ধ্বংসাবশেষ। ছামনু জঙ্গলে আছে সেই সময়ে ধ্বংস হওয়া একটি হেলিকপ্টারের সম্পূর্ণ কাঠামো। এই সমস্ত একত্রিত করে একটি পর্যটন কেন্দ্র সৃষ্টি করা কী অসম্ভব? মনে রাখতে হবে পর্যটন এখন সবচেয়ে বড় শিল্প।লালছড়ায় ধবংস্প্রাপ্ত বিমানের সাথে জড়িত কোটি কোটি টাকার সোনা, জড়িত সহজ সরল জুমিয়া যুবক কার্তিক দেববর্মার সোনার কার্তিক হওয়ার কাহিনি, জড়িত পশ্চিম পাকিস্তানের এক তরুণী বধূর নিহত স্বামীর জন্য হাহাকার।করাচি থেকে সোনা সহ বিমানটি দিল্লী, কলকাতা, আগরতলা হয়ে চলে যাবে ঢাকা। ভাগ্য বিরূপ। বিমানটি কমলপুর মহকুমার আকাশে আসা মাত্র প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়। ঝড়ে বিমানটি গন্তব্যস্থল হারিয়ে ফেলে।ভাসতে ভাসতে চলে যায় কৈলাসহরে।সেখান থেকে মনুঘাট অঞ্চলে। মানিক ভাণ্ডার বিমান বন্দরে নামার জন্য রওয়ানা হয় কমলপুরের দিকে। কমলপুর শহরের আকাশে উড়তে থাকে। তারপর ঝড়ের দাপটে লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পূর্বদিকে রওয়ানা হয়। তারপরই দুর্ঘটনা ঘটে। এই বিবরণ পেয়েছি উনিশশ পঁচানব্বইতে বর্ষিয়ান নাগরিকদের কাছ থেকে। সেই বছরই এই পত্রিকায় এই প্রতিবেদকের লেখা “সোনার লোভে স্বর্ণ লোভী মানুষের অভিযান” শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। বিমানটি ধ্বংস হয়েছে সেই খবর প্রচার হতে দুইদিন সময় লাগে। গ্রাম শহর তখন প্রায় এক যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন শূন্যের কোঠায়। ঘটনার পরের দিন মনুঘাট সংলগ্ন ধূমাছড়ার বাসিন্দা কার্তিক দেববর্মা পিঠে খাড়া বেঁধে রওয়ানা হয় হালাহালীর উদ্দেশ্যে। হালাহালী বাজার থেকে লবণ, তেল, কেরোসিন কিনবে বলে। একদিন থেকে ফিরে আসবে। লালছড়ার কাছে এসে দেখে সব লণ্ডভণ্ড। অসংখ্য মৃতদেহ, ভাঙা বিমান, শোনা যায় এক মহিলা তখনও বেঁচে ছিলেন। কার্তিক তার মুখে জল দেয়। মহিলা মারা যান। তবে উর্দু ভাষায় বলে যান সোনার কথা। সোনা শব্দটি কার্তিকের পরিচিত। সারা দিন খাড়া পিঠে করে বাড়িতে নিয়ে যায় অসংখ্য সোনার বার। একটি বারে ছিল বারো ভরি সোনা।র্কার্তিক বারো ভরি সোনা বেচত ষাট টাকা দিয়ে। বিমানে সোনা ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্ব পাকিস্তান শাখায় জমা দেবার জন্য। ঘটনার কিছুদিন পর করাচি থেকে এক তরুণী বধূ দিল্লী কলকাতা হয়ে কৈলাসহর আসেন। কৈলাসহরে থেকে হাতীর পিঠে আসেন মনুঘাট হয়ে লালছড়ায়। বিমানের পঁয়ত্রিশ যাত্রীই নিহত হয়েছিলেন। তাদের একজন সদ্য বিবাহিতা এই তরুণীর স্বামী। মহিলাকে দেখতে দূর দূরান্ত থেকে এসেছে অনেকে। এসেছে কার্তিক। মহিলা মৃতদের অস্থি জড়ো করে প্রার্থনা করেন। স্থানীয়দের সাহায্যে তৈরি করেন এক বেদী।এতে মহিলার স্বামীর নাম লেখা ছিল।পরের কুড়িটি বছর এই মহিলা বিমান ধ্বংসের দিনটিতে সেই লালছড়ায় আসতেন।বেদীর সামনে বসে প্রার্থনা করতেন। এলাকার শিশুদের জন্য আনতেন খাবার, জামা, খেলনা। দীর্ঘ পঁচিশ বছর এইভাবে যাওয়া-আসা করেছেন অকালে স্বামী হারা এই তরুণী বধ।১৯৮০ সালে কার্তিকের সাথে এই প্রতিবেদকের সাক্ষাৎ হয় মনুঘাটের গ্র্যাণ্ড হোটেলের সামনে। কার্তিক তখন সর্বহারা। সব গেছে। তবে সোনা পাওয়ায় পরিচিত হয় সোনার কার্তিক নামে।কার্তিকের কাছ থেকে তখন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। ছামনু, বীরমণিপাড়া, লালছড়ায় বিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংসের কাহিনি কেবল সাধারণ আকাশ দুর্ঘটনা মাত্র নয়। বীরমণি পাড়ায় নিহত বৈমানিকের ভাই মাত্র দশ বছর আগে ঘটনাস্থলে এসে চোখের জল ফেলে গেছেন। ফিরে গেছেন আমেরিকায়। সব মিলিয়ে হোক না একটি পর্যটন কেন্দ্র। অতীতের সুখ দুঃখ বেঁচে থাকবে, বেঁচে থাকবে অদ্ভূত এই ইতিহাস পর্যটন কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

13 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

14 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

15 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

15 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

16 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

17 hours ago