শিশুর অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের কিছু কৌশল!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-শিশুরা চঞ্চল প্রকৃতির হবে, এটাই স্বাভাবিক।তাদের আবেগ, অনুভুতি রাগ-ক্রোধও থাকে অনেক।কখনও কখনও তারা বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। স্বাভাবিক রাগ থাকতেই পারে।কিন্তু অতিরিক্ত রাগ ভাল নয়।আপনার সন্তান যদি কথায় কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতে শুরু করে, তা হলে তাদের রাগ কমানো একান্তই জরুরি।সন্তান রাগ করলে উল্টে তাদের উপর রাগারাগি না করে, মনে রাখবেন সন্তান রাগ করলে বাবা-মায়ের উচিত শিশুকে সামলানো।বিভিন্ন কারণে শিশুরা রাগ করতে পারে। কেন তারা রাগ করছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।কারণ শিশুদের মাত্রাছাড়া রাগের পেছনে অন্য কোনও গভীর সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে। মনে রাখবেন, রাগ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু।ছোটবেলা থেকে শিশুরা তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বড় হয়ে তাদের মধ্যে পাকাপাকি ভাবে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আসুন আজকের প্রতিবেদনে জেনে নিন কীভাবে সামলাবেন শিশুর রাগ।
শিশুর রাগ বুঝবেন যেভাবে:-
সন্তান খুব ছোট ছোট বিষয়ে রেগে যাবে।নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে এবং রাগে ফেটে পড়বে।অনুভূতি প্রকাশ করতে অক্ষম হবে। বেপরোয়া আচরণ করবে।হুমকি দেওয়ার মতো করে কথা বলবে, কাঁদবে।তাদের নিজেদের আচরণের জন্য অন্যদের দোষারোপ করবে।
দীর্ঘক্ষণ রাগ করে থাকবে।
রাগের কারণ বুঝুন:-শিশুরা কেন রাগ করছে, তা বুঝতে হবে সবার আগে।কোনও অভ্যাস, ঘটনা, কার্যকলাপের কারণে তারা রেগে যাচ্ছে কী না, তা খুঁজে বের করুন। কারণ জানা থাকলে তাদের রাগ শান্ত করা যাবে ও এতে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।সন্তানের রাগ শান্ত হওয়ার পর তাদের সঙ্গে কথা বলুন।তাদের বোঝান যে রাগ করার আগে, অপরপক্ষের সমস্ত কথা শোনা উচিত।সব জানার পর পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেওয়া অধিক উপযোগী। রেগে নয়,বরং শান্ত গলায় নিজের মতামত জানাতে বলুন তাদের।
নিজেদের সংশোধন করুন:-
শিশু যদি অত্যধিক রাগী হয়, তাহলে এই ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। দেখতে হবে তার পরিবারে এমন কোনও মানুষ আছেন কি না, যার মাত্রাতারিক্ত রাগ করার প্রবণতা আছে, রাগের মাথায় চিৎকার করা বা জিনিসপত্র ভাঙার অভ্যাস আছে।যদি তাই হয়, তাহলে তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু পরিবারের অন্যদেরকে শুধরালেই হবে না তার সঙ্গে মা-বাবাকেও তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।কারণ মা-বাবাকে দেখে শিশুরা অনেক কিছু শিখে থাকে।মা অথবা বাবার মধ্যে কেউ অতিরিক্ত রাগী হলে, শিশুদের মনেও রাগের সঞ্চার হবে। এই কারণে নিজেকে সংশোধন করুন। আপনার দেখাদেখি সন্তানও রাগ
নিয়ন্ত্রণে করতে শিখে যাবে। কারও ওপর বা কোনও কারণে রেগে গেলে তারা যাতে সে বিষয়েও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে পারে, তার স্থান করে দিন। সন্তানের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন। তাদের কথা শুনুন।পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করুন:-কোনও পরিস্থিতি বা ঘটনা বার বার সন্তানের রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ালে তা দূর করার চেষ্টা করুন। অসাফল্য সন্তানের রাগের কারণ হলে শিক্ষকের সঙ্গে এ বিষয় আলোচনা করুন। প্রয়োজনে অতিরিক্ত টিউশন দিন।কোনও কারণে সন্তান অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে তা দূর করার চেষ্টা করুন। সন্তানের সামনে বাড়িতে লড়াই-ঝগড়া করবেন না, আবার আক্রমণাত্মক ব্যবহারও এড়িয়ে চলুন। কারণ এ সব দেখে তারা অবসাদগ্রস্ত হতে ও রেগে যেতে পারে।
রাগ করলে গুরুত্ব দেবেন না:- শিশু রেগে গেলে আপনিও ওর সঙ্গে কিছুতেই রেগে গিয়ে তর্কাতর্কি বা ওকে মারধর করতে যাবেন না।এতে আরও বেড়ে যাবে ওর রাগ।শিশুর যদি রাগের মাথায় জিনিসপত্র ছোড়ার বা ভাঙার অভ্যাস থাকে,তাহলে ওর হাতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে
রাখুন।রাগ করার মুহূর্তে ওকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না।এতে ও বুঝতে পারবে,রাগ করে কোনও লাভ হবে না।পরে সে শান্ত হলে তার পরে তাকে ঠান্ডা মাথায় বোঝানোই ভাল।
নিয়ম বেঁধে দিন:-সন্তানের মেজাজ যখন ঠান্ডা থাকবে, তখন তাকে কিছু নিয়ম বেঁধে দিন।নিয়মের মধ্যে ওকে বলে দিন-রাগ করলে কোনও খারাপ কথা উচ্চারণ করা যাবে না,কাউকে আঘাত করা যাবে না, কোনও কিছু ভাঙা যাবে না ইত্যাদি।
শিশুর ভাল ব্যবহারের প্রশংসা:-আপনার সন্তান ভাল ব্যবহার করলে, তাদের প্রশংসা করতে ভুলবেন না। সমীক্ষা অনুযায়ী, অভিভাবকরা শিশুদের ভাল ব্যবহারের জন্য প্রশংসা করলে তাদের মনে রাগ বা কোনও নেতিবাতক চিন্তাভাবনা জন্ম নেবে না। কোনও বন্ধু বা অন্য কোনও ব্যক্তির কারণে রাগ করলে তাদের মধ্যে শীঘ্রই মিটমাট করিয়ে নিন।অন্যের কারণে সন্তান কষ্ট পেলে,সেই ব্যক্তিকেও এ সম্পর্কে জানান।ভবিষ্যতে কোনও ভুল যাতে কেউ না-করে, সে বিষয় আপস করতে বলুন তাদের।জেনেটিক সমস্যা:-শিশু যদি অত্যধিক রাগী হয়,
তাহলে এই ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। দেখতে হবে তার পরিবারে এমন কোনও মানুষ আছেন কি না, যার মাত্রাতারিক্ত রাগ করার প্রবণতা আছে, রাগের মাথায় চিৎকার করা বা জিনিসপত্র ভাঙার অভ্যাস আছে।যদি তাই হয়,তাহলে আগে শোধরাতে হবে নিজেদের।শিশুরা সব সময় অনুকরণপ্রিয় হয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন হোন।
প্রয়োজনে কাউন্সেলিং যখন:-দেখবেন শিশু খুব সামান্য কারণে ঘন ঘন রেগে যায় এবং কোনওভাবেই তাকে শান্ত করা সম্ভব হয় না, তখন প্রয়োজন হতে পারে কাউন্সেলিংয়ের।সন্তান খুব রাগী হলে তাকে মেডিটেশনের অভ্যাস করান।এতে মন শান্ত হয় এবং আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসে।
যুক্তিগুলি বোঝার চেষ্টা করুন:- শিশু শান্ত হলে ওকে যুক্তি দিয়ে বোঝান, কেন ওর দাবি আপনি মেনে নেননি। বোঝানোর সময় নিজেকে খুব শান্ত ও সংযত রাখুন।মনে রাখবেন, আমরা বড়রা যত সহজে যুক্তি মানি,ছোটরা তত সহজে তা মানবে না।তা ছাড়া যা আপনার কাছে তুচ্ছ বিষয়, তাই শিশুর কাছে হয়তো অনেক বড় ব্যাপার। ওর যুক্তিগুলোও মন দিয়ে শুনুন।ওকে বোঝার চেষ্টা করুন।সন্তান যখন ফুরফুরে মেজাজে থাকবে, তখন ওকে গল্পের ছলে বোঝান, অত্যধিক রাগ খুব খারাপ একটা অভ্যাস।রাগের নেতিবাচক দিকগুলো ওকে বুঝিয়ে বলুন।এইভাবেই খুব স্বাভাবিক কিছু কৌশলের মাধ্যমেই আপনার ছোট্টটিকে সামলাতে পারবেন খুব সহজেই।শুধু দরকার একটু ধৈর্যের।কারণ আপনি ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দিলেই, আপনার সন্তানও ধৈর্যশীল হতে শিখবে এবং খুব সহজেই ক্রোধের মাত্রা কমে আসবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

“যুদ্ধ বলিউড সিনেমা নয়’, বক্তা প্রাক্তন সেনাপ্রধান!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-যুদ্ধ কোনও বলিউডের সিনেমা নয়। যুদ্ধের আগে কূটনীতিকেই বেছে নিতে হবে। ৷ ভারত-পাকিস্তান…

9 hours ago

তৈরি আছে ভারত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার রাতে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।…

9 hours ago

পদ্মশ্রী প্রাপ্ত কৃষি বিজ্ঞান সুবান্না আয়াপ্পানের রহস্যমৃত্যু,!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত কৃষি বিজ্ঞানী ৬৯ বছর বয়সি সুবান্না আয়াপ্পান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ…

18 hours ago

ব্যতিক্রমী সম্পর্কের খোঁজ!!

ছয় বৎসর পর পর ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে ছয় জড়াইয়াছে। একটি যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ তৎপরতায় ময়দানে…

19 hours ago

রেশনে ডালের দাম বাড়ল পাঁচ টাকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের রেশনশপে একলাফে মশুরি ডালের মূল্য প্রতিকিলোতে ৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার।রেশনশপে…

19 hours ago

টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেন কোহলি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলো বিরাট কোহলি।ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধ রাখলো না।রোহিত…

19 hours ago