ভারসাম্যের কূটনীতি

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দিল্লীতে অনুষ্ঠিত দুই দিন ব্যাপী জি-২০ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হল রবিবার।শনিবার সর্বসম্মতিক্রমে সম্মেলন মঞ্চ থেকে যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার পর বাদবাকি সম্মেলনের মুহূর্তগুলোতে শুধুই ল আনুষ্ঠানিকতার পর্বটিই অবশিষ্ট ছিল।এদিন জি-২০ জোটের নতুন সভাপতির দায়িত্ব ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেওয়ার সাথে সাথেই দিল্লী সম্মেলনের সমাপ্তি এবং ভারতের সভাপতিত্বে জি- ২০ জোটের গুরুত্বপূর্ণ এক পর্বের আনুষ্ঠানিক সমাপন পর্ব সম্পন্ন হয়ে যায়। আগামী এক বছর জি ২০ জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভার। এবারের জি-২০ সম্মেলনে যেসব বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সৌদি আরব এবং ইউরোপের মধ্যে রেল ও বন্দর নেটওয়ার্ক তৈরি করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল, বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০তে স্থায়ী সদস্য হিসাবে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি। মনে রাখতে হবে, আফ্রিকার প্রায় ৫৫টি দেশের মোট আফ্রিকান ইউনিয়নের এই জি-২০ সম্মেলনে স্থায়ী সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্তি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।কারণ বর্তমানে জি-২০ দেশের জোট যেখানে বিশ্বের ৬৬ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছে,সেখানে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির ফলে আগামী দিনে ৮০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে জি-২০ গোষ্ঠী। নিঃসন্দেহে আফ্রিকান ইউনিয়নের এই সদস্যপ্রাপ্তির ঘটনা জি-২০ সম্মেলনের জন্য মাইলফলক।

এর চেয়েও বড় ঘটনা হলো, নয়াদিল্লীতে সম্পন্ন হওয়া জি- ২০ শীর্ষ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা। লক্ষণীয় দিক হলো- জি-২০, এর বালি সম্মেলনের সময় থেকেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সেই সময় ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে জি-২০ সম্মেলন থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো রীতিমতো সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। অপরদিকে রাশিয়া ও চিন ছিল এর কট্টর বিরোধী।সেই টানাপোড়েনের কারণে বালি সম্মেলনে কোন সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করা যায়নি।একই পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল দিল্লীর জি-২০ সম্মেলনকে কেন্দ্র করেও। তাই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে দিল্লী ঘোষণাপত্র প্রকাশ হবে কিনা সেই নিয়ে তুমুল সংশয় জমে উঠেছিল কূটনৈতিক মহলে। আর এই আশঙ্কামতোই যদি দিল্লী ঘোষণাপত্র গৃহীত না হতো তবে সেটা ছিল ভারতের জন্য কূটনৈতিকভাবে বড় ধাক্কা। এখানেই ভারতের কূটনৈতিক মহল ‘সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না’ এই রকম একটা মাঝামাঝি পর্যায়ের সমাধান সূত্র নিয়ে মাঠে নামলো এবং তাতেই কৌশলে সর্বসম্মতিক্রমে দিল্লীর যৌথ ঘোষণাপত্রের সম্মতি আদায় করে নিল জোটের সমস্ত সদস্যরাষ্ট্রের কাছ থেকে।এই ঘোষণাপত্রে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলেও কোথাও রাশিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ঘোষণাপত্রে খুব কৌশলগত ভাবে ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ’ এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়াকে জি-২০ এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক ঘরে হতে না দিয়ে সর্ব সম্মতিক্রমে ঘোষণাপত্রটিতে সকল সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন আদায় করা ‘মিত্র’ রাষ্ট্র ভারতের কাছে ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের।আর ভারতের কূটনৈতিক মহল বেশ দক্ষতার সঙ্গেই সসম্মানে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল। আরেকটি বিষয় হলো, জি-২০জোটের অন্তর্গত দেশগুলো বিশ্বের মোট জিডিপির ৮৫ শতাংশের অংশীদার। তাছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ বর্তমানে এই দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিক কারণে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নীতি গোটা বিশ্বকেই যে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে তা বলা বাহুল্য। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বের দরিদ্র দুর্বল এমন বহু দেশ ও তাদের জনসমষ্টি রয়েছে যারা এই জোটের বাইরে।তাদের উন্নয়ন, তাদের বিকাশ এই জোটের সঙ্গে সংম্পৃক্ত নয়। এবারের দিল্লী সম্মেলনে জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে আফ্রিকান ইউনিয়নের সংযুক্তি এবং এই সংযুক্তির কাজে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা নিঃসন্দেহে আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশগুলোর উপর ভারতের প্রভাব ও সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাকে যে অনেকটা বৃদ্ধি করাতে সাহায্য করবে তা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা যায়। এই সার্বিক শর্যবেক্ষণে একথা বলা অসঙ্গত নয়, দিল্লীর জি-২০ শিখর সম্মেলনের ফিল্য কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের ভাবমূর্তিই শুধু জ্জ্বল করেনি। একই সাথে ১৪০ কোটি দেশবাসীর মর্যাদাকেও ঊর্ধ্বে লে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ব্রাজিলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলেও নভেম্বর বন্ত জি-২০ জোটের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজকর্ম সভাপতি হিসাবে ভারতকেই অন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকেরও সম্ভাবনা ছে। তবে আগামী দিনে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় জীবাশ্ম শনির নির্ভরতা কমিয়ে জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে জি-২০ গোষ্ঠী উজেনেইরোতে কী ভূমিকা গ্রহণ করে সেই দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ববাসী।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

7 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

8 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

9 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

10 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

10 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

11 hours ago