বিহার: পি কে কথন!!

পি কে।অর্থাৎ প্রশান্ত কিশোর।বিহারে এবারের নির্বাচনে এক চর্চিত নাম।এর মানে তিনি পরিচিত ছিলেন একজন ভোটকুশলী হিসাবে। গত ২০২০ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে মমতার ভোটকুশলী ছিলেন পি কে। মূলতও কোথায় কাকে প্রার্থী করা ঠিখ হবে না হবে, ভোটের পরিসংখ্যান, ইতিহাস, সর্বোপরি প্রার্থীকে কীভাবে প্রচার করতে হবে, কীভাবে ভাষণ দিতে হবে ইত্যাদি বলে দিতেন পি কে। সে জন্য তার সংস্থাকে বিপুল অংকের টাকা দিতে হতো রাজনৈতিক দলগুলিকে। ২০১৪ সালে তিনি নরেন্দ্র মোদির ভোটকুশলীও ছিলেন। প্রথমে তিনি জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমারের ভোটকুশলীও ছিলেন। আদ্যোপান্ত একজন উচ্চশিক্ষিত বিহারি। এবার তিনি আর অন্য কোন রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করছেন না। নিজেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন। বিহারকে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন তিনি। গড়েছেন নয়া দল ‘জনসুরাজ’।
বিহারে এই মুহূর্তে সবচেয়ে পপুলার ফেস পিকে।প্রচুর ইন্টারভিও দিচ্ছেন। জাতীয় সংবাদমাধ্যম তাকে নিয়ে একেবারেই শশব্যস্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে রয়েছেন পি কে। গত তিন বছর যাবৎ তিনি বিহারের প্রতিটি জনপদে গিয়ে মানুষের দুর্দশা শুনেছেন। এরপর এক বছর হলো নয়া দল গড়েছেন। এবারই প্রথম বিহারে নির্বাচনে লড়ছে পিকের দল জনসুরাজ। বিহারে গত ৩৫ বছরের মধ্যে ১৯৯০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ছিলো লালু জমানা। নিন্দুকেরা আলু জমানাকে বলতো জঙ্গলরাজ। এরপর গত ২০ বছর বিহারে চলছে নীতীশ জমানা। এই ৩৫ বছরে বিহার এখনও পিছিয়েপড়া রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। লালু কিংবা নীতীশের বিহার মানেই জাতপাতের রাজনীতি, পিছড়ে, অতিপিছড়ে, যাদব, মুসলিম ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতি।
এনডিএ জমানায় এনডিএ নেতারা জুজু দেখাত লালু এলে ফের জঙ্গলরাজ হবে। আর লালুজমানায় যাদব মুসলিমদের জুজু দেখানো হতো বিজেপি, এনডিএ এলে আর রক্ষে নেই। বিভাজনের রাজনীতি করবে, ধর্মীয় রাজনীতি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সেই নিরিখে গত ৩৫ বছর বিহারে ২ পক্ষের রাজত্ব চলেছে। আগে লালু,এখন নীতীশ। নীতীশের ব্যাপারে সবচেয়ে মজাদার সত্য হলো গত ২০ বছর ধরে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন হলেও গত ২০২৫ সালের নির্বাচনেই তার দল জেডি(ইউ) কেবল মাত্র জোটসঙ্গী বিজেপির চেয়ে বেশি আসন পেয়েছিলো। বাদবাকি সময়ে বিজেপির চেয়ে কম আসন পেয়েও তিনি এনডিএ’র মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।
সেই নীতীশ কুমার এবারের নির্বাচনে অনেকটাই নিষ্প্রভ। বিভিন্ন সমীক্ষা গোষ্ঠী আরজেডি নেতা লালুপুত্র তেজস্বীকে এগিয়ে রাখলেও সম্প্রতি পুরোনো একটি মামলায় সিবিআই লালু, রাবড়ি এবং তেজস্বীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে। সেটি চিন্তায় রেখেছে ইন্ডিয়া শিবিরকে। ভোটের মুখে এ নিয়ে বেজায় বিব্রত বিরোধী ইন্ডিয়া জোট বা মহাজোট।
গত ২০২০ সালের নির্বাচনে এনডিএ এবং মহাজোট উভয়েই ৩৬% করে ভোট পেয়েছিলো বিহারে। কিন্তু সামান্য কিছু আসনের ব্যবধানে এনডিএ এগিয়ে যায় এবং সরকার গড়ে। এবার লালু/তেজস্বী এবং নীতীশের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছেন পি কে। এবার পি কে ২ জোটের কাদের বাড়া ভাতে ছাই দেন সে নিয়ে চিন্তিত উভয় শিবিরই।
একদিকে এনডিএ অন্যদিকে মহাজোট (ইন্ডিয়া জোট) – এর মাঝখানে এবারের নির্বাচনে সপাটে ব্যাট করে চলেছেন পি কে। তার সুস্পষ্ট এবং সাবলীল বক্তব্য দুই জোটকেই চিন্তায় রেখেছে। সব রাজনৈতিক দলই বিহারের জন্য যুগের পর যুগ ধরে স্পেশাল স্ট্যাটাসের দাবি করলেও পি কে এর ধার ধারছেন না। পি কে বলছেন,স্পেশাল স্ট্যাটাস কেন? বিহার কোন অংশে কম? বিহারের উন্নতির জন্য বিহার রাজ্যের স্টেট বাজেটই যথেষ্ট। দ্বিতীয়ত, তিনিই প্রথম বিহারে এবার বিহারের ‘পলায়ন’ ইস্যুকে খুচিয়ে তুলেছেন। বিহারের অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে পলায়ন। অর্থাৎ বিহারের একটা বিশাল অংশের মানুষ বহিঃরাজ্যে গিয়ে কাজ করেন। বিহারি শ্রমিক নেই এমন রাজ্য নেই ভারতে যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই পলায়নকে তিনি এবার নির্বাচনে হাতিয়ার করেছেন। নির্বাচনে এবার পি কে এনডিএ’র শীর্ষ নেতাদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনেছেন। সমানভাবে দুষছেন তেজস্বীকে, লালু জমানাকে। তার স্পষ্ট কথা – হয় তার দল একাই সরকার গড়বে, নয়তো ২০/২৫টি আসন যদি তার দল পায় তাহলে তিনি ওই সমস্ত প্রার্থীদের বলবেন তারা যেন অন্য দলে নাম লিখিয়ে ফেলে।তিনি ফের নতুন করে ইনিংস শুরু করবেন। আপাত দৃষ্টিতে পিকে-কে বিহার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক কনফিডেন্ট মনে হচ্ছে আর বিরোধীরা বলছে পিকে বাড়া ভাতে ছাই দিতে নির্বাচনে নেমেছেন।এখন দেখার পি কে সত্যি সত্যিই বিহার বিপ্লব এনে দিতে পারেন কিনা। পিকের কনফিডেন্স তাকে বিহারের মসনদে বসায় কিনা তা দেখার জন্য বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে তৈরি হয়েছে এবার রাজনৈতিক মহলে।

Dainik Digital: