সুপ্রিম সতর্কীকরণ!!

সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। শীর্ষ আদালত প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশে ঘটে চলা ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে শুধু নজরেই আনেনি, বরং তাকে যুক্ত করেছে এক চলমান মামলার সঙ্গে। প্রধান বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে সরাসরি সতর্ক করেছেন। নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখিয়ে কেন্দ্রের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির বার্তাটি ছিল স্পষ্ট: সতর্ক থাকুন, সংবিধানকে সম্মান করুন, জনতার রোষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকে সতর্ক হওয়া জরুরি। শুধু নজরদারি, দমন এবং জনবিচ্ছিন্নতায় বিপর্যয় অনিবার্য।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের এই সতর্কীকরণ শুধু একটি মামলার প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের সংবিধান, নাগরিক অধিকার ও নির্বাচিত সরকারের অধিকার রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসাবে বিবেচন্য হওয়াই বিধেয়। এই বেঞ্চ রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিল যে, সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিলের প্রতি সম্মতি প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে কিনা। এই শুনানিতেই উঠে আসে অশান্ত নেপালের প্রসঙ্গ। এই সূত্রে আসে বাংলাদেশও। প্রধান বিচারপতির উদাহরণ হিসাবে নেপালের ঘটনা উল্লেখ করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেখানে যুবসমাজ এবং বেকার প্রজন্ম সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ করেছে, কার্যত নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতি এই বাস্তব ঘটনাকে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে সতর্কবার্তা হিসাবে ব্যবহার করেছেন। এটি নির্দেশ করছে যে, যদি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নির্বাচিত সরকারের জনাদেশের অবহেলা চলতে থাকে, ভারতেও অনুরূপ অশান্তি দেখা দিতে পারে এছাড়া, প্রধান বিচারপতির মন্তব্য সংবিধান এবং রাজ্যপালদের ক্ষমতার লক্ষ্মণরেখাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। রাজ্যপাল এব রাষ্ট্রপতির অধীনে আসা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড যদি নির্বাচিত সরকারে সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তবে তা সংবিধানের মৌলিক নীতিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এটি নির্দেশ করছে যে, সরকারকে আইনের সীমানান মধ্যে থেকে নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে পারে। স্মরণে থাক যে সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে যা কিছু উচ্চারিত হয় তা নিছক কথাবার্ত নয়।বিচারপতির বেঞ্চ থেকে আসা প্রতিটি মন্তব্যের আলাদা গুরুত্ব থাকে, গভীর তাৎপর্য থাকে। আর এই ঘটনার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় তখন, যখন সেই মামলার বিষয় প্রবল রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক গুরুত্বের। বিষয়টা ছিল রাজ্যপালদের ক্ষমতার সীমা নিয়ে, তাদের হস্তক্ষেপ নিয়ে। অভিযোগ, বিজেপিশাসিত নয় এমন রাজ্যে যেমন তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপালরা নির্বাচিত সরকারের কাজে লাগাতার বাধা দিচ্ছেন। বিধানসভায় পাস হওয়া বিল আটকে দিচ্ছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচিত সরকারের উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ চালাচ্ছেন। আর সেই প্রেক্ষাপটেই তুষার মেহতার উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য- ‘একটু দেখুন, নেপালে কী হচ্ছে।’ প্রধান বিচারপতির পাশে বসা বিচারপতি বিক্রম নাথও কেন্দ্রের প্রতিনিধিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, ‘শুধু নেপাল নয়, একটু বাংলাদেশের দিকেও তাকান। সেখানেও কী হয়েছিল, দেখুন।’ নির্বাচিত সরকার বনাম কেন্দ্র নিযুক্ত রাজ্যপাল, এই টানাপোড়েনের বৈচারিক পর্যালোচনার মাঝখানে উঠে আসছে প্রতিবেশী দেশের অগ্নিগর্ভ বাস্তবতার উদাহরণ,এমন ঘটনা আগে এ দেশে কোনোদিন ঘটেনি।
নেপালের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, যুবসমাজের ক্রোধ কখনও কখনও প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্রধান বিচারপতির সতর্কীকরণ তাই শুধু আইনি পরামর্শ নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক নির্দেশিকা। এটি সরকারের উদ্দেশে কার্যত এক সতর্কীকরণ তাই শুধু আইনি পরামর্শ নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক নির্দেশিকা। এটি সরকারের উদ্দেশে কার্যত এক সতর্কীকরণ, যার নির্যাস, সংবিধান ও নাগরিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করলে সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে। এতে আরও একটি দিক স্পষ্ট হলো, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও সতর্ক থাকার প্রয়োজন। প্রধান বিচারপতির ইঙ্গিত এই বার্তা দেয় যে, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদে থাকা ব্যক্তিরা যেন সংবিধান বিরোধী বা জনগণের ‘ম্যান্ডেট’ উপেক্ষা করে না চলেন। দেশের যুবশক্তি ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য এটি অপরিহার্য। সংক্ষেপে, সুপ্রিম কোর্টের এই নজিরবিহীন সতর্কীকরণ কেবল নেপাল বা বাংলাদেশের ঘটনা নয়, এটি ভারতের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য সরাসরি বার্তা। এই বার্তা ইঙ্গিতবাহী, কারণ স্বয়ং প্রধান বিচারপতি এই মর্মে সতর্ক করছেন যে, সরকারকে আইনের সীমানার মধ্যে থেকে নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে হবে, নইলে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য বিপন্ন হতে পারে।

Dainik Digital: