Categories: দেশ

রাহুলের স্বস্তি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পূর্ণাঙ্গ রায় না এলেও সুপ্রিম কোর্টে আপাতত স্বস্তি পেলেন কংগ্রে নেতা রাহুল গান্ধী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কর্ণাটকের কোলারে একটি নির্বাচনি প্রচারে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন “সমস্ত চোরদের পদবিই মোদি হয় কেন? নীরব মোদিকেই দেখুন ললিত মোদিকেই দেখুন, কিংবা নরেন্দ্র মোদি।” রাহুলের এই মন্তব্যের পরই গুজরাটের এক বিজেপি বিধায়ক পূর্ণে মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন। এ বছর ২৩ মার্চ সুরাট কোর্ট রাহুল গান্ধীকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ২ বছরের কারাবাসের আদেশ দেন। সুরাট কোর্টের এই রায়ের পরদিনই অনেকটা তড়িঘড়ি করেই রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল করে দেওয়া হয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের এক্তিয়ার বলে। রাহুল সুরাট ভোটের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু গুজরাট হাইকোর্ট রাহুলের আবেদন খারিজ করে দেয় গত ৭ জুলাই। এভাবেই রাহুলের সামনে তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এবং সাজা থেকে বাঁচতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দরজায় কড়া নাড়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প খোলা ছিলো না। ১৫ জুলাই কংগ্রেস নেতা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পর এদিন শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে সুরাট আদালতের সাজার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। নিঃসন্দেহে এটা বিরোধীদের জন্য বড় অক্সিজেন। বিরোধীরা এই ঘটনাকে নিজেদের নৈতিক জয় হিসাবেই দেখছে। বিচারপতিদের বেঞ্চ শুক্রবার এই মামলায় যা জানিয়েছেন তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী কী কারণে রাহুলকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তার কোন কারণ ব্যাখ্যা করেনি গুজরাটের নিম্ন আদালত। অথচ এই শাস্তির ফলেই রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়েছে। যদিও রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার প্রভাব শুধুমাত্র রাহুলের উপরই পড়ে না। বরং এর প্রভাব তাঁর সংসদ এলাকার ভোটারদের উপরেও পড়ে। আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, রাহুলের বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করার জন্য অভিযোগ উঠেছে, সেই ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতেও শীর্ষ আদালত পরামর্শ দিয়েছে ও সতর্ক করেছে। আজকের মামলার শুনানিতে আরেকটা দিক হলো, যেহেতু আদালত এখনও মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে তাই এই মামলার ভিত্তি নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি শীর্ষ আদালত। দেখা গেছে, বিচারপতিদের
বেঞ্চে যখন মামলার শুনানি চলছিল তখন অভিযুক্তের পক্ষে আইনজীবী মনু সিংভির বক্তব্য ছিল, মোদি পদবি নিয়ে রাহুল গান্ধী যে মন্তব্য করেছিলেন তা সমাজবিরোধী অপরাধ নয়। এটা কোনও খুন ধর্ষণের অপরাধও নয়। তাহলে সর্বোচ্চ সাজা কেন দেওয়া হবে? যদিও পূর্ণেশ মোদির আইনজীবীর বক্তব্য হচ্ছে, শুধুমাত্র বিদ্বেষ ও মোদি পদবির মানহানি করার উদ্দেশ্যই নিয়েই গোটা একটা শ্রেণীকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ১৩ কোটি মোদি পদবির জনতার শ্রেণী বর্ণ ও গোষ্ঠী যেহেতু আলাদা, সেখানে সবাইকে কীভাবে এক শ্রেণীভুক্ত করা যায়। একটি বিষয় এখানে খুব ইঙ্গিতবাহী যে, মানহানির মামলায় সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরের কারাদণ্ড। রাহুল গান্ধীকে সেই সাজাই দেওয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারায় ২ বছর কারাদণ্ড হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জনপ্রতিনিধিত্ব যেমন খারিজ হয়ে যায়। তেমনি পরবর্তী ২ টি নির্বাচনেও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন সেই ব্যক্তি। সুতরাং রাহুল গান্ধীর অপরাধ যে কতটা গুরুতর সেটা প্রমাণ করতেই প্রথমে একটি সিভিল কোর্টের ট্রায়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরে হাইকোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে একই রায় দিয়েছে রাহুল গুরুতর অপরাধ করেছেন, যা নৈতিক অস্বচ্ছ চরিত্রের সমতুল্য। নিম্ন আদালত বলেছে, মোদি পদবি রয়েছে এমন উল্লেখযোগ্য লোকজনদের মানহানি হয়েছে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে। অর্থাৎ ‘মোদি’ পদবিধারী ১৩ কোটি জনগণের কোন ক্ষতি হয়নি বলে যে যুক্তি তৈরি করা হচ্ছিল সেটাও খারিজ করেছে নিম্ন আদালত। কিন্তু রাহুলের মন্তব্যে কীভাবে বিপুল লোকজন আঘাত পেয়েছেন সেটাও নিম্ন আদালত দেখাতে পারেনি। যিনি মামলা করেছেন তিনি ছাড়া আর কেউ দাবি করেননি রাহুলের মন্তব্যে তাদের মানহানি হয়েছে। অথচ শুক্রবার মনু সিংভি আদালতে দাবি করেছেন আবেদনকারী পূর্ণেশ মোদির প্রকৃত পদবি মোদি নয়, তিনি মোধ বানিকা সমাজের প্রতিনিধি। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে আরেকটি পর্যবেক্ষণ হলো, নিম্ন আদালতের একটি মন্তব্য ছাড়া ট্রায়াল কোর্টের বিচারক কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেননি, যে কারণে অভিযুক্তকে তিনি সর্বোচ্চ শাস্তি দিচ্ছেন। যদি এই শাস্তির মেয়াদ একদিনও কম হতো, তাহলে সদস্যপদ খারিজ এবং পরবর্তী নির্বাচনে লড়াই না করতে পারার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতো না। এই জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ২০২৪এর লোকসভায় ভোটের প্রাক্কালে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ দেশের জাতীয় রাজনীতি,ব্যক্তিস্বাধীনতা,মতামত প্রকাশ করার অধিকার সহবিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে তা বলাই যায়। যদি নিম্ন আদালতের রায় সর্বোচ্চ আদালতে বহাল থাকে তাহলে রাহুলের সাময়িক স্বস্তি বেশিদিন কাজে আসবে না। কিন্তু যদি সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে পাকাপাকিভাবে রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে আসে এবং সাজার পরিমাণ কমে যায় তাহলে এর প্রভাব যে গোটা দেশে আগামীদিনে রাজনীতিতে বড় নির্ণায়ক হবে এবং শাসকের পক্ষে তা যে অশনিসংকেত হতে চলেছে সেটাও আগাম বলে দেওয়া যায়।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

1 hour ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

2 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

4 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

4 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

4 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

6 hours ago